সার্জিও লিওনির টাইম ট্রিলজি

রেলস্টেশনে কাঠের তৈরী প্লাটফর্ম। অলস বসে তিনটা লোক। একটা মাছি ভন ভন করে গায়ে এসে বসছে বারবার। ছাদ চুয়ে ফোটায় ফোটায় পানি পড়ছে একজনের মাথার হ্যাটে। ঘরঘর করে একটা উইন্ডকল ক্যাচ ক্যাচ করে একঘেয়ে শব্দ করে যাচ্ছে। ভনভন করা মাছিটাকে পিস্তলের নলে চেপে ধরল লোকটা। ভোঁ হুইসেল দিয়ে একটা ট্রেন এসে দাড়ালো প্লাটফর্মে। নড়ে উঠল লোক তিনটে। পিস্তলের নলে আটকে রাখা মাছিটাকে ছেড়ে দিল সে। মাথার হ্যাটে ফোটায় ফোটায় পানি পড়ে যতটুকু জমেছিল এক চুমুকে খেয়ে নিল অন্যজন। অন্যজন হাতটাকে কোমড়ে ঝোলানো হোলস্টারের কাছে নিয়ে গেল। প্রস্তুত তিনজন।

ওয়েস্টার্ন সিনেমায় এ ধরনের দৃশ্য অতি পরিচিত হলে সচেতন দর্শক মাত্র বুঝতে পারবেন এই অংশটুকু সার্জিও লিওনির সিনেমা থেকে নেয়া। আমেরিকার বাহিরে বসে আমেরিকাকেন্দ্রিক সিনেমা নির্মান করার মাধ্যমে স্প্যাগেটি ওয়েস্টার্ন সিনেমাকে মূল ধারায় নিয়ে যাওয়ার একক কৃতিত্ব এই সার্জিও লিওনির। পরিচালিত মোট নয়টি সিনেমার মধ্যে দুটি ট্রিলজি – এর মধ্যে টাইম ট্রিলজি সার্জিও লিওনির বহুমাত্রিক প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করে।

MV5BMTk4Njk5MzY3MV5BMl5BanBnXkFtZTcwMTEyMzE0NA@@._V1._SY314_CR4,0,214,314_সার্জিও লিওনির জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইতালিতে। বাবা এবং মা চলচ্চিত্র নির্মান শিল্পের সাথে জড়িত থাকার সুবাদে মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনিও এই শিল্পের সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫৯ সালে ‘দ্য লাস্ট ডেজ অব পম্পেই’ সিনেমার সাথে তার নাম বেশ ভালোভাবে জড়িত থাকলেও তিনি এর পরিচালক নন এবং এটি তার প্রথম সিনেমা হিসেবে গন্য করাও হয় না। পরিচালক মারিও বনার্ড এর সহকারী হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। কিন্তু নির্মানাধীন সময়ে পরিচালক গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে লিওনি হাল ধরেন এবং সিনেমা শেষ করেন। সিনেমাটির পরিচালক হিসেবে মারিও বনার্ডের নাম প্রচারিত হলেও এই সিনেমা থেকে লব্ধ অভিজ্ঞতা সার্জিও লিওনিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অনেক সহায়তা করে। ১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তার প্রথম সিনেমা ‘দ্য কলোসাস অব রোডস’ এ অভিজ্ঞতারই ফসল। লাস্ট ডেজ অব পম্পেই থেকে তিনি শিখেছিলেন কিভাবে অল্প বাজেটে হলিউডের মত সিনেমা তৈরী করতে হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৪, ১৯৬৫ এবং ১৯৬৬ সালে তিনি পরপর নির্মান করেন ডলার ট্রিলজির তিনটি পর্ব, যথাক্রমে, ‘আ ফিস্টফুল অব ডলারস’, ‘ফর আ ফিউ ডলারস মোর’ এবং ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’।

