জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন নির্মাতা অমিতাভ রেজার প্রথম চলচ্চিত্র আয়নাবাজি মুক্তি পেয়েছে দুই সপ্তাহ হল। মুক্তির আগে থেকেই সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে প্রবল আগ্রহ তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিলেন অমিতাভ রেজা এবং তার দল।
ফলাফল হল – মুক্তির পর থেকে টানা তৃতীয় সপ্তাহে চলা আয়নাবাজি চলচ্চিত্রের বেশিরভাগ শো-ই হাউসফুল, দর্শকরা যে আগ্রহ নিয়ে সিনেমাটি দেখতে যাচ্ছেন তার চেয়ে বেশি তৃপ্তি নিয়ে ফিরছেন (যা বাংলা চলচ্চিত্রে দুষ্প্রাপ্য!) এবং আয়নাবাজির যাত্রা আরও কয়েক সপ্তাহ অব্যাহত থাকার লক্ষণ সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়েছে।
গিয়াসউদ্দিন সেলিম নির্মিত একমাত্র চলচ্চিত্র মনপুরা’র পর সম্ভবত আয়নাবাজি-ই দ্বিতীয় যা (প্রায়) সর্বস্তরের দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছে। প্রচুর প্রসংশার পাশাপাশি অনেক অভিযোগও আছে অমিতাভ রেজা এই সিনেমার বিরুদ্ধে, এখন পর্যন্ত সবচে বড় অভিযোগ হল – এই ছবিটি কোরিয়ান Tumbleweed ছবির নকল। টাম্বলউইড এর নামই জানা ছিল, অভিযোগের প্রেক্ষিতে দেখা এবং আয়নাবাজি টাম্বলউইড থেকে কতটুকু নকল – তা এই পোস্টের আলোচ্য বিষয়।
টাম্বলউইড সম্পর্কে
টাম্বলউইড এর কাহিনী (স্পয়লার অ্যালার্ট) দুই-তিন বাক্যে বলি। চাং সু দুম করে এক চমৎকার সুন্দরী মেয়ের প্রেমে পড়ে গেল। মেয়েটি সম্প্রতি তার স্থানীয় মাফিয়ার সেকেন্ড বস বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেক-আপ করেছে। একদিন দুম করে মেয়েটি খুন হয়ে গেলে চাং সু পালায়। কিন্তু এক্স বয়ফ্রেন্ডই তাকে খুঁজে বের করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। জেল খেটে বের হয়ে এসে চাং সু প্রতিশোধ নেয় – প্রেমিকা হত্যার এবং বিনা অপরাধে পাওয়া শাস্তির!

ছবিতে চাং সু’র পেশা হল টাকার বিনিময়ে অন্যের জন্য জেল খেটে দেয়া। জেল খেটে বের হয়ে এসে চাং সু সেই মাফিয়া লিডারের কাছে পাওনা টাকাও চেয়েছিল। প্রকৃত খুনি মাফিয়া লিডারের পরিবর্তে সে জেল খেটেছে, সুতরাং তার মূল্য সে চাইতেই পারে। কিন্তু প্রিয় পাঠক, বলুন তো, চাং সু’র পেশা যদি জেল খেটে দেয়া না হয়ে রেলস্টেশনের কুলিগিরি হতো কিংবা কোন হোটেলের বয়, তাহলে কি গল্পটা আটকে যেত? যদি না আটকায়, তাহলে আয়নাবাজি-র আয়না’র পেশার সাথে চাং সু-র পেশা মিলে গেলেই কি ছবি নকল হবে?
আয়নাবাজি কি নকল সিনেমা?
কেউ কেউ বলছেন, টাম্বলউইড ছবির থিম নকল করে আয়নাবাজি নির্মিত হয়েছে। এদেরকে কিছু বলা সম্ভব নয়। কারণ তারা থিম বলতে কি বোঝায় তা সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন না। টাম্বলউইড চলচ্চিত্রের থিম কোনভাবেই টাকার বিনিময়ে জেল খাটা নয়, এটি একটি রিভেঞ্জ (প্রতিশোধ) থিমের থ্রিলার গল্প, এই সিনেমায় রিভেঞ্জটা কই বলুন তো?
