১.
রাত দুটো। আমি কম্পিউটারে ডুবে আছি। বারোটার পর নেটে কিছুটা স্পিড পাওয়া যায়। রাতের দুঘন্টায় দিনের প্রায় ছ’ঘন্টার কাজ হয়। হঠাৎ-ই আব্বা ঢুকল রুমে – সেকান্দারের বাবা মারা গেছে! সেকান্দার সাহেব আমাদের প্রতিবেশী – উনার বাবার বয়স আশির মত, হাসপাতালে ছিলেন কদিন ধরে। আমাকে বাসায় রেখে আব্বা-আম্মা চলে গেলেন তাদের বাসায়। গেল জুনের ঘটনা।
২.
অফিস থেকে ফিরে শাওয়ারের নিচে দাড়িয়েছি। নারীকন্ঠের চিৎকার শুনে শাওয়ার কমিয়ে দিলাম। বাসার পাশেই হাসপাতাল – মাঝে মাঝেই সেখানে রোগী মারা যায় – তখন কান্নার শব্দ পাওয়া যায়। এই মহিলা চিৎকার করে বিলাপ করছিল। আমি শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে দাড়িয়ে মহিলার বিলাপ বোঝার চেষ্টা করতে থাকলাম, মিনিট খানেক বাদেই ছন্দটা ধরে ফেললাম।
লা ইলাহা … ইল্লাল্লাহু…. মোহাম্মাদুর…. রাসুলুল্লাহ ….. লা ইলাহা … ইল্লাল্লাহু…. মোহাম্মাদুর…. রাসুলুল্লাহ ….. লা ইলাহা … ইল্লাল্লাহু…. মোহাম্মাদুর…. রাসুলুল্লাহ …..
গতকালকের ঘটনা।
৩.
অফিসে কাজ করছি। জাহিদের ফোন। ‘ভাই গতকাল মিজান ভাইয়ের আম্মা মারা গেছেন জানেন বোধহয়, আমাদের বন্ধু ইমরানের মা’ও গতকাল মারা গেছেন। আমরা সবাই মিলে একবার কোরআন শরীফ খতম করার উদ্যোগ নিছি। আপনাকে ২৫ নম্বার পারাটি পড়তে হবে।’
কত মৃত্যুর খবর পাই। সেলিব্রেটিদের মৃত্যুতে প্রোফাইলে কালো ছবি ঝোলে, এক মিনিট নীরবতা পালন হয়, কফিনে-কবরে ফুলের মালা জমা হয় – কোরআন খতমের খবর পাই না। আমি মারা গেলে কোরআন পড়ার লোক থাকবে তো? আর কেউ না থাক – জাহিদ যেন থাকে সেটা নিশ্চিত করতে এক ঘন্টা সময় ব্যয় করবো আমি।
৪.
কুল্লু নাফসিন যা ইক্বাতুল মউত।
সকল প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।