এক্সরসিজম মুভিকে হরর মুভি বলতে আমার একটু আপত্তি আছে। এক্সরসিজম মুভিগুলো মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলা করে। মানুষের উপর খারাপ কিছু প্রভাব বিস্তার করে বা করতে পারে এবং তা অন্য কিছু মানুষ তাদের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা দ্বারা দূর করতে পারেন – এটা মানুষের চিরন্তন বিশ্বাস। একে টলানো সম্ভব কিন্তু উপড়ে ফেলা সম্ভব না। তাছাড়া, এর ব্যাখ্যায় বিজ্ঞান সবসময় সফলতা অর্জন করতে পারে নি, ফলে বিজ্ঞানকেই একমাত্র গ্রহণযোগ্য হিসেবে গ্রহন করা হয়ে উঠে না। সবচে’ বড় কথা হলো, বিশ্বাস কোন বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে তৈরী হয় না, বিশ্বাস বিশ্বাসই, বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা নয়।
একটা এক্সরসিজম কালেকশন থেকে চারটি এক্সরসিজম মুভি দেখলাম, তার তিনটি নিয়েই এই পোস্ট।
দ্য এক্সরসিস্টের বিশাল সাফল্যের পরে ১৯৭৭ সালে দ্য এক্সরসিস্ট টু: দ্য হেরেটিক নির্মান করা হয়, অবশ্য পরিচালক পাল্টে গেছেন এখানে যদিও প্রথম পর্বের রিগ্যান চরিত্রে রূপদানকারী লিন্ডা ব্লেয়ার বয়সে কিছুটা বেড়ে গিয়ে একই চরিত্রে অভিনয় করেন।
প্রথম পর্বের সাথে মিল রেখে এ পর্বে ফাদার মেরিনের হত্যা এবং অন্যান্য বিষয়ে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয় ফিলিপ লেমন্ট নামের এক প্রিস্টের উপরে। তিনি যোগাযোগ করেন রিগ্যানের সাথে যে নিয়মিত ভাবে সাইক্রিয়াটিস্ট ড: জেন টাস্কিনের তত্ত্বাবধানে চিকিৱসাধীন। বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে এখন দুজন মানুষ একই ব্রেনওয়েভে সংযুক্ত হতে পারে এবং একজনের চিন্তাভাবনা অন্যজন বুঝতে পারে। রিগ্যানের মাধ্যমেই প্রিস্ট লেমন্ট চেষ্টা করে যান পাজুজু নামের শয়তানের সাথে ফাদার মেরিনের যোগাযোগ উদ্ধারের কাজে।
এই এক্সরসিজম মুভিটা কি পরিমান ব্যর্থ হয়েছে তার একটা নমুনা পাওয়া যায় আইএমডিবি রেটিং দেখে। পরিচালক জন বুরম্যান এক্সরসিস্ট প্রথম পর্বকে ছাপিয়ে যাওয়ার মতো কিছুই করতে পারেন নি।
এমিলি রোজ নামের এক ১৯ বছর বয়সী মেয়েকে একটি নয়, ছয় ছয়টি ডেমন আক্রমন করে, তার মধ্যে বাসা বাঁধে, এদের মধ্যে একজন লুসিফার নিজে। ডাক্তারী চিকিৎসা শুরু হয়েছিল কিন্তু তাতে প্রভাব কাটেনি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজ বাড়িতে চলে আসে এমিলি আর এক্সরসিজম করার দায়িত্ব নেন ফাদার রিচার্ড মুর। প্রথমবার এক্সরসিজমে ব্যর্থ হন ফাদার। দ্বিতীয়বার করার সুযোগ পান নি তার আগেই ডেমনরা এমিলিকে হত্যা করে। পুলিশ ধরে নিয়ে যায় ফাদার মুরকে। কারণ তার প্ররোচনাই এমিলিকে মেডিকেশন থেকে দূরে রেখেছে যা তাকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে দিয়েছে।
ডেমনের আক্রমন নয় বরং সাইকিয়াট্রিক এপিলেপ্সিতে ভুগছিল এমিলি আর তাই ফাদার মুর হত্যাকারী – এমন দাবীতে তার বিচার শুরু হয়। ফাদার মুরের পক্ষে তরুন উদীয়মান আইনজীবি এরিন ব্রুনার।ফাদার মুর এক শর্তেই আইনজীবিকে সহায়তা করবেন যদি তিনি তাকে সবার সামনে এমিলি রোজের কি ঘটেছিল তা বর্ননা করার সুযোগ করে দেন। বিজ্ঞান আর বিশ্বাস – এই দ্বন্দ্বে পরিপূর্ন একটি হরর কোর্টরুম ড্রামা দ্য এক্সরসিজম অব এমিলি রোজ।
২০০৫ এ মুক্তিপ্রাপ্ত এই এক্সরসিজম মুভির পরিচালক স্কট ডেরিকসন। এই সিনেমাটিও সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। সিনেমাটা যতটা হরর তারচে’ অনেক বেশী কোর্টরুম ড্রামা। ফ্লাশব্যাকের মাধ্যমে সিনেমাটার কাহিনী বর্নিত। এমিলি রোজ চরিত্রে জেনিফার কার্পেন্টার অনবদ্য অভিনয় করেছেন। সিনেমাটি দর্শকপ্রিয়, ক্রিটিকদর সেরা তালিকায়্ও এর অবস্থান দেখা যায়। দেখলে ঠকবেন না আশা করি।
