কালজয়ী গানের পাশাপাশি সাময়িক সুপার-ডুপার হিট গানের সংখ্যা কম নয়। হিন্দি শীলা কি জওয়ানী, মুন্নী বদনাম হুয়ী, ছাম্মোক ছালো ধরনের অনেক গান এসেছে, কিছুদিন শীর্ষে অবস্থান করেছে এবং একসময় হারিয়েছে অন্যান্য সুপারহিট গানের নিচে কিন্তু ‘হোয়াই দিস কোলাভেরি ডি’ গানের ব্যাপারটা বোধহয় কিছুটা ভিন্ন। এই গানটি হিন্দি ভাষা বা সিনেমার গান নয়, এটি ‘কলিউড’ (তামিল ভাষায় নির্মিত সিনেমার ইন্ডাস্ট্রি) এর সিনেমা ‘থ্রি’ এর একটি গান যদিও এর অধিকাংশ শব্দই ইংরেজি এবং উচ্চারণ বৈশিষ্ট্যের কারণে একে ট্যাংলিশ (তামিল+ইংলিশ) গান হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
‘থ্রি’ আগামীবছর মুক্তি পাবে এমন একটি সিনেমার নাম যার পরিচালক সুপারস্টার অভিনেতা রজনীকান্তের মেয়ে ঐশ্বরিয়া রজনীকান্ত ধানুশ। ‘কোলাভেরি’ গানটি লিখেছেন এবং গেয়েছেন তার স্বামী, সিনেমার নায়ক ধানুশ এবং সুর করেছেন মাত্র ১৮ বছর বয়সী অনিরুদ্ধ রবিচন্দর। পরিচালক ঐশ্বরিয়ার মতোই অনিরুদ্ধ এ সিনেমার মাধ্যমেই তার ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু করছেন। সিনেমার নায়িকা কমল হাসানের কন্যা শ্রুতি হাসান।
কোলাভেরি গানটি প্রথমে আনঅফিসিয়ালি ইউটিউবে মুক্তি পায়। জনপ্রিয়তা বেড়ে যাচ্ছে দেখে অফিসিয়াল মিউজিক ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে মুক্তি দেয়া হয় গত নভেম্বর মাসের ১৬ তারিখ। তারপর ইতিহাস তৈরি করতে বেশি সময় নেয়নি গানটি। ইউটিউবে, ফেসবুকে এবং টুইটারে শেয়ার হতে হতে এই গান ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। এক সপ্তাহের মাঝেই গানটি ইউটিউবে ১৩ লক্ষ বার দেখা হয়ে গেল। টুইটারে হ্যাশ (#) ট্যাগে টপচার্টে উঠে গেল গানটা। ফেসবুকে শেয়ার হলো লক্ষ লক্ষ বার। ডাউনলোড হলো দুই লক্ষ বারের বেশি, যেখানে সেখানে বেজে উঠল, কাজের ফাঁকে হঠাৎ আপন খেয়ালে ‘হোয়াই দিস কোলাভেরি ডি’ গেয়ে ফেললো অনেকে। ব্যস, হিট গানের তালিকায় নাম উঠে গেল গানটার।
এত যার পরিচিতি তাকে নিয়ে গবেষণাও হবে স্বাভাবিক। অমিতাভ বচ্চন তার টুইটারে গানটির প্রশংসা করে লিখেছেন। ভারতীয় পত্রিকা থেকে শুরু করে বিবিসি, টাইম পত্রিকায় গানটি নিয়ে কলাম লেখা হলো। আলোচনার পাশাপাশি সমালোচনাও হলো কমবেশি। ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট এই গানটির জনপ্রিয়তার কারণ এবং তার প্রয়োগ নিয়ে পেপার তৈরির কাজ শুরু করেছে সপ্তাখানেক আগে।
খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়ে যাওয়ার একটা আভিধানিক টার্ম আছে – ফ্যাড (Fad)। এদের লাইফ সাইকেল খুবই ছোট হয়। এই গানটা যে কালজয়ী গান হবে না তার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বেশ। গানের সুরকার অনিরুদ্ধ মাত্র ৫ মিনিটে এই গানটার সুর করেছেন এবং ধানুশ ২৫ মিনিটের মধ্যে গানের লিরিক তৈরি করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এই গানটির কোনো লিরিক ছিল না, লিখতে লিখতেই গানটা লেখা হয়ে যাওয়া। বড় শিল্প হঠাৎ তৈরি হয় – এটা স্বীকৃত, কিন্তু হঠাৎ তৈরি হওয়া সব কিছুই শিল্প না – এটাও সত্যি।
