গত ২রা মার্চ জাতীয় ভোটার দিবসের এক অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন জানিয়েছে, এখন দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ যার মধ্যে নারী ভোটার ৬ কোটি ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৬৬ এবং পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ৬১৫ জন (আর হিজড়া পরিচয়ে ভোটার আছেন ৯৯৪ জন)। মোট ভোটারের এই সংখ্যা কিন্তু ২০২৪ সালের হালনাগাদ কার্যক্রমের পরের হিসাব। গত বছরের হালনাগাদে ১৮ লাখ ৮২ হাজার ১১৪ জন নতুন ভোটার তালিকায় যুক্ত হন। বর্তমান চলমান হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ হলে আরও কিছু ভোটার বাড়বে।
এই ভোটারদের আরও বিস্তারিত তথ্য প্রয়োজন। যেমন, আসন ভিত্তিক, বয়স ভিত্তিক, পেশা ভিত্তিক, শিক্ষাগত যোগ্যতা ভিত্তিক ইত্যাদি। সম্ভবত নির্বাচন কমিশন থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব, আমি সেদিকে আগাইনি, তবে কিছু পুরাতন ডেটা বিভিন্ন সংবাদপত্র থেকে সংগ্রহ করতে পেরেছি।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দ্বাদশ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১১ কোটি ৯৬ লাখ ভোটারের মধ্যে প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ভোটার। আর বর্তমানে ১৮ থেকে ৩৩ বছর বয়সী ভোটারের সংখ্যা ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৩৯ হাজার ৭২৪। ২০২৫ সালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, দেশে তরুণ ভোটার ৩ কোটি ৪ লাখ ৭ হাজার যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৯ বছর। মোট ১২ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার ভোটারের মধ্যে ২৪ দশমিক ৪২ শতাংশই তরুণ।
এই তরুণ ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ যার প্রধান কারণ হলো – এদের প্রায় সবাই ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় নির্বাচনের পর বাংলাদেশে নতুনভাবে ভোটাধিকারপ্রাপ্ত হয়েছেন। এরা বিগত ১৬ বছরে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে সক্ষম হননি, এবারই প্রথমবারের মতো ভোট দিবেন।
সারা দুনিয়াতেই তরুণ ভোটার সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এদের রাজনৈতিক আনুগত্য প্রকাশ পায়না বলে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকে। ভোটের ফলাফল ঘুরিয়ে দিতে পারে তরুণ ভোটাররা। কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে এরা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে সম্ভবত। কেন?
কারণ এই তরুণরাই বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়েছে। তারা চাইলে যে দেশে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম তারা সেটা জানে। বিগত ১৬ বছরের ভোট দিতে না পারার আক্ষেপ তাদের মধ্যে রয়েছে। প্রথম ভোটটা যেন দেশের কাজে লাগে সেই আগ্রহ তাদের মধ্যে থাকবে। ভারতের মতো দেশকে প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখার মত উত্তেজনা তাদের আছে, সংসার এবং জীবনের কঠিন বাস্তবতা এদেরকে নির্জীব করতে পারেনি এখনও। এরা এখনও বাস্তবতা বিবর্জিত স্বপ্ন দেখতে সক্ষম এবং এই স্বপ্ন পূরণের জন্য লড়াই করতে আগ্রহী। সবচাইতে বড় কারণ, সুশাসন এবং ক্যারিশমাটিক নেতৃত্ব দেশকে কী দিতে পারে তার তাজা অভিজ্ঞতা এদের অন্তরে দিয়ে যাচ্ছেন ড. ইউনুস, এটা তারা ভবিষ্যতেও দেখতে চাইবে।
আরও বহু কারণ রয়েছে, আমার দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি উপস্থাপন করলাম। প্রশ্ন হলো – জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মোট ভোটারের এই এক চতুর্থাংশের মতামত গুরুত্বের সাথে নেয়া উচিত কিনা?
আমার মতামত হলো – নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে এদের মতামতকেই গুরুত্ব দেয়া উচিত, অন্ততঃ ৮০/৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে। বাকীদের গুরুত্ব কম দিলেও চলবে কারণ এদের একটা বিশাল অংশের রাজনৈতিক আনুগত্য স্পষ্ট এবং অন্ধ, সেখানে চিড় ধরানো সম্ভব না। ভোট গুরুত্বপূর্ণ নয় এবং ভোট দিতে আগ্রহী নয় – এমন জনসংখ্যাও কম নয়, বিশেষতঃ যারা ষাটোর্ধ্ব। নারী ভোটারদের বড় অংশ তাদের স্বামী এবং সন্তান দ্বারা প্রভাবিত হয়, ফলে তরুণ ভোটারদের সাথে তাদের মা এবং স্ত্রীকেও দলে টেনে আনা সম্ভব।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মত বড় দলকে তরুণ ভোটার নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করলেও চলে কারণ এদের ভোটার বেজ বড় এবং এদের বেশিরভাগ দেশ বা দলের কল্যাণ নয়, ব্যক্তিগত স্বার্থ কতটুকু পূরণ হবে সেই হিসাবের উপর ভিত্তি করে ভোট দেয়। কিন্তু জামায়াত, এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলনের মত দলের উচিত এই তরুণদের চিন্তা ভাবনা মতামত ভবিষ্যত ইত্যাদিকে মাথায় রেখে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই করা।