ড্রলার ট্রিলজির আকাশচুম্বী সাফল্যের পর সার্জিও লিওনি ওয়েস্টার্ন সিনেমা নির্মান থেকে সরে আসতে চেয়েছিলেন। মজার ব্যাপার হল, সার্জিও লিওনি যতগুলো সিনেমা নির্মান করেছেন তার মাত্র দুটি সিনেমা ওয়েস্টার্ণ ধারার নয়। এদের একটি তার প্রথম সিনেমা ‘কলোসাস অব রোডস’ এবং অন্যটি তার শেষ সিনেমা ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’। তার আগ্রহ ছিল হ্যারি গ্রে’র বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য হুড’ অবলম্বনে সিনেমা নির্মান করা কিন্তু প্রযোজকদের কারনে তাকে পিছিয়ে আসতে হয় এবং তিনি ১৯৬৮ সালে মুক্তি দেন তার টাইম ট্রিলজির প্রথম সিনেমা – ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন দ্য ওয়েস্ট। ট্রিলজির বাকী দুটো সিনেমা হল, ১৯৭১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ডাক, ইউ সাকার!’ এবং ১৯৮৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’। তিনটি সিনেমার প্রেক্ষাপট, কাহিনী সম্পূর্ন ভিন্ন ধরনের।

once_upon_a_time_in_the_west‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন দ্য ওয়েস্ট’ সিনেমার প্রেক্ষাপট রুদ্র, রুক্ষ পশ্চিম। বন্দুকবাজেরা কোমরে পিস্তল ঝুলিয়ে ঘোড়ায় চড়ে রাজত্ব করে বেড়ায়। আমেরিকা নামের দেশটি একটু একটু করে গড়ে উঠছে, সভ্যতা আর উন্নতি এগিয়ে চলছে রেললাইন ধরে এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্তে। এমনই এক সময়ে ব্রেট ম্যাকবেইন (Frank Wolff) নামে একজন র‌্যাঞ্চারের কেনা জমি ‘সুইটওয়াটার’ দখল করার চেষ্টা করে রেলরোড টাইকুন মর্টন (Gabriele Ferzetti)। মর্টনের সহযোগী ফ্র্যাঙ্ক (Henry Fonda) কর্তৃক জমির মালিক ম্যাকবেইন ও তার পরিবারের তিন সন্তানকে হত্যা করার দিনেই উপস্থিত হয় তার নববিবাহিত স্ত্রী জিল ম্যাকবেইন (Claudia Cardinale)। ওদিকে একই সময়ে শহরে উপস্থিত হয় একজন নাম পরিচয়হীন লোক, যে কথা বলার পরিবর্তে হারমনিকা বাজাতে বেশী পছন্দ করে। হারমনিকা (Charles Bronson) খুজছে ফ্র্যাঙ্ককে, ম্যাকবেইন পরিবার হত্যার দায়ভার চেপেছে শায়ান (Jason Robards) নামে এক আউট’ল ও তার দলের উপর অথচ হারমনিকা ও শায়ান একত্রিত হয়েছে জিল ম্যাকবেইনকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে, নিহত ব্রেট ম্যাকবেইনের গোপনে লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে।

images (1)ট্রিলজির দ্বিতীয় পর্ব ‘ডাক, ইউ সাকার!’ এ সময় পরিবর্তন হয়ে এগিয়ে আসে অনেকটা দূর।বিষয়বস্তুর কারনে এই পর্বটিকে ‘জাপাটা ওয়েস্টার্ন’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। জাপাটা ওয়েস্টার্ন সিনেমার বৈশিষ্ট্য অনুসারে এই সিনেমার কাহিনী আমেরিকা থেকে সরে আসে মেক্সিকোতে, বিপ্লবকালীন সময়ে। সময়টা ১৯১৩ সালে। ঘোড়ায় টানা স্টেজকোচ চলে, চলে মোটরসাইকেল। ভারী মেশিন গান নিয়ে চার চাকার সামরিক যানও চলে। হুয়ান (Rod Steiger) নামের এক দস্যু, তার বাহিনী গঠিত তার বৃদ্ধ বাবা আর সন্তানদের নিয়ে, একটা সফল স্টেজকোচ ডাকাতির পরে পরিচয় হয় জন মোলারি (James Coburn) নামের এক এক্সপ্লোসিভস এক্সপার্টের সাথে। তাকে নিয়ে একটি ব্যাংক ডাকাতির স্বপ্নে বিভোর হুয়ান যোগ দেয় জনের সাথে। চতুর বিপ্লবী জন হুয়ানকে কাজে লাগিয়ে বিপ্লবের জন্য কাজ করে যায়, আর নিজের অজান্তেই হুয়ান হয়ে উঠে বিপ্লবীদের নায়ক।