উপমহাদেশীয় সিনেমার গানে ইংরেজি শব্দের ব্যবহার খুব নতুন কিছু নয় – বিশেষত হিন্দি সিনেমায়। বর্তমানের প্রায় সব হিন্দি সিনেমায়ই ইংরেজি শব্দ এবং বাক্য থাকে। তবে এই গানটিতে ইংরেজি শব্দ এবং বাক্যগুলোর সাথে তামিল উচ্চারণ ভঙ্গি-ই গানটিকে সবার নজরে পড়তে বাধ্য করেছে। কথাগুলো চেনা কিন্তু অচেনা – এই ধন্দ আনন্দময়, উপভোগ্য।
অফিসিয়াল মিউজিক ভিডিও তেমন আহামরি কিছু নয় – স্টুডিওতেই গানের রেকর্ডিং, সহশিল্পীদের পরামর্শ ইত্যাদি নিয়ে নির্মিত। ভিডিওতে গায়ক এবং সুরকার ছাড়া পরিচালক ঐশ্বরিয়া এবং অভিনেত্রী শ্রুতি আছেন। গানের শুরুতেই ভুল ইংরেজিতে – I am Sing Song এবং তার পরেই Soup Song, Flop Song – শ্রোতার আকাঙ্খা বাড়িয়ে তোলে। গায়ক নিজেই যদি গানের শুরুতে তা ফ্লপ না হিট সে বিষয়ে বক্তব্য দেন – তবে তা বিচার করার জন্য পুরো গান শোনা বাধ্য।
Soup শব্দটি একটি তামিল শব্দ, এর অর্থ অনেকটা বাংলা ভাষার ‘ছ্যাকা’ শব্দের মতো – এমন কেউ যে প্রেমিকার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। হোয়াই দিস কোলাভেরি ডি এর ইংরেজি হলো Why This Murderous Rage, Girl? গানটি সত্যিই একটি দুঃখভারাক্রান্ত গান, প্রেমিকার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হবার পরে মাতাল অবস্থায় এই গান গাওয়া – কিন্তু গানের ছন্দ হয়তো গানটিকে ভিন্নভাষীদের কাছে এই আবেদন তুলে ধরতে পারবে না। সেদিক দিয়ে এই গানকে সফল গান বলা যায় না।
ইউটিউবে কোলাভেরি গানটির বেশ অনেকগুলো ভার্সন রয়েছে – যার মধ্যে মহিলা কণ্ঠ, শিশু কণ্ঠ, বিভিন্ন ভাষার প্যারোডি, বিদেশী ভাষায় ভিন্ন সুরে গান, ইন্সট্রুমেন্টাল ইত্যাদি। সনু নিগমের চার বছরের ছেলে নিভানের গানটি মূল ভার্সনের পরেই সবচে জনপ্রিয় গান হিসেবে তালিকায় আছে। মূলত দশ কোটিরও বেশি ভারতীয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারী জনগোষ্ঠির যুবক অংশ এই কোলাভেরি গানটির প্রচার এবং প্রসারে সবচে বেশি ভূমিকা রেখেছে সেটা বলা যায়।
বর্তমানে ২০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়া ইউটিউবের এই গানটির সাথে বাংলাদেশের খুবই কাঁচা গান এবং সুরের ‘চলে যাবে তাতে কি, নতুন একটা পেয়েছি’ গানটার কিছু মিল পাওয়া যায়। গানের ভাষা এবং ছন্দ এর জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে নিঃসন্দেহে – তবে এই ধরনের গান সত্যিকারের গান এবং বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কে না শিখে হিট গান তৈরির প্রবণতা সৃষ্টি করবে – এই আশংকাও অমূলক নয়।
স্যুপ সং মানে ছ্যাক সং …. আমি ভাবছি মে বি চাইনিজ স্যুপ ট্যুপ….
ফ্লপ সাইটে স্বাগতম বৃত্ত। ছ্যুপ পোস্টে কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ 😉
একটা তুঝে দেখা, দিল তো পাগল বানাইতে বলেন দেখি কি বানায়
অনেক দিন পর আসলাম, আসতেই থাকব, মানসিক অস্থিরতায় ছিলাম।
স্বাগতম আনারস পাতা 🙂
আসতেই থাইকেন 🙂
খাইসে! ব্যাপক গবেষণা দেখি!!
