পশ্চিম বাংলার সাহিত্যের বেশ কিছু গোয়েন্দা চরিত্র রূপালী পর্দায় আবির্ভূত হয়েছেন। ফেলুদা সম্ভবত পায়োনিয়ার। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যোমকেশ বক্সী এসেছেন। ফেলুদা বলতে গেলে তার স্রষ্টা সত্যজিৎ রায় এবং তার ছেলে সন্দ্বীপ রায়ের মধ্যেই আবর্তিত ছিলেন, ব্যোমকেশ বক্সী সে তুলনায় কয়েকজন পরিচালকের হাতে বিভিন্নরূপে উপস্থাপিত হয়েছেন। এছাড়া এসেছেন নীহাররঞ্জন গুপ্তের গোয়েন্দা কিরিটি রায়। সুনীল গাঙ্গুলির কাকাবাবুও রূপালী পর্দায় এসেছেন। বাজারে এ কয়জন গোয়েন্দা থাকার পরও যদি শবর দাশগুপ্ত নামের আরেকজন গোয়েন্দা উপস্থিত হয়, তাহলে ‘এবার শবর’ সিনেমার নাম হিসেবে যথার্থ।
শবর দাশগুপ্ত কলকাতার পুলিশের কর্মকর্তা, লালবাজারে তার অফিস। শবরের স্রষ্টা সুসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তিনি ভেবে চিন্তেই শবরের চরিত্র তৈরী করেছেন – অন্যান্যদের মত শবর প্রাইভেট গোয়েন্দা নয়, সরকারী গোয়েন্দা। উপন্যাসগুলোর কাহিনী ও সংলাপেও যথেষ্ট পার্থক্য আছে। তবে সবচে বড় পার্থক্য সম্ভবত কাহিনীর রেটিং – এ। অন্যান্য গোয়েন্দারা পিজি-১৩ রেটিং এর গল্প বলেন, গোয়েন্দা শবরের কেসগুলো সে তুলনায় ১৮+ না হলেও ১৬+, মানে একটু অ্যাডাল্ট-ঘরানার গল্প। এবার শবর ছবির গল্পতেও সেই বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেল।
মিতালী ঘোষ নামের এক নারী খুন হয়েছেন নিজ ঘরেই। যে রাত্রে খুন হল সে রাত্রে তার বাসাতেই পার্টি ছিল। মিতালীর অতীতে কিছু ঘটনা আছে। মিঠু মিত্র এক নাম্বার সাসপেক্ট কারণ তার সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছিল এবং মিতালী তাকে ডিভোর্স দিয়েছিলেন অল্পদিন পরেই। ফলে সে একজন সাসপেক্ট। এছাড়া মিতালীর বন্ধু যে কিনা কৈশোরে মিতালীর মন জয়ের চেষ্টা করেছিল এবং পার্টিতে উপস্থিত ছিল, সেও সাসপেক্ট। তদন্তের দায়িত্বে লালবাজারের গোয়েন্দা শবর দাশগুপ্ত। শবর তদন্তের গভীরে যতই প্রবেশ করেছেন, আরও নতুন ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে। তার মধ্যে প্রেম আছে, যৌনতা আছে, লোভ, ক্রোধও আছে। সব মিলিয়ে রহস্যগল্পটা রোমান্টিক গল্পেরও স্বাদ দেয়।
শবর দাশগুপ্তের চরিত্রে আছে শ্বাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, যে কিনা এককালে ছোটপর্দায় ফেলুদার শিষ্য তোপসে এবং বড়পর্দায় ব্যোমকেশের সহকারী অজিত ছিল। সাধারণভাবে গোয়েন্দা চরিত্রের জন্য শ্বাশ্বতকে গ্রহণ করা কষ্টকর। কিন্তু শবরের চরিত্রে সে দারুণভাবে খাপ খেয়ে গেছে। এর কারণ হল শবর চরিত্রের চিত্রায়ন। শখের কিংবা প্রাইভেট গোয়েন্দাকে যথেষ্ট সুদর্শন এবং স্মার্ট হতে হয়, ক্লায়েন্ট পাবার জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণও বটে। সরকারী গোয়েন্দাদের ক্ষেত্রে এটা চাকরি, তাই শ্বাশ্বতের উপস্থাপনের মধ্যে প্রাইভেট গোয়েন্দার সেইসব বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার চেষ্টা করেন নি পরিচালক অরিন্দম শীল। আমি বলবো, এ কারণেই ‘এবার শবর’ আমাদের আশেপাশে ঘটে যাওয়া জীবনের গল্প হয়ে উঠেছে, নতুন এবং অবাস্তব কিছু হয় নি।
শ্বাশ্বত ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের মধ্যে ছিল মিতালী চরিত্রে স্বস্তিকা, মিঠু মিত্র চরিত্রে আবির চ্যাটার্জী, মিতালীর কাজিন জয়িতা চরিত্রে পায়েল সরকার। তারা প্রত্যেকেই চরিত্রানুযায়ী চমৎকার অভিনয় করেছেন। পান্তু হালদার চরিত্রের অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী এই ছবির অন্যতম আকর্ষন। পাড়ার গাড়ি মেকানিক সে, ছোট খাটো অপরাধের সাথেও হয়তো জড়িত। তার অভিনয়কে অভিনয় মনে হয় নি, সংলাপ ডেলিভারি এতটাই দুর্দান্ত, বোঝার জন্য হয়তো সাবটাইটেলের দরকার হবে কারও কারও।
অরিন্দম শীলের পরিচালনার সাথে আগে পরিচয় হয় নি। আইএমডিবি এবং উইকিপিডিয়ার কল্যাণে জেনেছি এর আগে তিনি আবর্ত পরিচালনা করেছেন যেই ছবিতে আমাদের জয়া আহসান অভিনয় করেছিলেন। এবার শবর ছবির পরে তিনি হর হর ব্যোমকেশ এবং শবর চরিত্রকে নিয়ে দ্বিতীয় ছবি ঈগলের চোখ পরিচালনা করেছেন। দুটোর একটিও দেখা হয় নি, তবে এবার শবর দেখার পর তার উপর ভরসা করতে পারি, বাকী ছবিগুলোও এই ছবির মত সুনির্মিত হবে। এবার শবরের পর এবার ঈগলের চোখ খুঁজছি।
রেটিং: ৪.৫/৫
সাবলীল লেখা। আরো বড় লেখা চাই। ফিরে আসার জন্য ধন্যবাদ।
শুকরান ইয়া হাবিব! ছোট লেখারই পাঠক নাই, বড় লিখা কি হবে? আর এইটা ফিরা আসা নাকি বাতি নিভার আগে জ্বলে উঠা আল্লাহই ভালো জানেন। দেখা যাক!