জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ফুটানীবাজার ঘাটে বেশীরভাগ যাত্রী আসে যমুনা নদীর ওইপারে গাইবান্ধা জেলার বালাসী ঘাট থেকে। দিনে তিন তিন ছয় ট্রিপে ছয়-সাতশ লোকের আসা যাওয়া। অটোচালক মোঃ শরীফুল ইসলাম তার অটো চালান ফুটানীবাজার ঘাট থেকে রেলস্টেশন, বা রেলস্টেশন থেকে ইসলামপুরে। অথবা নিজের ইচ্ছেয় কাছে দূরের অন্য কোন রুটে। বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো নিয়ে তার অভিযোগ শুনতে হল।
(জামালপুরের আঞ্চলিক ভাষায়) আগে মাসে বিল দিতাম ৭০০/৮০০ টাকা, এখন দিবো ১৫০০/১৬০০ টাকা। আগে তিনশ (ইউনিট) হলে বাণিজ্য লাইন ছিল, এখন একশ পার হলেই বাণিজ্য। বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, কিন্তু অটোর ভাড়া বাড়ে নাই। ঢাকা শহরে অটো ড্রাইভাররা আন্দোলন করছে, কিন্তু লাভ হয় নাই, ভাড়া বাড়ে নাই। ভাড়া না বাড়লে আমাদের চলবে কিভাবে? বাজার সদাই করা লাগবে না আমাদের?
অটোচালক শরীফুল ইসলাম যে অটো চালায় সেটা তার নিজের কেনা। বছর তিনেক আগে কিনেছিল, দাম উঠে গেছে বেশ আগেই। তখন দাম একটু বাড়তি ছিল – দেড়লাখ টাকায় কিনেছিল অটো। পরে দাম কমেছে, কিন্তু ডিমান্ড বাড়ার কারণে অটোর দাম আবার বেড়ে গিয়ে প্রায় একলাখ ষাট হাজার টাকা। কিন্তু সেগুলোর মান ভালো না, ওগুলোর ব্যাটারী পাল্টাতে হয় ছয় মাসে, আর সে তিন বছরে তিনবার পাল্টেছে ব্যাটারী – প্রতিবারে বারো তেরো হাজার টাকা খরচ।
অটো নিয়ে তার ক্ষোভ গিয়ে সরকারী দল আওয়ামী লীগ পর্যন্ত গড়ালো। অটোর সরকারী কোন রেজিস্ট্রেশন নাই, কিন্তু এলাকায় রেজিষ্ট্রেশন আছে, টাকা পয়সা নিয়ে যে লাইসেন্স দেয় সেটা ভুয়া। প্রতি রুটে আসা যাওয়ায় দশটাকা করে চাঁদা দিতে হয়। ঝুঁকি – অন্যথা হলে কোন অটো থাকবে না, শুধু আওয়ামী লীগের অটো থাকবে। চাঁদাবাজি আর দূর্নীতি করে তারা টাকাওয়ালা হচ্ছে।
আগে যে বিড়ি অর্ধেক খেয়ে বাকীটা কানে গুঁজে রাখতো পরে খাবে বলে, সে এখন বেনসন সিগারেট খায়, বিড়ি না। আগে যার ঘরের অবস্থা ছিল এমন যে খাওয়ার ঘর আর পায়খানার ঘর একসাথে, তার পায়খানায় এখন টাইলস লাগানো।
উপজেলা নির্বাচন হয়েছে কিনা প্রশ্নের উত্তর সরাসরি পাওয়া গেল না।
সকালে বিএনপি আগায়া ছিল পাঁচহাজার ভোটে, বিকেলে আওমিলীগ জিতেছে বারোহাজার ভোটে। বেলা দু’টোর দিকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে – কষ্ট করে ভোটকেন্দ্রে আসার দরকার নাই, আমার ভোট তারা দিয়ে দিয়েছে। কষ্ট করে লোকে সিল দিবে এইজন্য আগের রাতে ব্যালট বাসায় নিয়ে গেছে, সিল মেরে সকালে দিয়ে গেছে। তাহলে কেমন হল ইলেকশন? এটা ইলেকশন নাকি সিলেকশন?
রাজনীতি আমার আগ্রহের বিষয় না, পারতপক্ষে রাজনীতির প্রসঙ্গে কথা বলি না। কিন্তু শরীফুল ইসলামের বোধহয় বেশ আগ্রহ, বিদ্যুতের দাম থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাচন এবং শেষ পর্যন্ত সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের নিন্দা – তার অপছন্দ নয়। বর্তমান সময় সম্পর্কে একজন অটো চালকের ভাবনা কি তা ধরে রাখার আগ্রহে লিখলাম।