রেভারেন্ড কটন মার্কাস প্রোডিউসার ডিরেক্টর আইরিস এবং ক্যামেরাম্যান ড্যানিয়েলের সাথে মিলে একটি ডকুমন্টোরীর আয়োজন করেন – উদ্দেশ্য এক্সরসিজম যে ভাওতাবাজী সেটা সবার সামনে তুলে ধরা, যদিও তিনি নিজেই এক্সরসিজম করেন।
আবালাম নামের এক শক্তিশালী ডেমন একজন কৃষকের মেয়ে নেল-র মধ্যে বাসা বেধেছে যা এক্সরসিজমের মাধ্যমে দূর করতে হবে – এরকম আহবানে ডকুমেন্টারী টিম নিয়ে কান্ট্রিসাইডে গেলেন কটন মার্কাস। নেল এম্নিতে স্বাভাবিক মেয়ে, কিন্তু ঘুমের মধ্যে সে যা করে তা বেশ ভয়ানক, রক্তারক্তি কান্ড। রেভারেন্ড কটন মার্কাস একটি লোকদেখানো এক্সরসিজম করে বেশ টাকা পয়সা কামিয়ে বাড়ি ফেরার সময় একটি মোটেলে রাত কাটান, কিন্তু অযাচিতভাবে গভীর রাতে সেখানে হাজির হয় নেল।
ডেমনের আক্রমন নয় বরং শারীরিক সমস্যা – এমনটা প্রমানের জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে পরীক্ষা করার পরে জানা গেল, নেল প্রেগনেন্ট। তার বাবার বিশ্বাস ডেমনের সন্তান নেল এর গর্ভে, আরেকটা এক্সরসিজম করতে বাধ্য করলেন তিনি ফাদার কটনকে। এক্সরসিজমকে বানোয়াট প্রমাণ করতে এসে রেভারেন্ড দেখলেন তিনি নিজেও ডেমনের শিকারে পরিণত হতে যাচ্ছেন, জানটা খোয়াতে হবে হয়তো অচিরেই। এই হুমকী থেকে বাদ পড়েনি আইরিস আর ড্যানিয়েল নিজেও।
২০১০ সালেই মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটি। আইএমডিবি রেটিং যদিও বেশ কম এবং হতাশাজনক, আমার কাছে বেশ ভালোই লেগেছে। কারণটি আর কিছুই নয় – গল্প বলার ঢং। পুরো সিনেমাটিই ডকুমেন্টারী টিমের ড্যানিয়েলের ক্যামেরায় ধারণকৃত। ডকুমেন্টারীর ফ্লেভার পুরো সিনেমাতেই। পরিচালক ড্যানিয়েল স্ট্যাম খুব পরিচিত কেউ নন, এটা তার দ্বিতীয় পরিচালনা। নেল চরিত্রে অ্যাশলে বেল্ও তেমন পরিচিত নন, তবে ডেমনের আক্রমনে শারীরিক পরিবর্তনের কাজটি বেশ দারুন করেছেন।
The Exorcism of Emily Rose যে মেয়েটার কাহিনির উপর বেস করে নির্মিত, Anneliese Michel, তার এক্সরসিজম চলাকালীন একটা অডিও ইউটিউবে খুঁজে পেলাম। মুভিটা থেকে তো আমার কাছে এটাই বেশি ভয়ংকর মনে হল!
একদেখা যেতে পারে, খুব একটা ঠকবেন না হয়তো।
এ ধরনের মুভিই খোজছিলাম। বিখ্যাত হরর মুভিগুলোর অনেকগুলোই দেখে ফেলেছি, দেখতে মজা লাগে। আমার বউ রে পাশে নিয়ে দেখলে তো আরও মজা, ভয়ে মরেই যায়, তিনচারদিন তার এই ভয় থেকে যায়!
ইয়ে রন্টিদা, আমরা কিন্তু ব্যাচেলর – আমাদের মনে কষ্ট দেয়ার আগে আরেকবার ভেবে দেখবেন 😉
হ্যাপী মুভি টাইম 🙂
হা হা হা ………………… ভালো বলছেন নাজমুল ভাই । 😉
আর যা লিখছেন ভালোই লাগলো ………………….।
কিন্তু ” THE EXORCIST ” এর নাম নাই কেন !!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! ?
যে ৪ টা মুভি দেখছেন তাদের মধ্যে ওইটাই বেষ্ট আমার মতে…….. 🙂
আর রেটিং এর সাথে ডাউনলোড লিন্ক দিলে আরও ভালো হত ……… :(।
যদিও নেট এ সার্চ করলে ডাউনলোড লিন্ক পাওয়া যাবে । কিন্তু একসাথে আপনার রিভিউ + IMDb রেটিং + ডাউনলোড লিন্ক পেলে আরও অনেক ভালো লাগবে……… ।
তাই ১ টা অনুরোধ আপনি মুভি রিভিউ দেয়ার সময় এর IMDb এর লিন্ক এর সাথে কষ্ট করে ডাউনলোড লিন্কটা ও দেয়ার চেষ্টা কইরেন ………….. 🙂 ।
মাইন্ড খাইয়েন না আবার…………… 😉 ।
ধন্যবাদ…………………….।
এক্সরসিস্ট নিয়ে আলাদা পোস্ট আছে, তাই এক্সরসিস্টের নাম নাই।
http://www.darashiko.com/2011/03/the-exorcist-scariest-movie/
এই হলো সেই পোস্টের লিংক।
এইসব লিংক ফিংক দেয়া বহু ঝামেলা, ইচ্ছা করে না 🙁
আরটা ভুল এ লিখে ফেলছি বাদ দিয়া পইরেন……………….. 😉 ।