দ্য নাইল হিলটন ইনসিডেন্ট সিনেমার কাহিনী এরকম – অভিজাত এক এলাকায় লাশ পাওয়া গেল এক সুন্দরী তরুণীর। খুন করা হয়েছে মেয়েটিকে – কিন্তু সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চায় পুলিশ। কারণ মেয়েটির সাথে সম্পর্ক ছিল এমন একজনের যে কিনা দেশের বিখ্যাত আবাসন ব্যবসায়ী। যে ভবনে মেয়েটির লাশ পাওয়া গিয়েছে, তার মালিকও সেই ব্যবসায়ী। এমনকি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সাথেও প্রচন্ড ক্ষমতাবানও এই ব্যবসায়ীর রয়েছে ঘনিষ্ট যোগাযোগ। প্রিয় পাঠক, সিনেমার এই গল্পটি কি আপনার কাছে পরিচিত বলে মনে হচ্ছে?
আপনি যদি খুন হয়ে যাওয়া মেয়েটির নাম মুনিয়া আর আবাসন ব্যবসায়ীর নাম সায়েম সোবহান বলে ধরে নেন, তবে ভুল করবেন। কারণ আমরা যে সিনেমার কথা বলছি তার প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ নয়, মিশর।
যদি ধারণা করেন বাংলাদেশের ঘটনার উপর নির্ভর করে নির্মাণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে তবে আবারও ভুল হবে। কারণ বাংলাদেশের ঘটনাটি ঘটেছে ২০২১ সালে, আর সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে ২০১৭ সালে।
দ্য নাইল হিলটন ইনসিডেন্ট
হতভাগ্য মেয়েটির নাম লেলেনা। মিশরের বিখ্যাত হোটেল দ্য নাইল হিলটনের একটি কক্ষে পাওয়া গেল তার গলাকাটা লাশ। লেলেনার খুনের ঘটনা তদন্ত করার দায়িত্ব পড়ে দুর্নীতিগ্রস্থ পুলিশ অফিসার নুরেদীনের উপর। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই নির্মিত হয়েছে থ্রিলার ড্রামা জনরার সিনেমা দ্য নাইল হিলটন ইনসিডেন্ট।
২০১১ সালের জানুয়ারী মাসে মিশরের তাহরীর স্কোয়ারে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক আরব বসন্তের প্রেক্ষাপটে দ্য নাইল হিলটন সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। এমন এক উত্তাল সময়ের ঘটনা এটি যখন মিশরের শাসক হোসনি মোবারকের পতনের জন্য আন্দোলন করছে লাখো জনতা।
তদন্তের শুরুতেই নুরেদীন আবিষ্কার করে যে কক্ষে লেলেনার লাশ পাওয়া গিয়েছে সেটি বরাদ্দ ছিল হোটেলের মালিক বিখ্যাত ব্যবসায়ী পার্লামেন্টের সদস্য হাতিম শফিকের নামে। আরও জানা যায়, খুনের ঘটনার সাক্ষী হলো হাউজকিপার মেয়েটি, অথচ ঘটনার পর থেকে সে নিরুদ্দেশ। এদিকে অদৃশ্য কোন শক্তির প্রভাবে সুস্পষ্ট খুনের এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয় পুলিশ, বন্ধ করে দেয়া হয় নাইল হিলটন হোটেলের কেস।
