সেবা প্রকাশনীর ওয়েস্টার্ন বইয়ের সাথে পরিচয় থাকলে এরফান জেসাপের সাথে পরিচয় অবশ্যই থাকবে। আমার কৈশোরের সবচেয়ে প্রিয় ওয়েস্টার্ন হিরো এরফান। এখনও এরফানের কোন বই হাতে পেলে বা কয়েক পৃষ্ঠা পড়লে আমি কৈশোরে ফেরত যাই। তখন জানা ছিল না, এখন জানি, সেবা প্রকাশনীর প্রায় সকল বই-ই বিদেশী সিনেমা বা উপন্যাস থেকে নেয়া। তাহলে এরফান জেসাপ কোন সিনেমা বা উপন্যাস থেকে নেয়া? একদিন অলস সময়ের পরিশ্রমের ফসল এই পোস্ট।
এরফান জেসাপ কি মৌলিক চরিত্র
ওয়েস্টার্ন প্রেমীদের প্রিয় চরিত্র এরফান জেসাপ কাজী মাহবুব হোসেনের সৃষ্টি – অবশেষে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেল। এই নামে কোন বিদেশী লেখক বা চলচ্চিত্র নির্মাতা কোন চরিত্র তৈরী করেন নি। ফলে কোন ইংরেজি উপন্যাস অথবা বিদেশী সিনেমায় এরফার জেসাপ চরিত্রটিকে খুঁজে পাওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। তবে সেবা প্রকাশনীর বাকী সব বইয়ের মতোই এরফান জেসাপের গল্পগুলোও কোন না কোন লেখকের গল্প থেকে নেয়া।
১৯৮৩ সালে প্রথমবারের মতো পাঠকের সামনে উপস্থিত হয় বাংলা ভাষায় ওয়েস্টার্ন উপন্যাসের এই হিরো। তারপরে আরও ছয়টি উপন্যাসে সরাসরি ঘুরে ফিরে এসেছে এরফান। ‘আর কতদূর’ শিরোনামের একটি বইয়ে এরফানের ছেলের রোমাঞ্চকর অভিযাত্রার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে – এই বইটিকে সিরিজের বই হিসেবে বিবেচনা করা না করা পাঠকের ইচ্ছা – আমি বিবেচনা করিনি।
এরফান জেসাপ বইয়ের তালিকা
আলেয়ার পিছে, আর কতদূর, আবার এরফান, ডেথ সিটি, মৃত্যুর মুখে এরফান, অ্যারিজোনায় এরফান, সেই এরফান এবং ভূমিদস্যু – এই হলো বইগুলোর নাম যেখানে এরফানকে পাওয়া যাবে।
আলেয়ার পিছে
আলেয়ার পিছে বইয়ের মাধ্যমে একই সাথে সেবা প্রকাশনীর ওয়েস্টার্ন এবং এরফান জেসাপের যাত্রা শুরু। সুন্দরী এক তরুণীকে ভালোবেসে কাছে পাওয়ার স্বপ্নে এরফান জেসাপ তার বন্ধুদের সাথে মিলে যোগ দেয় ওয়াগন ট্রেনে – নতুন এক এলাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে যেখানে সোনা পাওয়া যাবে। কিন্তু সেই একই ট্রেনে আছে এমন একদল লোক যারা তাদের কাজকর্মের মাধ্যমে কুখ্যাতি কিনে নিয়েছে। ঠিক কি করবে ওরা সেটা না জানলেও কিছু একটা যে হবে সেটা বুঝতে পেরেই ঠেকানোর উদ্যোগ নিল এরফান জেসাপ।
আলেয়ার পিছে বইয়ের গল্প বিখ্যাত ওয়েস্টার্ন গল্প লেখক লুই লামুরের উপন্যাস Westward The Tide থেকে নেয়া। লামুরের অনেকগুলো গল্প/উপন্যাস থেকেই সিনেমা তৈরী হলেও এই বই অবলম্বনে কোন ছবি তৈরী হয় নি। এই বইয়ের হিরো ম্যাট বার্ডুল।
আবার এরফান
এরফানকে নিয়ে দ্বিতীয় বই আবার এরফান – যার শুরুতেই দুই আঙ্গুলের ফাঁকে ধরা মুদ্রাকে পরপর দুই/তিন গুলিতে উড়িয়ে দিয়েছিল জেসাপ। এক র্যাঞ্চের লোকজন গুলি খেয়ে মরছে আর সেই র্যাঞ্চের পক্ষেই লড়াইয়ের জন্য যোগ দেয় এরফান।
এই বইয়ের গল্প নেয়া হয়েছে অলিভার স্ট্রেঞ্জ এর গল্প Sudden Makes War থেকে। বইটা ওয়েবে পাওয়া যায় – প্রায় হুবহু নেয়া হয়েছে বই থেকে। দুঃখজনক, এই বই থেকেও কোন সিনেমা তৈরী হয় নি।
ডেথসিটি
তৃতীয় বই ডেথসিটির মূল গল্পও অলিভার স্ট্রেঞ্জ থেকে নেয়া। এরফান এবার হাজির হয় হেলসিটিতে গেড়ে বসা একদল ডাকাতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য। আউট-ল’র দলকে শায়েস্তা করতে একাধিকবার ব্যর্থ হয়ে গভর্নর শেষ পর্যন্ত পাঠিয়েছেন এরফানকে, কিভাবে এরফান জয়ী হলো – সেই বর্ণনা রয়েছে ডেথসিটিতে। অলিভার স্ট্রেঞ্জের মূল বইয়ের নাম Sudden Rides Again।
মৃত্যুর মুখে এরফান
মৃত্যুর মুখে এরফান বইতে নতুন এক শহরে উপস্থিত হয় এরফান যেখানে শহর চলছে এক ব্যক্তির কথায়, শেরিফ তার পোষা লোক। এই বইয়ের লেখক ফ্রেডেরিক এইচ ক্রিশ্চিয়ান যিনি অলিভার স্ট্রেঞ্জের সাডেন সিরিজের পাঁচটি বই লিখেছিলেন। মূল গল্পের নাম Hang Angel.
অ্যারিজোনায় এরফান
অন্যদিকে, র্যাঞ্চারদের বিরোধ আর গরু-ঘোড়া চুরির দ্বন্দ্ব ঠেকাতে অ্যারিজোনায় উপস্থিত হয় এরফান। সেখানে আবার উপস্থিত কুখ্যাত এক পিস্তলবাজ। আবার, খুনের দায়ে গ্রেফতার হয়ে গেলো এরফান। টানটান উত্তেজনার গল্প।
এই বইয়ের কাহিনী কোন বিদেশী গল্প থেকে নেয়া হয়েছে তা জানতে পারিনি। আবার এরফান এবং ডেথসিটি – এই দুই বইয়ের গল্প ও চরিত্র যেহেতু অলিভার স্ট্রেঞ্জের কাছ থেকে ধার নেয়া, তাই ধারণা করি, এরফানের এই বইয়ের কাহিনীও অলিভার স্ট্রেঞ্জের সাডেন সিরিজের কোন গল্প থেকে নেয়া।
সেই এরফান
তবে ‘সেই এরফান’ এর কাহিনী সাডেন সিরিজ থেকে নেয়া হয়নি, নেয়া হয়েছে অলিভার স্ট্রেঞ্জের The Laws of the Larriatt থেকে।
ভূমিদস্যু
সর্বশেষ বই ভূমিদস্যু। এটি মূলত বড় গল্প, অন্য আরেকটি গল্পের সাথে মিলিয়ে এক বইয়ে প্রকাশিত হয়। ভূমিদস্যু কোন বই অবলম্বনে – নিশ্চিত নই। তবে এরফান সিরিজের সবচেয়ে দুর্বল বই এটি, অর্ধেকটা পর্যন্ত গল্প সুগঠিত হলেও তাড়াহুড়ো করে গল্পটি শেষ করা হয়েছে। এরফান সিরিজের বইয়ের এমন দুরাবস্থা প্রকারান্তরে এরফান জেসাপেরই সম্মানহানি করেছে – এমন অভিযোগও পাঠকের পক্ষ থেকে করা হয়।
এরফান জেসাপ, জেমস গ্রিন এবং সাডেন
এরফান কয়েকটি বইয়ে হাজির হয়েছে জেমস গ্রিন নামের আড়ালে। এরফানের পরিচয় জানতে পেলে উদ্দেশ্য হাসিল করা কঠিন হবে – এটাই ছিল যুক্তি। মজার ব্যাপার হলো – অলিভার স্ট্রেঞ্জের সাডেন সিরিজের নায়ক সাডেন যে নামের আড়ালে লুকায় সেটিও জেমস গ্রিন। এরফানের মত সাডেনও গভর্নরের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় উপস্থিত হয়।
সাডেন সিরিজের স্রষ্টা অলিভার স্ট্রেঞ্জ ১৯৩০ সালে প্রথম কিস্তি প্রকাশ করেন। এর পরে ১৯৫২ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাডেন সিরিজের মোট দশটি বই লিখেছেন। পরবর্তীতে ফ্রেডেরিক এইচ ক্রিশ্চিয়ান নামের একজন লেখক ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ সময়ে আরও পাঁচটি বই লিখেছিলেন। এই পনেরোটি বইয়ের মাঝে কেবল তিনটি বইয়ের নামে ‘সাডেন’ এর উল্লেখ নেই, সুতরাং বইগুলো পড়তে চাইলে খুঁজে পেতে মোটেই কষ্ট হবে না।
বলে রাখা ভালো – ইংরেজি বইগুলোর কোনটিই আমার পড়া হয় নি। সাডেন মেকস ওয়ার পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম – কিন্তু পড়তে গিয়ে বুঝলাম – এই বইয়ে স্বাদ পাওয়া যাবে না – সেবার ভাষাতেই আসল স্বাদ। তবে এইসব গল্পের সিনেমার জন্য হয়তো আমি আরও অনেকদিন অপেক্ষা করবো।