আয়নাবাজি’র বিরুদ্ধে নকলের যে অভিযোগ উঠেছে তার সাথে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর টেলিভিশনের সাথে তুর্কী সিনেমা ভিজন-টেলে ছবির মিল নিয়ে তোলা অভিযোগের ভালো মিল রয়েছে। সিনেমার কাহিনীকার ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র আয়না-কে কোথা থেকে ধার করেছেন, টাম্বলউইড চলচ্চিত্র থেকে নাকি অন্য কোথাও, সেটা স্পষ্ট করেন নি। টাম্বলউইড ছবি থেকে তারা আইডিয়া নিতেই পারেন, সেটা গোপন করে যাওয়ার চেয়ে প্রকাশ করার মধ্যেই মহাত্ম – তারা সেটা বুঝেন বলেই বিশ্বাস করি।
আয়নাবাজি শতভাগ মৌলিক চলচ্চিত্র কিনা জানি না, অন্ততঃ এতটুকু জানি, এটি টাম্বলউইডের নকল নয়। তবে, চলচ্চিত্রটি ত্রুটিমুক্ত নয় এবং যৌক্তিকভাবে এ সকল ত্রুটি নিয়ে আলোচনা চলা উচিত। আনফরচুনেটলি, খুব অল্প মানুষই ত্রুটিগুলো নিয়ে কথা বলছে, হয়তো সামনে পাওয়া যাবে। ভালো ছবির দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা আরও সবল ছবির নির্মান নিশ্চিত করে। অযৌক্তিক মিথ্যা অভিযোগ চাপিয়ে বাংলাদেশীদের ‘টেনে নিচে নামানোর প্রচেষ্টা’র অভিযোগই স্পষ্ট হয়, ছবি কিন্তু নিচে নামে না – আশা করি যারা অভিযোগ করেন তারা বিষয়টা বুঝবেন।
মত কিংবা ভিন্নমত – অলওয়েজ ওয়েলকাম!
টাম্বলউইড ছবি থেকে তারা আইডিয়া নিতেই পারেন, সেটা গোপন করে যাওয়ার চেয়ে প্রকাশ করার মধ্যেই মহাত্ম – তারা সেটা বুঝেন বলেই বিশ্বাস করি। tai? how can u b sure that they actually borrowed the concept from that film or its just mere coincidence?
দারাশিকো’র ব্লগে স্বাগত প্রিয় অভি জিবরান 🙂
কিঞ্চিৎ ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে – আমি কিন্তু একবারও বলি নি যে তারা ওই ছবি থেকে আইডিয়া ধার করেছেন। আমি বলেছি, নিতেই পারেন এবং (যদি নেন তাহলে) সেটা গোপন করে যাওয়ার চেয়ে প্রকাশ করার মধ্যেই মহাত্ম – তারা সেটা বুঝেন বলেই বিশ্বাস করি। (যেহেতু তারা বুঝেন, সেহেতু তারা আইডিয়া নিলে গোপন না করে প্রকাশ করবেন এবং এর মাধ্যমে তারা মহৎ কাজ করবেন। আর যদি না নেন এবং কো-ইনসিডেন্স হয়ে যায়, তাহলে প্রকাশ করা না করা তাদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে)।
আবারও আপনাকে এই ব্লগে পাওয়া যাবে আশা করছি। ধন্যবাদ 🙂
আমি অলওয়েজ আপনার লেখা এঞ্জয় করি।
ধন্যবাদ রাজিব 🙂
টাম্বলউইড দেখি নাই, তাই নকল কিনা জানিনা। তবে কিছু জায়গায় ডিরেক্টর কম্প্রোমাইজ করছে, যেটা তার কাছ থেকে আশা করি নাই। হোক সেটা বাণিজ্যিক।সিনেমার কিছু চরিত্রে সে তার ভাই ব্রাদারদের কাস্ট করছে। তারা কত ভাল অভিনেতা জানিনা, তবে এর চাইতে আরো দক্ষ অভিনেতা কাস্ট করা উচিত ছিল। অবশ্য আমাদের দেশের ডিরেক্টরদের মধ্যে একটা সমস্যা আছে, মূল চরিত্রগুলা বাদে, ইনসার্ট ঢোকানোর মত যারে পায় তারে ঢোকায় দেয়। আরেফিন শুভ’র বাল(চুল) অনেক শক্ত বলে আমার ধারণা, নাইলে অমিতাভ রেজার মত ডিরেক্টর কেন লম্বা চুলয়ালা পুলিশ অফিসার বানাইলো। যাইহোক এরকম ছোটখাট ভুল বাদ দিলে, সিনেমাটা জোস। আমার মনে হয়, অন্যান্য ডিরেক্টররা এখন থেকে সিনেমা বানানোর আগে গল্প নিয়ে দশবার ভেবে, তারপর মাঠে নামবে।
বাংলাদেশের জেলে থাকা অবস্থায় সন্তানের পিতা হওয়ার নিউজ থেকে গাওসুল আলম শাওনের মাথায় আয়নাবাজির আইডিয়া আসে।
http://www.bd-pratidin.com/first-page/2016/08/23/165020
Tumbleweed এর ডাউনলোড লিংক হবে ভাই?
আমি তো ভাই টরেন্ট থেকে নামিয়েছিলাম। মূল ফাইলটা গত পরশুদিন ডিলেট করে দিয়েছি, নাহয় ড্রপবক্স বা ড্রাইভে দিয়ে দিতে পারতাম। টরেন্ট ফাইলটা হয়তো খুঁজলে পাবো, চলবে?
আলোর বেগে চলবে…
আমি ঢাকার বেগে দিলাম। স্যরি।
https://torrentproject.se/b0f50c3134d9d7b739df24d3851d3651eb3b7ed0/——-Tumbleweed.2013.720p.HDRip.H-Mbaro.mkv-torrent.html
ধন্যবাদ
Mr. Darashiko you have simplified the storyline of Tumblrweed and diverted the concentration of the storyline in revenge. Either you have not watched it or did not understand or intentionally summarize in your own way. The story is The protagonist’s profession is serving jail fir others in exchange of money. Which is most critical part, then he fall in love with the neighborhood girl that change his life … so he decided to do his last service and fall into a rabbit whole of incidents…. do you know what storyline is? Of course I have seen many film of yours… are those original? anyway… only difference is in Aynabaji the ending is different. Otherwise main story is the same..
দারাশিকো’র ব্লগে স্বাগতম সেজান 🙂
সম্ভবত আপনি একটু ভুল করছেন, আমি অভিনেতা-পরিচালক দারাশিকো নই।
দ্বিতীয়ত, টাম্বলউইডের কাহিনীকে আমি বেশ সহজভাবে উপস্থাপন করেছি সত্য, তবে কাহিনীকে রিভেঞ্জের দিকে ডাইভার্ট করে দেই নি, গল্পটাই রিভেঞ্জের দিকে গিয়েছে। খুনী মাফিয়া লিডারের পক্ষে সে যে জেল খেটেছে সেটা কি ইচ্ছাকৃত ছিল? নাকি সে বাধ্য হয়েছে জেল খাটার জন্য? সে কি ধরা না পড়া থেকে বাঁচার চেষ্টা করে নি? জেলে যাওয়ার আগে অন্যান্যবার যেরকম চুক্তিবদ্ধ হয়, সেরকম কি মাফিয়া লিডারের সাথে সে চুক্তি করেছিল? তাহলে আয়নাবাজি চলচ্চিত্রের সাথে মিল হল কিভাবে সেটা তো খুঁজে পেলাম না। আপনি হয়তো ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
সর্বশেষ প্রশ্ন, আপনি কি টাম্বলউইড সত্যিই দেখেছেন? নাকি উইকিপিডিয়া বা আইএমডিবি-র প্লট পড়ে আয়নাবাজির সাথে মিল খুঁজে পেয়েছেন?
আয়নাবাজিও কপি জানা ছিল না
এর পরেও কপি বলবেন?