‘ডাক, ইউ সাকার’ সিনেমার নামটি টাইম ট্রিলজির সাথে ঠিক খাপ খায় না। নামকরণের এই সিদ্ধান্ত প্রযোজকদের। আরও দুটো নাম পাওয়া যায় এই সিনেমার – একটি ডলার ট্রিলজির প্রথম পর্বের সাথে মিল রেখে ‘আ ফিস্টফুল অব ডায়নামাইটস’ এবং অন্যটি টাইম ট্রিলজির সাথে মিল রেখে ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম … দ্য রিভল্যুশন’। লিওনির এই সিনেমাটা সম্ভবত তার সকল সিনেমার মধ্যে সবচে বেশী ‘ওভারলুকড’ এবং ‘আন্ডাররেটেড’। ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন দ্য ওয়েস্ট’ সিনেমার কাহিনী সম্পূর্নই কাল্পনিক, যে শহরকে ঘিরে গল্প বাস্তবে তার কোন উপস্থিতি নেই কিন্তু ‘ডাক, ইউ সাকার’ সিনেমার কাহিনীর সময় ও স্থান চিহ্নিত করা যায় খুব সহজে। কিছু ঐতিহাসিক চরিত্রও এখানে সামান্য পরিমানে উপস্থিত হয়েছে। মেক্সিকোর সেই বিপ্লবের ভয়াবহতা, বিপ্লবের স্ট্রাটেজি এবং বিপ্লবের সাথে জড়িত লোকজনের ধরন সম্পর্কে ভালো ধারনা পাওয়া যায় এই সিনেমা থেকে।

imagesটাইম ট্রিলজির তৃতীয় পর্বে সময়ের আবারও পরিবর্তন। এবার, খোদ আমেরিকায় এবং দীর্ঘ চল্লিশ বছরের গল্প। সিনেমার কাহিনী বুঝতে হলে জানতে হবে সে সময় সম্পর্কে, জানতে হবে ‘প্রহিবিশন’ সম্পর্কে। ১৯২০ সালে আমেরিকান সরকার সংবিধানে পরিবর্তনের মাধ্যমে অ্যালকোহলের বিক্রি, উৎপাদন এবং পরিবহন নিষিদ্ধ করে। ১৯৩৩ এ আবার সংশোধন করার মাধ্যমে এই আইন বাতিল করার আগে অপরাধ জগতে অবৈধভাবে অ্যালকোহল আমদানী ও বিক্রি নিয়ে বিশাল কারবার গড়ে উঠে। প্রহিবিশন সময়ে জুইশ ঘেটোতে পাঁচজন কিশোর একত্রিত হয়ে নিজেদের একটি দল গড়ে তোলে, নেতৃত্বে নুডলস (Robert De Niro) এবং ম্যাক্স (James Woods)। কিন্তু দল গড়ে তোলার পরপরই ঘটনাচক্রে নুডলসকে চলে জেলে যেতে হয়। বের হয়ে দেখে তার অবর্তমানে বন্ধুরা বেশ বড় ব্যবসা তৈরী করে নিয়েছে। প্রহিবিশন সময় শেষ হয়ে যাওয়ার ত্রিশ বছর পরে আবার সেই শহরে ফিরে আসে নুডলস, অচেনা এক মি: বেইলির আমন্ত্রনে। ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগেরকার স্মৃতি ভেসে উঠে চোখের সামনে। একটা অসমাপ্ত রহস্যের সমাধানের চেষ্টা করে নুডলস।

