চাইল্ড সোলজার বা শিশু সৈনিকদের নিয়ে গত একদশকের সবচে জনপ্রিয় সিনেমার নাম সম্ভবত ব্লাড ডায়মন্ড। এর প্রধান কারণ হল লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও যিনি সিনেমার কেন্দ্রিয় চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ব্লাড ডায়মন্ড সিনেমায় চাইল্ড সোলজার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলেও মূল বিষয় ছিল ডায়মন্ড ফলে শিশুসৈনিকদের বিষয়টি পরিপূর্ণভাবে ফুটে উঠে নি। অবশ্য যেটুকু পাওয়া গিয়েছিল সেটিও কম নয়, চাইল্ড সোলজারদের অমানবিক জীবনের একটি দৃশ্য পাওয়া যায় সেখানে। এর চেয়েও ভালোভাবে পাওয়া যায় এরকম কয়েকটি সিনেমা নির্মিত হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। এদের মধ্যে নেটফ্লিক্স নির্মিত বিস্টস অব নো নেশন বেশি জনপ্রিয়, পাশাপাশি ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ওয়ার উইচের নামও বলতে হয়।
কমোনা নামের বারো বছর বয়সী এক মেয়েশিশুর সৈনিক হয়ে যাওয়া এবং তার তিনবছরব্যাপী সৈনিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অভিযাত্রার ন্যারেটিভ কমোনার বয়ানে বর্ণিত হয়েছে ওয়ার উইচ চলচ্চিত্রে।কানাডার নির্মিত এই চলচ্চিত্রে কমোনা ঠিক কোন দেশের বাসিন্দা তা স্পষ্ট নয়। সিনেমার কাহিনী থেকে তৃতীয় বিশ্বের আফ্রিকান কোন দেশ যেখানে সরকারী বাহিনীর সাথে যুদ্ধরত বিদ্রোহী বাহিনী রয়েছে তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।কমোনা কিভাবে শিশু সৈনিক হয়ে গেল, কিভাবে তুমুল যুদ্ধের মধ্যেও সে বেঁচে গেল এবং ওয়ার উইচ হয়ে গেল এবং ওয়ার উইচ হওয়ার পর তার জীবনে কি ধরনের পরিবর্তনগুলো হল তার বর্ণনা সে করে তার পেটের অনাগত সন্তানের কাছে, সেই উছিলায় আমরা দর্শক একের পর এক শিউরে ওঠা নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি হই।
সম্পূর্ণ সিনেমাটিই কমোনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত হওয়ায় চাইল্ড সোলজারদের মনস্তাত্বিক ব্যাপারটি বেশ ভালোভাবে ফুটে উঠেছে সিনেমায়। পাশাপাশি তাদের ঝুঁকিপূর্ণ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন জীবন, কঠোর শারীরিক পরিশ্রম ও পথচলা, জানবাজি রেখে টিকে থাকার লড়াই ইত্যাদি খন্ড খন্ড চিত্রের স্পষ্ট হয়। ওয়ার লর্ডদের আয়ের উৎসের ছোট্ট একটি উপায়ও দেখা যায় ছবিতে, কিন্তু সে কেবল গল্প বলার তাগিদেই।
২০১২ সালে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটির দৈর্ঘ্য মাত্র নব্বই মিনিট। কাহিনী ও নির্মানে প্রথম শ্রেণির এই ছবিটি অস্কারে কানাডার পক্ষ থেকে বিদেশি ভাষার ছবি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিল এবং সেরা পাঁচের তালিকায় প্রতিযোগিতা করেছিল। শেষ পর্যন্ত অস্কারে কোন অর্জন না থাকলেও কানাডাসহ একাধিক ফেস্টিভ্যালে একাধিক পুরস্কার অর্জন করতে সক্ষম হয়। সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন কমোনা চরিত্রে রূপদানকারী প্রধান অভিনেত্রী র্যাচেল মাওয়ানজা (Rachel Mwanza)। অত্যন্ত ন্যাচারাল অভিনয় ছাড়াও অন্য যে বিষয়টি র্যাচেলকে আলোচনায় নিয়ে আসে তা হল তার প্রকৃত জীবন। সিনেমায় অভিনয়ের আগে সে সত্যিই তার কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে উইচ হিসেবে পরিচিত ছিল এবং পরিবার-সমাজ থেকে বহিস্কৃত হয়ে রাস্তাকেই ঘর বানিয়ে নিয়েছিল। তার সেইসব দিনের ঘটনা নিয়ে সে একটি বইও লিখেছে।
বাস্তব জীবনে র্যাচেলের অভিনয় যোগ্যতা থাকুক বা না থাকুক, ওয়ার উইচ ছবিতে তার অভিনয় দুর্দান্ত। কমোনার প্রেমিক ম্যাজিশিয়ান চরিত্রে Serge Kanyinda ও চমৎকার অভিনয় করেছে। মূলত এই দুজনের পারফরম্যান্সের উপর নির্ভর করেই মসৃনভাবে সিনেমার গল্প পরিণতির দিকে এগিয়েছে। সিনেমাটির আরেকটি উপভোগ্য বিষয় হল এর চমৎকার সিনেমাটোগ্রাফি। সব মিলিয়ে নব্বই মিনিটের একটুও বিফলে যাওয়ার মত নয়।
রেটিং: ৫/৫