বইয়ের জগতে সামান্য হলেও আসা-যাওয়া আছে এমন যে কেউই ‘দ্য আর্ট অব ওয়ার’ বইয়ের কথা শুনে থাকবেন। বিশেষ করে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের পছন্দের তালিকায় স্থান পাওয়া বইয়ের মধ্যে ‘দ্য আর্ট অব ওয়ার’ প্রায়ই পাওয়া যায়। বইয়ের লেখক সান জু (Sun Tzu)।
সান জু কে ছিলেন
সান জু বা সুন সু একজন চৈনিক সামরিক কৌশলবিদ, লেখক এবং দার্শনিক ছিলেন। এই পৃথিবীতে তার পদচারনা আড়াই হাজার বছর পূর্বে। খ্রীষ্টপূর্ব ৫৪৫ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়। বাশেঁর চাটাইয়ের উপর তিনি তার অভিজ্ঞতালব্দ জ্ঞান লিপিবদ্ধ করে গিয়েছিলেন। গত আড়াই হাজার বছর ধরে সেই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েছেন শাসক, সেনাপতি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী-খেলোয়ারসহ বিভিন্ন ধরনের মানুষ। সান জু’র সেই জ্ঞানই ‘দ্য আর্ট অব ওয়ার’ এর মোড়কে সন্নিবেশিত।
দ্য আর্ট অব ওয়ার
সান জু’র মূল বইতে অধ্যায়ের সংখ্যা অল্প, মাত্র তেরটি। অধ্যায়গুলোও ছোট ছোট। নির্দেশনাগুলো মূলত সামরিক বাহিনীর কমান্ডারদেরকে উদ্দেশ্য করে লিখা। কিন্তু গত কয়েকশত বছরে এই বই বিপ্লব ঘটিয়েছে – যুদ্ধক্ষেত্রে এবং তার বাইরে। বিশেষ করে – কর্পোরেট জগতে সান জু’র নির্দেশনাগুলোর খুব সফল প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়।
বাংলা ভাষায় সান জু’র বইটির বিভিন্ন অনুবাদ রয়েছে। সামহোয়্যারইনব্লগে ডিএইচ খান বইটির অনুবাদ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেছিল, তার একটি পিডিএফ পাওয়া যায়। মাত্র ঘন্টাখানেক সময় ব্যয় করে বইটি পড়ে নিতে পারেন। এছাড়া সংগ্রহে রাখার জন্যও বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারেন।
সান জু নিজেই তার বইয়ের নির্দেশনাগুলোর প্রয়োগ দেখিয়েছিলেন বলে জানা যায়। একটি ঘটনা প্রচলিত আছে যেখানে তৎকালীন রাজার নির্দেশে রাজার নর্তকী বাহিনীকে দিয়ে এই কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন তিনি। রাজার উদ্দেশ্যে কি ছিল নিশ্চিত নই, কিন্তু রাজার সেনাপতি হিসেবে নর্তকী দলকে দুইটি দলে ভাগ করে তার নেতৃত্বে রাজার প্রিয় দুই নর্তকীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেনাপতির নির্দেশ মেনে না চলায় এমনকি রাজার অনুরোধকে উপেক্ষা করে সান জু সেই দুই নর্তকীর মস্তক ছিন্ন করেছিলেন এবং দেখিয়েছিলেন কিভাবে তার নির্দেশনাগুলি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা গেলে সফল হওয়া সম্ভব।
আধুনিক দৃষ্টিকোণে সান জু’র দ্য আর্ট অব ওয়ার
সান জু অনেকটা আদেশ নিষেধের মত করে সামরিক জেনারেলদের বাহুল্যবর্জিত নির্দেশনা দিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে অনুবাদকবৃন্দ এর সাথে টিকা টিপ্পনী যুক্ত করেছেন, নিজেদের অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োগে উদাহরণ যোগ করেছেন। বাংলাদেশী লেখক মেজর মোঃ দেলোয়ার হোসেন খান সেরকমই একজন। সান জু’র দ্য আর্ট অব ওয়ার থেকে তিনি সান জু’র নির্দেশনাগুলো নিয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক যুদ্ধ-অভিযানের ঘটনাবলী উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করে লিখেছেন ‘আধুনিক দৃষ্টিকোণে সান জু’র দ্য আর্ট অব ওয়ার‘।
সান জু’র নির্দেশিত কলা-কৌশলের ব্যাখ্যা এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে উদাহরণ উপস্থাপন করে লেখক বইটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছেন। পাঠকের কাছে বইটি যেমন অত্যন্ত সহজবোধ্য হয়ে ধরা দিয়েছে, তেমনি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তি ঘটিয়েছে। উদাহরণের ক্ষেত্রে লেখক প্রাচীনকালের বিভিন্ন যুদ্ধ, বিখ্যাত মুসলমান সেনাপতি এবং তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত যুদ্ধ, বিশ্বযুদ্ধ এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে বেছে নিয়েছেন। পরিচিত গন্ডি থেকে তুলে আনা এ উদাহরণগুলো বইয়ের সাথে পাঠককে একাত্ম হতে সহায়তা করবে।
মেজর মোঃ দেলোয়ার হোসেন খান, পিএসসি
সান জু’র সামরিক কলাকৌশলের ব্যাখ্যা এবং বাছাইকৃত উদাহরণ থেকে লেখকের সামরিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। পেশাগত জীবনে মেজর মোঃ দেলোয়ার হোসেন খান, পিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ, স্কুবা ডাইভার এবং বোম্ব ডিসপোজাল অপারেটর। চাকুরীজীবনে মেজর দেলোয়ার পার্বত্য চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং জাতিসংঘের শান্তি মিশনে অংশগ্রহণ করেছেন। যুদ্ধবিগ্রহ এবং সামরিক কৌশল সম্পর্কে তার অর্জিত জ্ঞানের পরিচয় তিনি তার আরেকটি বই ‘মহাবীর খালিদ বিন ওয়ালিদ এর ইয়ারমুক যুদ্ধ‘-তেও রেখেছেন।
সান জু’র মূলত সামরিক বাহিনীর প্রধান এবং শাসকবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে লেখা হলেও সান জু নির্দেশিত কলাকৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। শোনা যায়, ২০০২ ফুটবল বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ফুটবল কোচ স্কলারি দলকে গড়েছিলেন আর্ট অব ওয়ার অনুসারে।
কর্পোরেট জগতে এই বই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে। অনেক প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজারদেরকে এই বই পড়তে উৎসাহ দেয়া হয়। এ সকল ক্ষেত্রে আর্ট অব ওয়ার মূল বই পড়ার চেয়ে মেজর দেলোয়ার হোসেন খান, পিএসসি রচিত ‘আধুনিক দৃষ্টিকোণে সান জু’র দ্য আর্ট অব ওয়ার’ পাঠ অনেক বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করি।
বইটা আসলেই খুব সুন্দর, ডি এইচ খানের বাংলা অনুবাদটাও অসাধারণ। আমি আমার সাইটে বইটির PDF আপলোড করেছি (Fully Mobile Optimized PDF)।
থ্যাংকিউ নুসরাত নাজনীন। আবারও আসবেন।
বেশ জনপ্রিয় বই, জনপ্রিয় সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে এখন। আপনার পর্যালোচনা পড়ে ভালো লাগলো, পড়তে হবে।
স্বাগতম এবং আন্তরিক ধন্যবাদ কবির নাঈম। আপনার ওয়েবে ঢুঁ মেরে এসেছি (কমেন্ট করার জায়গা পাইনি 😉 )। আপনার জন্য শুভকামনা রইল 🙂