টাইম ট্রিলজির এই তৃতীয় পর্ব ট্রিলজির বাকী দুই পর্ব থেকে সম্পূর্ন ভিন্নতর। এটি একটি বিশালাকৃতির মহাকাব্য হয়ে উঠেছে। ‘ইন দ্যা ওয়েস্ট’ এবং ‘ডাক, ইউ সাকার!’ তিনটি সিনেমায়ই যা পাওয়া যাবে তা হল অতীত আর বর্তমানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন মিশ্রন। ‘ইন দ্য ওয়েস্ট’-এ হারমনিকা ফ্র্যাঙ্ককে খুজে বেড়ায় কারণ পুরানো একটি ঘটনার সাথে জড়িত ফ্র্যাঙ্ক। ‘ডাক, ইউ সাকার!’ এ বিপ্লবী জনও তার অতীতের একটি নির্দিষ্ট ঘটনার সাথে মিল খুজে পায়, এবং, তার কর্মপন্থায় কোন পার্থক্য ঘটে না। ‘ইন আমেরিকা’য় পুরা ঘটনাই অতীত আর বর্তমানে ঘুরে ফিরে চলে। প্রত্যেকটি ঘটনাই এখানে অতীতের সাথে কোন না কোন সূত্রে বাধা।

once-upon-a-time-in-america

তিনটি সিনেমাকে এক সূত্রে বাধতে পারে ‘আমেরিকা’। ইন দ্য ওয়েস্ট-এর ঘটনাপ্রবাহ আমেরিকার রুক্ষ অঞ্চলে, মাঝের পর্ব ‘ডাক, ইউ সাকার!’ এ দস্যু হুয়ানের স্বপ্নই থাকে আমেরিকায় পৌছে যাওয়া। সেখানে অনেক টাকা, অনেক ব্যাংক। ডাকাতি করে ভালোই টিকে থাকতে পারবে সে। আর, তৃতীয় পর্বে আমেরিকার অন্ধকার জগতে বন্ধুত্বের মত আলোকিত একটা বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে। ইতালির পরিচালক সার্জিও লিওনি-র আমেরিকার প্রতি কোন আলাদা আকর্ষন ছিল কিনা জানি না, তবে তার নয়টি সিনেমার ছয়টিরই বিষয়বস্তু আমেরিকাকেন্দ্রিক বলে জানা গেছে। শোনা যায়, তিনি এই ছয়টি সিনেমা নির্মানে আমেরিকায় এসেছিলেন একবারই এবং তার সবগুলো সিনেমাই আমেরিকার বাহিরে নির্মিত। স্প্যাগেটি ওয়েস্টার্ন (যে ওয়েস্টার্ন সিনেমাগুলো আমেরিকার বাহিরে বিশেষত ইতালিতে তৈরী হয়, স্বল্প বাজেটে নির্মিত সিনেমাগুলোর কাহিনী আমেরিকা কেন্দ্রিক) ধারার সিনেমাকে মূলধারায় প্রতিস্থাপন করার ক্রেডিট সার্জিও লিওনি-কেই দেয়া যায়।

টাইম ট্রিলজির দৈর্ঘ্য নিয়েও লিওনিকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল। ‘ইন দ্য ওয়েস্ট’ সিনেমার মূল দৈর্ঘ্য ছিল দুই ঘন্টা ৪৫ মিনিট। কিন্তু আমেরিকায় মুক্তির সময় ছোট করে দুই ঘন্টা পঁচিশ মিনিটে নিয়ে আসা হয়, ফলে সিনেমাটি ফ্লপ করে। পরবর্তীতে অবশ্য আসল দৈঘ্যেই মুক্তি দেয়া হয়। আবার, ‘ইন আমেরিকা’ সিনেমার মূল দৈর্ঘ্য চার ঘন্টা ঊনত্রিশ মিনিট, পরবর্তীতে লিওনি নিজেই প্রদর্শকদের সুবিধার জন্য কেটে তিন ঘন্টা উনপঞ্চাশ মিনিটে নিয়ে আসেন। কিন্তু এই একই সিনেমাকে কেটে ছেটে, গল্পের বর্ণনাভঙ্গিকে পাল্টে আমেরিকান ভার্সনে মাত্র দুই ঘন্টা উনিশ মিনিটে নিয়ে আসা হয়। ‘ডাক, ইউ সাকার!’ এদিক থেকে সৌভাগ্যবান, আমেরিকান কাঁচি থেকে মুক্তি পেয়েছিল।

tumblr_lzjj5fvJkQ1qisxvio1_1280
ডাক, ইউ সাকার! ছবির সেটে

মাত্র নয়টি সিনেমা নির্মান করেছিলেন সার্জিও লিওনি, তার মধ্যে দুটো ট্রিলজি। এক টাইম ট্রিলজি দেখলেই সার্জিও লিওনির সিনেমা নির্মান সংক্রান্ত যাবতীয় মুন্সিয়ানা সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া যায়। তার নির্মানে আকিরা কুরোসাওয়া এবং জন ফোর্ডের প্রভাবকে স্বীকার করলেও সার্জিও লিওনি নিজেই এক স্টাইল তৈরী করেছিলেন। এক্সট্রিম ক্লোজআপের সাথেই লংশটের মিশেল, এক্সট্রিম ওয়াইড শট, লম্বা সময়ের শট এবং ইনডেপথ কম্পোজিশন। এছাড়া সময়কে স্থির করে দেয়ার পদ্ধতিও জানা ছিল তার – ‘ইন দ্য ওয়েস্ট’ সিনেমায় এর উদাহরণ স্পষ্ট। পৌনে তিনঘন্টার এই সিনেমাটিকে সাম্প্রতিক কালের যে কোন পরিচালক দুই ঘন্টার মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে ফেলবেন। কিন্তু অ্যাকশন দৃশ্যের পূর্বে একটু একটু করে ঝড়ের পূর্ব-পরিবেশ তৈরী করায় লিওনি এতটাই দক্ষ ছিলেন যে তার সিনেমাগুলো কখনোই দীর্ঘ মনে হয় নি, বিরক্তিকরও নয়।

কেন বিরক্তিকর নয় তা খুঁজতে গেলে আপনি পেয়ে যাবেন এনি মরিকনকে (Ennio Morricone), সার্জিও লিওনির প্রায় সব সিনেমার সঙ্গীতে এই মানুষটি। বন্ধুত্ব তাদের দুজনকে একত্রিত করে অসাধারন সব মিউজিক তৈরী করতে সাহায্য করেছে। টাইম ট্রিলজির তিনটি সিনেমার মিউজিকই মরিকনের সৃষ্টি, দর্শককে ছবির সাথে বেধে ফেলার জন্য এই সঙ্গীত খুবই গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।

‘ইন আমেরিকা’ মুক্তির তিন বছরের মধ্যেই সার্জিও লিওনি এই পৃথিবীর সেট থেকে বিদায় নেন। মাত্র নয়টি সিনেমা তৈরী করেছিলেন এই গুনী নির্মাতা। কিন্তু এই নয়টি সিনেমার মাধ্যমে তিনি যে আলাদা নিজস্ব স্টাইল তৈরী করে গেছেন তা প্রভাবিত করেছে বর্তমান সময়ের অনেক পরিচালককে – কোয়েন্টিন টরান্টিনো এবং স্টিভেন স্পিলবার্গ তাদের অন্যতম। টারান্টিনো তো বলেই ফেলেছেন – লিওনির মত পরিচালক বোধহয় তার কখনো হওয়া হবে না। হ্যাটস অফ টু সার্জিও লিওনি – দ্য গ্রেট ডিরেক্টর।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার

এই পোস্টে যা সব তথ্য তার সবটিই ইন্টারনেট ঘেটে বের করা হয়েছে। লিখেছিলাম প্রায় পাঁচ মাস আগে, এখন সূত্র উল্লেখ করতে পারছি না। দুঃখিত।
এই লেখার জন্য দুজন মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ। একজন কাঊসার রুশো ভাই। টাইম ট্রিলজি নিয়ে আমি মোট চারবার লেখা শুরু করেছি, তিনবার লেখা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর একবার শেষ করতে পেরেছি। পর পর দুবার লেখা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু রুশো ভাই বিভিন্ন সময়ে এই লেখাটা শেষ করার তাগাদা দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, প্রথমবার চেষ্টা করার প্রায় দেড় বছর বাদে সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র সংসদ কর্মী শাহ ফাতেমা সুলতানা অ্যানী-র অনুরোধে তাদের পত্রিকায় প্রকাশের জন্য এই লেখাটি শুরু করেছিলাম। নানা জটিলতার কারণে শেষ পর্যন্ত পত্রিকাটি প্রকাশিত না হওয়ায় সে বিব্রত। রুশো ভাইয়ের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা, অ্যানীর জন্য শুভকামনা।  

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

9 Comments on “সার্জিও লিওনির টাইম ট্রিলজি”

  1. অতি তথ্যবহুল উত্তম একটা আর্টিকেল। এর আগে আপনার চায়নাটাউন চলচ্চিত্রের রিভিউ ব্যাপকভাবে মনে ধরেছিলো। এবারে টাইম ট্রিলজি মনে গেথে গেলো।
    এতটা পরিশ্রমের জন্য স্যালুট বস। 🙂

  2. চমৎকার তথ্যবহুল লেখা। ভালো লাগলো। ডাক, ইউ সাকার দেখা হয়নি। দেখে ফেলবো।

  3. ভাল হইসে, বস। দ্যা গুড, দ্যা ব্যাড অ্যান্ড দ্যা আগলি নিয়েও কিছু লিখতেন, জ্ঞান বৃদ্ধি পাইত, যদিও টাইম ট্রিলজির বাইরে!

    1. ধন্যবাদ যান্ত্রিক দৃক। গুড-ব্যাড-আগলি নিয়া তো সবাই জানে, তাই এই ছবি নিয়ে লেখা হয় নি।
      দেখা যাক, যদি কখনো মনে করি, লেখা দরকার, তাহলে লিখে ফেলবো- তবে সে সম্ভাবনা একটু কমই 🙂
      ভালো থাকুন সবসময় 🙂

  4. ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন ওয়েস্ট সিনেমার ট্র্যাকগুলো চালিয়ে আপনার লেখাটা পড়া শুরু করেছিলাম। অতি উত্তম লেখা।

    লিওনির সিনেমাগুলো কখনোই দীর্ঘ মনে হয় নি আমার কাছে, বিরক্ত লাগার প্রশ্নই উঠেনা।।
    আর Ennio Morricone কে স্পেশাল থ্যাংকস। অদ্ভূত সুন্দর মিউজিক

    অনেক ধন্যবাদ

  5. দাদা, অসাধারন লেখার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আগে ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’ মুভি দেখেছিলাম। তখনই এর কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। এখন আপনার মূল্যবান আর্টিকেল পড়ে বাকি কাজগুলো দেখার ভীষণ ইচ্ছা জেগেছে।
    কিন্তু, সমস্যায় পড়েছি। আমি মূলত extratorrent.com , kat.ph ও thepiratebay.se থেকে মুভি ডাউনলোড করি। কিন্তু, কেন জানি ডলার ট্রিলজির মুভিগুলা ডাউনলোড করতে পারলেও টাইম ট্রিলজির প্রথম দুইটা মুভি কিছুতেই এই সাইটগুলা থেকে ডাউনলোড করতে পারছি না।
    আপনি কি একটু কষ্ট করে ভাল কোন সাইটের সন্ধান দিতে পারেন? উপকার হয়।
    [বিঃদ্রঃ আমি utorrent সফটওয়্যার দিয়ে ডাউনলোড করি।]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *