২০০৯ এর সেরা দশটি মুভি

আজকের যায়যায়দিন পত্রিকায় আমার এই লেখাটা ছাপা হয়েছে, সম্পাদিত রূপে। আমি দশটি মুভির রিভিউ দিলেও সম্পাদিত অংশে সাতটি স্থান পেয়েছে। প্রকাশিত লেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন । নিচে রইলে মূল লেখাটি

গত ২০০০ সাল থেকে আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউট, সংক্ষেপে এএফআই, সাফেল্যের সঙ্গে বছরের সেরা দশটি মুভিকে নির্বাচন করে সম্মাননা প্রদান করে আসছে। অবশ্য এই নির্বাচনে সবচে’ জনপ্রিয় ও সর্বোত্তম দশটি মুভি স্থান পায়, ঠিক তেমনটি নয়। বরং পর্দার সামনে এবং পেছনের সব কিছু মিলিয়েই এই নির্বাচনের কাজটি করে ১৩ সদস্যের জুরি বোর্ড যাদের মধ্যে মুভি সমালোচক, অভিনেতা, মুভি বিশারদ এবং এএফআই ট্রাস্টির সদস্যরা অন্তর্ভূক্ত।

গত ১৩ই ডিসেম্বর এএফআই ২০০৯ সালের নির্বাচিত সেরা দশটি মুভির তালিকা প্রকাশ করেছে। আগামী ১৫ই জানুয়ারী লস অ্যাঞ্জেলসের ফোর সিজনস হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত মুভির পুরস্কার প্রদান করা হবে। হিউলেট প্যাকার্ড (HP) অনুষ্ঠানটি স্পন্সর করবে বলে জানিয়েছে। নির্বাচিত তালিকায় ড্রামা, এনিমেশন, কমেডি ইত্যাদি সব ধরনের মুভিই স্থান পেয়েছে। চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক তালিকাটি।

কোরালাইন

সেরা দশটি মুভির তালিকায় রয়েছে ২০০২ সালে প্রকাশিত নীল গেইম্যান এর কোরালাইন উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত একটি এনিমেটেড মুভি। এ বছরের দ্বিতীয় মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত এই মুভিটি কিছুটা হরর এবং ফ্যান্টাসি ধাচেঁর। কোরালাইন নামের ছোট্ট মেয়েটি তাদের নতুন বাসার গোপন এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করে নতুন এক জগতে যেখানে ঠিক তার মতোই ভিন্ন এক কোরালাইন, মা-বাবাকে দেখতে পায়। সে জগৎ আরও সুন্দর, আকর্ষণীয়। ভিন্ন জগতের বাবা মা কোরালাইনের আসল বাবা মা’র মতো ব্যস্ত নয় বরং আনেক যত্নশীল। কিন্তু নতুন বাবা-মা তাকে সেখানেই চিরেদিনের জন্য থেকে যেতে বলে, শর্ত একটাই, কোরালাইনের সুন্দর চোখে দুটো বোতাম সেলাই করে দেয়া হবে। কোরালাইন ফিরে আসতে চায়, কিন্তু পারে না। হেনরী সেলিক এর পরিচালনায় নির্মিত এবং আইএমডিবি রেটিং এ খুবই জনপ্রিয় এই মুভিটি মুক্তির পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ১২০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছে।

দ্য হ্যাংওভার

চারজন ভিন্ন চরিত্রের পুরুষ যারা পরস্পর বন্ধু যথাক্রমে ডগ, স্টু, ফিল এবং অ্যালান, লাস ভেগাসে একটি ‘স্ট্যাগ পার্টি’ তে যোগদানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। স্ট্যাগ পার্টি হলো শুধুমাত্র আমন্ত্রিত পুরুষদের নিয়ে পার্টি যেখানে শীঘ্রই বিয়ে করতে যাচ্ছে এমন কোন পুরুষ মূল চরিত্র। হ্যাংওভার নামক কমেডিতে এই পুরুষটি হলো ডগ, যে কিনা শীঘ্রই অ্যালানের বোন ট্রেসিকে বিয়ে করতে যাচ্ছে। লাস ভেগাসে পৌছার পরে তারা তারা এক হোটেলে রাত কাটায় এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আবিস্কার করে গত রাতের কিছুই তাদের মনে নেই। সবচে’ রহস্যজনক হলো স্যুটে যা না থাকার কথা ছিল তা আছে, কিন্তু যা থাকার কথা ছিল তা নেই, বিশেষ করে হারিয়ে গেছে ‘বর’ ডগ। তাকে খুজে বের করাই তখন মূল কাজ আর এ কাজ করতে গিয়েই ঘটে হাস্যরসাত্মক সব ঘটনা যা নিয়ে নির্মিত হয়েছে দ্য হ্যাংওভার নামক কমেডি মুভিটি। জুন মাসে মুক্তিপ্রাপ্ত মুভিটির পরিচালক টড ফিলিপস এবং অভিনয় করেছেন জাস্টিন বার্থা, এড হেমস, ব্রাডলি কুপার এবং জ্যাক গ্যালিফ্যানাকিস।

দ্য হার্ট লকার

সেরা দশটি মুভির একটি দ্য হার্ট লকার

দ্য হার্ট লকার ইরাকে আমেরিকান সরকারের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত থ্রিলার মুভি। সেরা দশটি মুভির তালিকায় স্থান পেয়েছে এটিও। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বোমা নিস্ক্রিয় করার কাজে নিয়োজিত স্কোয়াডকে ঘিরে কাহিনীটি লিখেছেন মার্ক বোল যিনি নিজেও একসময় এই ধরনের স্কোয়াডে যুক্ত ছিলেন। ক্যথেরিন বিগলোর পরিচালনায় মুভিটির মূল চরিত্র উইলিয়াম জেমস যার টিমে রয়েছে আরও দুইজন বোমা বিশেষজ্ঞ যাদের একজন মৃত্যুভয়হীন বেপরোয়া যে কিনা টিমের বাকীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে খুবই উদাসীন আবার অন্য একজন সবার নিরাপত্তার ব্যাপারে খুবই সতর্ক কারণ একজনের ভুলের কারনে মারা যেতে পারে তার সহকর্মীরা কিংবা শত শত নিরপরাধ মানুষ। ভিন্ন ধরনের চরিত্রের তিনজন মানুষ কিন্তু সবসময়ই তাদেরকে সতর্ক থাকতে হয় অনাহূত কোন ব্যক্তির ব্যাপারে কারন সেই লোকটিই হতে পারে একজন আত্মঘাতি বোমারু। মুভিটি ২০০৮ সালে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হলেও সারা বিশ্বে মুক্তি পায় ২০০৯ সালের জুন মাসে। দ্য হার্ট লকার নিয়ে আমার আরেকটি লেখা পাবেন এখানে।

দ্য মেসেঞ্জার

ডিরেক্টর হিসেবে অরেন মুভারম্যানের এটাই প্রথম মুভি অথচ এর মধ্যেই প্রায় ছয়টি পুরস্কার জিতে নিয়েছে। গত নভেম্বরে মুক্তিপাওয়া এই মুভিটি এর মাঝেই প্রায় ৪৭৪ হাজার ডলার আয় করেছে। শক্তিমান অভিনেতা বেন ফস্টার মুভিতে রূপদান করেছে উইল মন্টগোমারি চরিত্রে যিনি সদ্য ইরাত থেকে ছুটিতে ফেরত এসেছে। রয়েছে কঠিন দায়িত্ব, যুদ্ধে নিহত সহকর্মীর মৃত্যুসংবাদ পৌছে দিতে হবে তারই স্ত্রীর নিকট। কিন্তু অলিভিয়া চরিত্রে সামান্থা মর্টনের কাছে পৌছামাত্র মানসিক অবস্থার পরিবর্তন শুরু হয়। রোমান্টিক ধাঁচের এই মুভিটি সবার নজর কেড়েছে।

প্রেশাস

প্রেশাস লি ড্যানিয়েলসের দ্বিতীয় মুভি, নির্মিত হয়েছে ১৯৯৬ সালে পুরস্কারপ্রাপ্ত একই নামের উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে। অধিকাংশই নারী অভিনেতাসমৃদ্ধ এই মুভির প্রধান চরিত্র গ্যাবোরি সিডিবে, একজন কালো মেয়ে, যে তার জীবনে বহু নির্যাতন সহ্য করেছে। আর তাই অশিক্ষিত, রাগী, গরীব আর মোটা এই মেয়েটি বেড়ে উঠে সবার অলক্ষ্যে। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছে গ্যাবোরি সিডিবে, মূলত তার কাহিনী নিয়েই তৈরী মুভিটি। আরও অভিনয় করেছে গায়িকা মারায়া ক্যারি ও পলা প্যাটন।

আ সিরিয়াস ম্যান

সেরা দশটি মুভির তালিকায় আরও রয়েছে টম হ্যাঙ্কস অভিনীত লেডি কিলার এবং ২০০৭ সালে অস্কার জয়ী মুভি ‘নো কান্ট্রি ফর ওল্ড ম্যান’ খ্যাত কোয়েন ব্রাদার্সের নতুন মুভি আ সিরিয়াস ম্যান। ১৯৬৭ সালের পটভূমিকায় নির্মিত এই ব্ল্যাক কমেডির মূল চরিত্র ল্যারি গপনিক। তার ভাইয়ের কারনে তার স্ত্রী বাড়ি থেকে চলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে – এমন এক কাহিনী নিয়ে এগিয়েছে মুভিটি। গত ডিসেম্বরে মুক্তিপ্রাপ্ত এই মুভিতে ল্যারি চরিত্রে অভিনয় করেছে মাইকেল স্টলবার্গ।

আ সিঙ্গেল ম্যান

টম ফোর্ড তার পরিচালনা, প্রযোজনা এবং চিত্রনাট্যরচনা শুরু করেছেন আ সিঙ্গেল ম্যান মুভির মাধ্যমে। প্রথম ছবিটিই সেরা দশটি মুভির তালিকায় চলে এসেছে। কাহিনী একজন সমকামী ব্রিটিশ কলেজ প্রফেসরকে কেন্দ্র করে তৈরী হয়েছে। এই মুভিটিও ষাটের দশককে পটভূমি হিসেবে বেছে নিয়েছে। পার্টনারের হঠাৎ মৃত্যুর পরে নিজের জীবনকে খুজে পাওয়ার চেষ্টা করা – এ দিয়ে শুরু মুভিটি। মূল চরিত্রে কলিন ফার্থ ছাড়াও অভিনয় করেছে জুলিয়ান মুর। মুভিটি ডিসেম্বরে মুক্তি দেয়া হয়েছে।

সুগার

সুগার একটি স্পোর্টস মুভি। তবে পুরো কাহিনী শুধু বেসবল খেলাকে কেন্দ্র করে নয়। সুগার সান্টোস নামের এক খেলোয়ার তার সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা চালায় লীগ পর্যায়ে খেলার সুযোগ পাবার জন্য এবং এর মাধ্যমে তার পরিবারকে দারিদ্র থেকে মুক্তি দেবার। সুগার চরিত্রে আলজেনিস সোটো অভিনিত এটাই প্রথম মুভি।

 আপ

এ বছরের অন্যতম আলোচিত এনিমেশন মুভি ‘আপ’ রয়েছে সেরা দশটি মুভির তালিকায়। পিক্সার নির্মিত অন্যান্য মুভিগুলোর মতো এ মুভিটিও বক্স অফিস কাঁপিয়েছে। ৭৮ বছর বয়সী কার্ল দক্ষিন আমেরিকার বন্য অঞ্চল দেখার সাধ পূরন করতে বাড়ির সাথে বেঁধে দেয় হাজার খানেক বেলুন। কিন্তু উড়তে শুরু করার পরেই সে বুঝতে পারে সে একা নয়, সাথে রয়েছে ৭০ বছরের ছোট রাসেল। অক্টোবরে মুক্তি পাওয়া এই মুভিটি ইতিমধ্যেই ৭০০ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছে।

 আপ ইন দ্য এয়ার

পরিচালক জ্যাসন রিটম্যান এর আগে ‘জুনো’ মুভির মাধ্যমে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন। আপ ইন দ্য এয়ার মুভির মূল চরিত্র জর্জ ক্লুনি যার কাজ হলো সারা দেশ ঘুরে কর্মচারী ছাটাই করা। কমেডি এবং ড্রামা এই মুভিটি গত নভেম্বরে মুক্তি পেয়েছে।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

One Comment on “২০০৯ এর সেরা দশটি মুভি”

  1. up মুভিটা দারুণ। মানে, এত ভাল মুভি কমই আছে। পিক্সারের অসাধারণ একটা ক্রিয়েশন। মাঝে দিয়ে কিছুটা খেলো হয়ে গেছে বটে, তবুও সব মিলিয়ে এমন মুভি কমই আছে। বিশেষ করে এই মুভির শুরুর দিকে যা দেখাইছে, ডিরেক্টিংটা এত স্মুথ বলার বাইরে।

    আপনার রিভিউগুলি ত দারুণ হইছে। সামুতে যদি একই পোস্ট দেন, তাহলে মানুষ ওটা রেখে এই ব্লগে আসবে ক্যান? মুভি ফ্যান দের কাছে এই ব্লগে সাইটের নিজের একটা চাহিদা হতে পারে। সে বৈশিষ্ট্য আর গুণ এই সাইটের আছে।

    শুভকামনা রইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *