ওয়েস্টার্ন স্ট্যাটাস!

সেভেন রোডস এলাকায় একটা মাইনিং কোম্পানি কাজ শুরু করেছে কিছুদিন আগে। বিশাল বিশাল যন্ত্রপাতি আর গাইতি-কোদাল হাতে শ্রমিক দিয়ে জায়গাটা পরিপূর্ণ। দিন নেই রাত নেই, বিরামহীনভাবে মহাকর্মযজ্ঞ চলছে। এই যজ্ঞকে পাশ কাটিয়ে আমার বিশাল কালো স্ট্যালিয়নটা দুলকি চালে ডানদিকে তেজগা ভ্যালির দিকে ঢুকে পড়ল।

গতকাল সন্ধ্যায় স্ট্যালিয়নটাকে আস্তবলে দিয়েছিলাম। ভালোমত দলাই মালাই করা হয়েছে, পেট ভর্তি করে দানাপানিও দেয়া হয়েছে। স্ট্যালিয়নটা এখন তরতাজা আর প্রাণবন্ত – পেটে গুতো দিলেই ছুটছে। আমি যাবো নিকেতন টাউনে। তাড়া নেই, এক সময় পৌছুলেই হবে। পথ চেনে স্ট্যালিয়নটা – সুতরাং আমি স্যাডলে বসে ঝিমাতে লাগলাম, স্ট্যালিয়ন চলল নিজের গতিতে।

বেগুনবাড়ি বেসিন থেকে হঠাৎ একটা ছোট্ট নেটিভ ইন্ডিয়ান ছোড়া তীরবেগে ছুটে বেরিয়ে এল। ছোড়াটার বয়স নয় কি দশ, উদোম গা, লুঙ্গি পেচিয়ে নেংটি বাঁধা কোমরে। একটা ছোট্ট হাড় জিরজিরে টাট্টু ঘোড়ার পিঠে সওয়ারী সে। স্যাডল নেই, কোনমতে রেকাবের মাঝে পা জড়িয়ে আছে। অবস্থা ইন্ডিয়ানটাকে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য লাগাম টেনে স্ট্যালিয়নটার গতি কমালাম। ছোড়াটাও একটু সামনে এগিয়ে থামল। আমি কাছাকাছি পৌছাতেই ‘আপনার আগে যামু’ বলে তার ঘোড়াটার পেটে সজোরে গুতা দিল সে – কিছু বুঝে উঠার আগেই সেটা ছুটতে শুরু করল। আমি স্ট্যালিয়নটার পেটে হালকা গুতা দিলাম – ইঙ্গিত বুঝল সে – ছুটলো। 

ধরে ফেলছি প্রায় এমন সময় হঠাৎ ইন্ডিয়ান ছোড়াটার ডান পায়ের রেকাব ছিড়ে গেল। তাল সামলাতে না পেরে ছেলেটা প্রায় ছিটকে পড়তে পড়তে বেঁচে গেল। ছেড়া রেকাবটা ফেলে রেখেই কিছুদূর গিয়ে থেমে গেল সে। আমি গতি কমালাম – তারপর টিং টিং করে বেল বাজাতে বাজাতে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললাম – ‘এইবার আমি আগে যাই’ 😉

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *