চলচ্চিত্র পরিচালক অনন্য মামুন একজন পায়োনিয়ার। তিনি ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ চলচ্চিত্রে যৌথ পরিচালনা করে একটি ভারতীয় চলচ্চিত্রকে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র হিসেবে বাংলাদেশের বাজারে ব্যবসা করার সুযোগ তৈরী করে দিয়েছিলেন – খুব বেশীদিন আগের ঘটনা নয় এটি। সেই সময় অনন্য মামুনের এই ভণ্ডামী কার্যকলাপে প্রতিবাদ করেন নি এমন বাংলাদেশী চলচ্চিত্রপ্রেমী খুব কমই আছে। কিন্তু মাত্র চার মাসের ব্যবধানে ঘটনা অনেক পাল্টে গিয়েছে।
খল অভিনেতা মিশা সওদাগর এবং পরিচালক অনন্য মামুনের উপর ভর করে কোলকাতার চলচ্চিত্র যখন বাংলাদেশে বহু আগে থেকেই ভিসিআর-সিডি-ডিভিডি-ইন্টারনেটের কল্যাণে প্রস্তুতকৃত দর্শকের প্রাণ জুড়িয়ে কোটি টাকার ব্যবসা করলো, তখনই চোখ খুলে গেল পশ্চিমবাংলা এবং বাংলাদেশের অনেক প্রযোজক পরিচালকের। কোলকাতার প্রযোজকরা বাংলাদেশ থেকে নায়ক নায়িকা ভাড়া করে তাদের সিনেমায় কোনভাবে যুক্ত করে নিলেন, এমনকি, নাম্বার ওয়ান শাকিব খানের প্রযোজনা সংস্থার দ্বিতীয় ছবিটির গল্প-পরিচালক- শিল্পীও ভাড়া করা। সবার উদ্দেশ্য একই – এদের ঘাড়ে ভর করে বাংলাদেশে বাংলা চলচ্চিত্রের অপেক্ষাকৃত বড় বাজার দখল করা। ঘটনাচক্রে, পরের ঘটনাগুলোতে প্রচুর বাংলা সিনেমাপ্রেমী দর্শক নিশ্চুপ থেকে গেলেন। শাকিব খান-অপু বিশ্বাস-মাহিয়া মাহী ভক্তকূল মুখ খুলতে পারছেন না, কারণ তাদের আইডল নিজেরাও কামিয়ে নিচ্ছেন। আফসোস, মিশা সওদাগরের কোন ভক্তবাহিনী নেই, থাকলে ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ নিয়ে তোলপাড় হতো না।
ঘাড়ে চড়ে ঘরে গিয়ে ঘর দখল নিঃসন্দেহে একটি ভালো বুদ্ধি, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীও মীর জাফরের ঘাড়ে চড়েছিলেন। ঘাড় বাড়িয়ে দিয়ে ঘরে তোলাও ভালো কাজ যদি ঘড়াভর্তি সম্মানী পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে, বাড়িয়ে দেয়া ঘাড় যথেষ্ট মজবুত না হলে ঘাড় ভেঙ্গে মরার সম্ভাবনাও কম নয়। দুই দেশের প্রযোজনায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু উন্নয়ন যে হবে না তা নয় তবে এই উন্নয়ন ‘সাসটেইনেবল’ না হলে ঘাড়-ভেঙ্গে-মরার প্রস্তুতিও থাকা উচিত। শিল্পী বিনিময়ে ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন সাসটেইন করে না, ওটা নিশ্চিত করতে হলে নির্মানগুণের ‘সাসটেইনেবল’ উন্নয়ন নিশ্চিত করা বেশী জরুরী।
দুঃখের বিষয় হল – বাংলাদেশের নির্মাতাগোষ্ঠী এ বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না!