এনিমেশন সিনেমা বিল্লাল: সুললিত কন্ঠের মুয়াজ্জিনের কাহিনী

বলুনতো, মক্কা বিজয়ের পর আমাদের প্রিয় সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাকে ডেকে আযান দিতে বলেছিলেন? হযরত বিলাল (রা)। তাঁকে ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন বলা হয়। আমাদের প্রিয় নবীজি তার সুমধুর কন্ঠকে ভালোবাসতেন। হযরত বিলাল (রা) এর জীবন হলো ইসলামী আদর্শের এক বিশাল নিদর্শন৷ তিনি ছিলেন একজন দাস, অথচ শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম তাকে এমন উচ্চতায় পৌঁছিয়ে দিয়েছে যে কেয়ামত পর্যন্ত তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আজ বলবো এমন এক এনিমেশন সিনেমার কথা যেখানে তার এই জীবন কাহিনী চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এনিমেশন সিনেমার নাম – বিল্লাল: আ নিউ ব্রিড অব হিরো (Billal: A New Breed of Hero)।

হযরত বিলাল (রা) কিন্তু ছোটবেলা থেকেই গোলাম ছিলেন না। মা আর বোন হুযাইফাকে নিয়ে তাদের শান্তি আর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ একটি চমৎকার পরিবার ছিল। কিন্তু এই সুখ ছিল ক্ষণস্থায়ী। বাইজেন্টাইন সৈন্যরা তাদের মাকে হত্যা করে এবং দুই ভাই-বোনকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়। তাদেরকে কিনে নেয় মক্কার কুরাইশদের একজন নেতা অত্যন্ত ধনী ব্যক্তি উমাইয়া। এটা মুহাম্মদ (স) এর নবুয়্যত প্রাপ্তির আগের ঘটনা।

মক্কার সে সময়কার পরিবেশ কেমন ছিল তা আমরা সবাই-ই জানি। মানুষ নানা রকম মূর্তি আর অদৃশ্য শক্তির পূজা করতো, নিজেদের চাহিদা পূরণের জন্য তাদের কাছে সাহায্য চাইতো আর এ নিয়ে ব্যবসা করতো একটি গোষ্ঠী। অন্যদিকে মানুষের মধ্যে কোন সাম্য ছিল না। স্বাধীন মানুষ আর গোলামদের মধ্যে ছিল আকাশ পাতাল তফাৎ। ইসলাম পূর্ব সময়ের একটি বাস্তব চিত্র পাওয়া যায় বিলাল: আ নিউ ব্রিড অব হিরো সিনেমায়।

উমাইয়ার দাস হিসেবে বিলাল আর হুযাইফার বেড়ে উঠা, বিলালের (রা) সমবয়সী উমাইয়ার ছেলে সাফওয়ানের সাথে দ্বন্দ্ব, ইসলামের দাওয়াত প্রাপ্তি ও ইসলাম গ্রহণ, হুযাইফার সাথে বিচ্ছেদ থেকে শুরু করে মক্কা বিজয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী এক সিনেমায় উপস্থাপিত হয়েছে কিন্তু সে সবের বর্ণনা দিয়ে পাঠকের আগ্রহ নষ্ট করতে চাই না। নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারি – ইসলাম গ্রহণের পর হযরত বিলাল (রা) এর উপর যে কঠোর নির্যাতন করা তার নির্মমতার দৃশ্যে হৃদয় কেঁপে উঠবে৷ কিন্তু পরবর্তীতে মুসলমানদের বিজয়ের ঘটনাসহ আরও কিছু ঘটনায় সেই কষ্ট দূরও হয়ে যাবে। এটাই তো ইসলামের মহাত্ম্য, তাই না?

রাসূলুল্লাহ (স) এর সাহাবীর জীবনকাহিনী নিয়ে এই সিনেমাটি তৈরী হওয়ায় এখানে অনেকগুলো ঐতিহাসিক চরিত্রের উপস্থিতি রয়েছে। এদের মধ্যে যেমন কুরাইশদের নেতা উমাইয়া, আবু জেহেল, উকবা, সাফওয়ান রয়েছে, তেমনি রয়েছে আবু বকর (রা), হামজা (রা), শুহাইব (রা), সাদ (রা) এর মত শ্রেষ্ঠ সাহাবীগণ। রয়েছে বদর যুদ্ধ, মক্কা বিজয়ের মত ঐতিহাসিক ঘটনার চিত্রায়ন। ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলমানদের প্রতি যে নির্যাতন-নিষ্ঠুরতা চালানো হয়েছিল তার ধারণা যেমন পাওয়া যায়, তেমনি মুসলমানদের শৌর্য-বীরত্ব আর মহানুভবতার ছবিও ফুটে উঠেছে এই সিনেমায়। আমাদের শ্রদ্ধার আর ভালোবাসার মানুষদের নিয়ে নির্মিত বলে সিনেমাটিকে অত্যন্ত আপন মনে হয়।

স্পষ্ট করে জানিয়ে রাখি, ইসলামের ইতিহাসকে তুলে ধরার উদ্দেশ্য নিয়ে কিন্তু এই সিনেমার কাহিনী বিবৃত হয়নি বরং রাসূল (স) এর প্রিয় সাহাবী হযরত বিলাল (রা) এর জীবনকেই তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে। এ কারণে বিলালের মা আর বোনের ঘটনা গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষ করে শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত বোন গুফাইরার সাথে তার সম্পর্ক, বিচ্ছেদ এবং পুনর্মিলনই এই সিনেমার কেন্দ্রবিন্দু। অন্যান্য ঐতিহাসিক চরিত্র ও ঘটনাবলী এসেছে অনুষঙ্গ হিসেবে।

বিলাল: আ নিউ ব্রিড অব হিরো সিনেমাটির নির্মাণকারী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, পরিচালনা করেছেন যৌথভাবে খুররাম আলাভি ও আয়মান জামাল। ১০৯ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই সিনেমাটি প্রথম প্রদর্শিত হয়েছিল ২০১৫ সালে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে সারা বিশ্বে মুক্তি দেয়া হয়। অত্যন্ত সুনির্মিত এই সিনেমাটি সিনেমার বিভিন্ন উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালের সেরা অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রের তালিকায় বেশ উপরের দিকেই রয়েছে।

কিশোর-তরুণদের জন্য তো আবশ্যই, সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্যই এই সিনেমা অনুপ্রেরণা জোগাতে সক্ষম। তাই শীঘ্রই দেখে ফেলা উচিত এনিমেশন সিনেমা বিল্লাল: আ নিউ ব্রিড অব হিরো!

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *