ছুরি দিয়ে বুক ফেড়ে দেখি ওর কলিজা কত বড়, সাহস কত। ও আমার মতো মেয়ের সঙ্গে টিজ করে কোন সাহসে।
সিনেমার সংলাপ নয়, বাস্তব ঘটনা। সংলাপ রচয়িতার নাম ফাতেমা আক্তার, বয়স ১৭। বলেছেন সাংবাদিক এবং পুলিশের উদ্দেশ্যে। ছুরি দিয়ে বুক ফেড়েছেন যে যুবকের তার নাম এমদাদুল হক শিপন, বয়স ২২। শিপন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটম্যান, পাশাপাশি খানজাহান আলী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ফাতেমার বক্তব্যানুযায়ী – তার মা খুলনা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শিপন তাকে টিজ করতো। পরে সে শিপনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে এবং তাকে ঘুমের ঔষধের সাহায্যে ঘুম পাড়িয়ে হত্যা করে, ছুরি দিয়ে বুক চিড়ে কলিজা বের করে ফেলে। (মানবজমিন)
পুলিশের প্রহরায় ফাতেমা আক্তার |
ইভটিজিং এর ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু ইভটিজিং এর ঘটনায় হত্যাকান্ডের ঘটনা বেশ কম, বিশেষ করে ভিকটিম নিজেই যেখানে হত্যাকারী। শিপন হত্যাকান্ডের পেছনের ঘটনা কি ফাতেমা যা বলছে তাই, নাকি ভিন্ন কিছু সে সময়ের সাথে সাথে পরিস্কার হবে। ফাতেমার হুমকী – আমি বের হলে কোন ছেলে যদি এ ধরনের কাজ করে তাকেও খুন করবো তার মানসিক সুস্থ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে।
ঘটনার দিক থেকে চোখ সরালে নৃশংসতার দিকটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। একটা সতেরো বছরের মেয়ে কিভাবে হত্যাকান্ড শুধু নয়, বুকে ছুরি চালিয়ে কলিজা বের করে নিয়ে আসার মত ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হয় সেটা ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে। সমাজে বিদ্যমান অস্থিরতা এবং আইন-শৃঙ্খলার বেহাল দশা এ ধরনের ঘটনার পেছনে কিছু ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ও স্পষ্ট হয়ে উঠে এ ধরনের ঘটনায়। ইভটিজিং এর ঘটনা এবং হত্যাকান্ডের মাধ্যমে প্রতিশোধ – দুটোই সামাজিক শিক্ষা এবং তার প্রয়োগের অভাবকে চিহ্নিত করে।
কিছুদিন পূর্বেই একজন মা তার সন্তানকে ইভটিজারের হাত থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে হাসুয়া দিয়ে কুপিয়ে টিজারকে হত্যা করার ঘটনায় বেশ আলোড়ন তৈরী হয়। উক্ত ঘটনার সাথে ফাতেমার হত্যাকান্ডের একটি দিক খুবই ভালোভাবে মিলে যায় – দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে প্রতিহিংসাপরায়নতার ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে তার জন্য প্রতিকারমূলক সমাধানের চেয়ে প্রতিরোধমূলক সমাধান শ্রেয়।