১.
বছর কয়েক আগে সুন্দরবনে বেড়াতে যাওয়ার আগ্রহে পাগলামীতে পেয়ে বসেছিল। কোরবানীর ঈদের পরের দিনই ট্রলারে করে সুন্দরবনের ভেতরে দিন পাঁচেকের ট্যুরের প্ল্যান প্রোগ্রাম করে সব ঠিক ঠাক করে ফেলেছিলাম। ঈদের পরেই রাসমেলা শুরু। ট্রলারের পাইলট আল-আমিন সাহেব যাত্রার দিন কয়েক আগে বেঁকে বসলেন। আমাদের বাছাইকৃত দুটো স্পট তিনি চিনেন না – এই অজুহাতে তিনি আমাদের নিয়ে যেতে চাইলেন না, বরং রাসমেলা পর্যন্ত ঘুরে আসার প্রস্তাব দিলেন। মেলার সময় ট্রলার পাইলটদের পোয়াবারো অবস্থা। লং ট্রিপের তুলনায় কয়েকগুন বেশী টাকা কামানো যায় শর্ট ট্রিপে – এই কারণে বেঁকে যাওয়াই স্বাভাবিক। ট্রলার ট্যুর ক্যান্সেল হলেও আমি খুলনা চলে গেলাম – লঞ্চ যাবে, যদি পারি তো উঠে পড়বো। পরেরদিন সকালে সর্বশেষ লঞ্চটা ভ্রমনপিপাসীদের নিয়ে যাত্রা শুরু করবে। ছাদের ডেকে একজনের জায়গা হয়ে যাবে – খরচ পড়বে সাত হাজার টাকা। অথচ আমার হাতে তখন সব মিলিয়েই মাত্র সাত হাজার টাকা। যাত্রা শুরুর আগে কোথাও রাতটি কাটাতে হবে, দুই বেলা খেতে হবে এবং যাত্রা শেষে আবার ঢাকা ফিরতে হবে – ট্যুরে গেলে এর কোনটাই করা সম্ভব না। সীমাবদ্ধতার কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না – সারাদিন খুলনা শহরে ঘুরে ফিরে তারপর বাসায় ফিরে গেলাম।
২.
শীতকালে ব্রক্ষ্মপুত্রের টলটলে স্বচ্ছ পানি ঠান্ডা আর নিস্তরঙ্গ। নদীতে বৈঠার শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। নৌকায় বসে আমরা তিনজন। আধাঘন্টার সেই অসাধারণ ভ্রমণে আমরা আমাদের অতীতের দারিদ্র্য নিয়ে কথা বললাম, আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতার কথা স্মরণ করলাম, আমাদের স্বপ্নগুলোর কথা বললাম, ভবিষ্যতের কথা বললাম। আমরা নতুন ভাবে আবিস্কার করলাম – আমাদের অতীতের সীমাবদ্ধতাগুলো কেটে গিয়েছে বা কেটে যাচ্ছে, কিন্তু নতুন নতুন সীমাবদ্ধতা আমাদের চারপাশের ফাঁকা জায়গাটুকু পূর্ণ করে দিচ্ছে। বর্তমানের সীমাবদ্ধতা আমাদের কুটকুট করে কাটে, যন্ত্রনা বাড়ায়, কিন্তু অতীতের সীমাবদ্ধতাগুলো আমাদের এক ধরনের তৃপ্তি দেয়!
৩.
সীমাবদ্ধতা যন্ত্রনাদায়ক, কিন্তু সীমাবদ্ধতা-পরবর্তী সময়ে সেটা মুখরোচক-তৃপ্তিদায়ক – এই ভরসায় পথ চলা।