কিন্তু এখানেই শেষ হয় না সিনেমার গল্প। নুরেদীনকে ডেকে পাঠায় হাতেম, জানায় লেলেনার সাথে তার ঘনিষ্ঠ কিছু মুহুর্তের ছবি রয়েছে একজনের কাছে, হাতেমকে ব্ল্যাকমেইল করছে সে। নেগেটিভসহ ছবিগুলো উদ্ধারের জন্য নুরেদীনকে অনুরোধ করে হাতেম। অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে প্রমোশন পেয়ে যায় নুরেদীন। বন্ধ হয়ে যাওয়া কেস পুনরায় খোলা হয়। আর এভাবেই সিনেমার গল্প দুর্দান্ত এক বাঁক নিয়ে সমাপ্তির দিকে এগিয়ে চলে।
প্রিয় পাঠক, আপনাদের সিনেমার দেখার আনন্দ আমি নষ্ট করতে চাই না। তাই সিনেমার গল্প এর চেয়ে বেশী বলছি না। তবে থ্রিলারধর্মী এই চলচ্চিত্রের গল্প এত চমৎকার সব টুইস্টে ভরপুর যে আপনি অবশ্যই টিভি স্ক্রিনের দিকে মোহাবিষ্ট হয়ে তাকিয়ে থাকবেন।
তবে হ্যাঁ, আপনি যদি হলিউড, বলিউড কিংবা তামিল মারদাঙ্গা সিনেমায় অভ্যস্ত হন তবে এই সিনেমা আপনার প্রত্যাশা পূরণ নাও করতে পারে। কারণ, দ্য নাইল হিলটন ইনসিডেন্ট সিনেমার প্রধান শক্তি হলো এর সমৃদ্ধ গল্প, স্টান্টবাজি, গোলাগুলি কিংবা অনর্থক কার চেজের দৃশ্য দিয়ে সিনেমাকে ভরিয়ে তোলা হয়নি।
একই কথা বলা যায় সিনেমার দৃশ্যায়নের ক্ষেত্রেও। অপ্রয়োজনীয় নাটকীয়তা এড়িয়ে মিশরের তৎকালীন সময়কে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমায়। সে কারণেই সিনেমার মুসলিম চরিত্রদেরকে একদিকে যেমন দেখবেন নির্লজ্জভাবে ঘুষের লেনদেন করছে, তেমনি দেখবেন সময়মতো নামাজও পড়ছে। মদের আসর এবং নাইটক্লাবও দেখা যাবে এই সিনেমায়।
দ্য নাইল হিলটন ইনসিডেন্ট সিনেমার প্রেক্ষাপট মিশর হলেও এটি কিন্তু মিশরীয় সিনেমা নয়। সিনেমাটির পরিচালকের নাম তারিক সালেহ। তার বাবা মিশরীয় হলেও মা ছিলেন সুইডিশ এবং তিনিও জাতীয়তায় একজন সুইডিশ। দ্য নাইল হিলটন ইনসিডেন্ট তার অন্যতম সেরা সিনেমা।
জেনে অবাক হবেন, সিনেমার এই গল্পের সাথে বাস্তবের একটি ঘটনার অনেক মিল রয়েছে। ২০০৯ সালে দুবাইয়ের একটি হোটেলে খুন হয়ে যায় এক লেবানিজ গায়িকা। তার খুনের দায়ে অভিযুক্ত হন মিশরের এক বিজনেস টাইকুনের ছেলে যে কিনা নিজেও পার্লামেন্টের একজন সদস্য। এর পরের ঘটনাপ্রবাহের সাথে সিনেমার গল্প না মিললেও মিল রয়েছে অনেক বিষয়ে। সিনেমাটি যদি দেখে নিতে পারেন, তাহলে হয়তো আপনার পরিচিত আরও কিছু ঘটনার সাথেও মিল পেতে পারেন।
মিশরের হোসনি মোবারকের মত স্বৈরাচারী শাসকের দেশে পুলিশ বাহিনীর কর্মকান্ড কেমন হতে পারে আর হাতেম শফিকের মত ক্ষমতাবান রাঘব বোয়ালের পরিণতি কি হয় তা জানার জন্য দ্য নাইল হিলটন ইনসিডেন্ট একটি আদর্শ সিনেমা। আপনি যদি বাস্তবতার আলোকে নির্মিত অসাধারণ গল্পের একটি সিনেমা দেখে চমৎকার দুটি ঘন্টা কাটাতে চান – তবে দ্য নাইল হিলটন ইনসিডেন্ট আপনার জন্য হাইলি রেকমেন্ডেড!
nice review
Thank you!