হতাশাগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে, ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে – এই বিষয়ে আমি আর বন্ধু সাকিব শাহরিয়ার দুজনেই একমত। প্রেম আর ক্যারিয়ার – এই দুই ক্ষেত্রে এদের সংখ্যা বেশী অথচ সাকিব তার দ্বিতীয় উপন্যাস অস্তিত্বের অন্তরালে-এ দুটো বিষয়কেই এত চমৎকার সূত্রে গেঁথেছে যে আমি অভিভূত।
বর্তমানের সামাজিক বাস্তবতায় প্রেম খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার৷ স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর প্রেম না করা একপ্রকার অযোগ্যতা হিসেবেই বিবেচিত হয়। প্রেম থাকলে প্রেম সংক্রান্ত নানা জটিলতা, বিচ্ছেদ এবং বিরহ অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হিসেবেই আসবে। কিন্তু কিভাবে এই জটিলতাগুলো সামলে উঠে সম্পর্কের উন্নয়ন এবং জীবনকে পরিচালনা করতে হয় সেই জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার উপরই নির্ভর করে জটিল বিষয়গুলোর প্রভাব কতটা গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী হবে। অস্তিত্বের অন্তরালে উপন্যাসে সম্পর্কের এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
অর্পন, ফাতেমা এবং তূর্য – এই তিন প্রধান চরিত্রকে ঘিরে উপন্যাসের গল্প আবর্তিত হয়েছে। ফাতেমা এই সমাজের শিক্ষিত, সাবলম্বী নারীদের একজন যে নিজের স্বপ্ন পূরণে দৃপ্ত পদক্ষেপে অগ্রসর হতে সক্ষম। অর্পন এবং তূর্য্য এই সমাজের দুটি ভিন্ন ধরনের মানসিকতার প্রতিচ্ছবি যারা জীবনের পথচলায় ফাতেমার মত নারীদের সঙ্গী হয়ে প্রেরণা জাগায়, সহযোগী হয় এবং পথ দেখায়। সম্পর্কের রসায়নে ক্রিয়া-বিক্রিয়া শেষে কখনও নতুন কিছু তৈরী হয়, কিছু বিলোপ পায়৷ ফলাফল নির্ভর করে বিদ্যমান উপকরণসমূহের অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যের উপর। এই বিষয়টি সাকিব তার উপস্যাসে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে।
সাকিবের লেখালিখির সাথে আমার পরিচয় অনেক বছরের। গত বছর বই আকারে তার প্রথম উপন্যাস সত্তাবর্তন প্রকাশিত হয়েছিল৷ দুটো উপন্যাসের মধ্যে তার নিজস্ব ঢং স্পষ্ট বোঝা যায়৷ প্রথম উপন্যাসের তুলনায় এই উপন্যাসে তার লেখা বেশি পরিপক্ক হয়েছে, এই ব্যাপারটা ভালো। সে যা বলতে চেয়েছে তা বেশ সহজ ও স্পষ্টভাবে বলতে পেরেছে।
সাকিবের এই দ্বিতীয় উপন্যাসও জয়তী প্রকাশনীর হাত ধরে মেলায় এসেছে। পাওয়া যাচ্ছে জয়তীর ৫১১-৫১২ নং স্টলে। আশা করছি, সত্তাবর্তনের তুলনায় অস্তিত্বের অন্তরালে বেশি পাঠকপ্রিয় হবে এবং আগামী বছরে প্রকাশিতব্য তার তৃতীয় উপন্যাস ছাড়িয়ে যাবে প্রথম দুটিকেও।
শুভকামনা।