পাব্লিকে করে – আমি না 🙂
ওহ! এই তাইলে কোলাভেরি দি? আমি তো কূলকিনারা পাইতেসিলাম না। কয়েকদিন আগে টুইটারের টপ ট্রেন্ডিং এ এইটা দেখলাম। তারপর অনেক বন্ধুকে শেয়ার দিতে দেখসিলাম। এখন বুঝলাম এইটা হাল আমলের একটা ক্রেজ। হাহা। ধন্যবাদ দারাশিকো ভাইকে এই চলমান ধাঁধা সমাধান করে দেয়ার জন্য 🙂
স্বাগতম 🙂
প্রতিটা প্যারার শেষে একটা করে লাইন স্পেস রাখা হোক 🙂
রাখা হৈল 🙂
আমি কিন্তু গানটাকে পুরা ফান হিসেবে নিছি।
আমার মনে হয় গানটির স্রশ্টারাও কিন্তু মজা করেই এটা তৈরি করেছেন।
তাই এর মাঝে শিল্প খোজা অর্থহীন।
আমিও ফান হিসেবেই নিসি – শিল্প খুজি না, হিট-কারণ খুজি।
কাজকম্ম নাই – তাই এইসবের পেছনে দৌড়াই আর্কি 🙂
এখনো শুনি নাই। শুন্তাছি।
রিদমটা কিন্তু মাথায় ঢুইকা যাইবেক – সাবধান 🙂
গানটি খুব ভালো
স্বাগতম ফৈরা দার্শনিক 🙂
সামাজিক যোগাযোগ এর ওয়েবের মাধ্যমে অতিদ্রুত ছড়িয়ে পরা জিনিশকে ভাইরাল বলে। কোলাভেরি ডি একটা ভাইরাল ভিডিও।
দারাশিকো ব্লগে স্বাগতম ল্যাম্প।
কোলাভেড়ি ডি একটা ভাইরাল ভিডিও সেটা জানা ছিল – সরবে বোহেমিয়ানের পোস্টে এ নিয়ে বিস্তারিত পড়েছি আরও। ধন্যবাদ 🙂
এই বস্তুকে গান বলতেই আমি রাজি না। আজকাল গান বইলা অনেককিছুই চালায় দেওয়া হইতেছে 🙁 এই কলা-ভেড়ীর গানে নাই কোন সুর, মিউজিকের সাথে গানের কোন সম্পর্কও পাইলাম না, সুর বিহিন কাউমাউ করতেছে।
“চলে গেছ তাতে কি” এইটা এই কলাভেরীর চেয়ে অনেক উন্নত ছিল। গানের মধ্যে একটা মাদকতা ছিল।
আজকাল দেখি পোলাপান আরেকরকম জিনিস গিলে, এনিমেম না কি যেন নাম একটা দলের তারা গালাগালি রেকর্ড কইরা গান বইলা ছাইড়া দেয় 🙁
আপসুস 🙁
দারাশিকো ব্লগে স্বাগতম সারিম খান।
বুঝতেসি না আপনি কি ফান করছেন না সিরিয়াস? গানের সংজ্ঞা নির্ধারণ করার ক্ষমতা আমার নাই, কোনটা গান হবে কোনটা হবে না সেইটা আমি ভালোও বুঝি না।
চলে গেছো তাতে কি – অনেক উন্নত কিনা জানি না, তবে বাংলা ভাষায় হবার কারণে অবশ্যই খুব উপভোগ্য ছিল। হয়তো তামিল গানটা উপভোগ্য হচ্ছে না তার ভাষার কারণে, তবে একে একদম উড়িয়ে দেবার ব্যাপারে আমি রাজী নই।
সত্যিই আমার শেখার অনেক বাকী। 🙁
ধন্যবাদ সিরাম খান 🙂
গানটা টানা ৩ সপ্তাহ আমাদের অফিসে বাজানো হয়েছে! মাথার একটা অংশ মনে হয় ড্যামেজ হয়ে গেছে :s
হা হা হা, বাংলা গান শোনেন এক সপ্তাহ, জ্যাম দূর হয়ে যাবে।