যে শহর চোরাবালি: পথ শিশুদের নিয়ে ডিজিটাল ফিল্ম

বাংলাদেশে এখন ডিজিটাল সিনেমার প্রচলন হচ্ছে। কম বাজেটে ভালো গল্প আর উন্নত ইমেজ – ডিজিটাল সিনেমার কোন বিকল্প নাই। তাই ডিজিটাল সিনেমার সংখ্যাও বাড়ছে। যে শহর চোরাবালি একটি ডিজিটাল সিনেমা।

কয়েকদিন আগেই টিএসসি মিলনায়তনে তিনদিন ব্যাপী এর শো হয়ে গেল। তার পর আবার দুদিন ব্যাপী শো হল এ মাসেই। ব্যপক উৎসাহ নিয়ে দেখতে গেলাম। ভালোই লাগল।

বরিশাল থেকে ঢাকায় আসা রাজু তার টাকা পয়সা হারিয়ে দিশেহারা। এই শহরের সব কিছুই আকর্ষনীয় কিন্তু পকেট ফাকা থাকলে সব ফাকা। খাতির হয়ে যায় আরও দুই জন টোকাই এর সাথে । তারা রাজুকে নিয়ে যায় ইয়াসিন মামুর কাছে যে দৈনিক ২৫-৩০ টাকা উপার্জনের সহজ রাস্তা দেখিয়ে দিতে পারে। কাজ খুব কঠিন নয়, একটি ব্যাগে করে অষূধের বোতল পৌছে দিতে হবে বিভিন্ন জায়গায়।

একই সময় ঘটে আরও একটি ঘটনা। রমনা চাইনিজের সামনের ওভারব্রিজের উপর অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায় একটি যুবতী মেয়েকে। এখানেও ইয়াসিন মামু, সাথে দেহপসারিনী মরিয়ম। নতুন ফন্দি আটেঁ দুজনে। কিন্তু পুলিশ এসে নিয়ে যায় মেয়েটিকে। ইয়াসিন তাকে ছাড়িয়ে আনে। অপরাধ জগতের সর্দার ইয়াসিন মামু যুবতী মেয়ে খুকু আর রাজুকে নিয়ে তার ব্যবসার পরিধি আরেকটু বাড়ায়।

এদিকে মরিয়ম তার খদ্দের এর ভালোবাসার আহবানকে উপেক্ষা করতে পারে না, তাই পরিকল্পনা করে দুজনে মিলে পালাবার। কিন্তু ইয়াসিন কি এত সহজে তার ব্যবসার পন্যকে হাত ছাড়া করবে?

শহুরে দর্শকদের জন্য নির্মিত যে শহর চোরাবালি। ইংরেজিতে The whirlpool। আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে উচ্চসুরের আবহ সঙগীত শহুরে লোকদের জন্যই। তাই বলে প্রয়োগ কিন্তু খারাপ হয়নি। অবশ্য কোথাও কোথাও সংগীতের প্রকট চিৎকার যন্ত্রনার সৃষ্টিও করেছে। ভালো হয়েছে চিত্রায়ন। ইমেজগুলো আর ফ্রেম অসাধারণ। লাইটে খুব যত্ন নিয়েছেন বোঝাই যায়। তাই বলে কিছু সমস্যাও রয়ে গেছে।

গল্পের অনাবশ্যক বিস্তৃতি লক্ষ্যনীয়। খুকুকে নিয়ে শহীদুল আলম সাচ্চুর সিকোয়েন্সটি শুধু বাহুল্যই নয়, অপ্রয়োজনীয়ও বটে। ধর্ষনের কত সময় পরে প্রেগন্যান্সির লক্ষন প্রকাশিত হয় সে ব্যাপারে বোধহয় আরেকটু সতর্কতার প্রয়োজন ছিল। কিছু রসিকতার ব্যবহার লক্ষ্যনীয় যা খুব একটা ভালো হয় নাই, বরং জোর করে হাসানোর চেষ্টা মাত্র।

ইয়াসিন মামুর চরিত্রে আশীষ খন্দকার বেশ ভাল অভিনয় করেছেন কিন্তু বাকীদের অভিনয় খুব একটা প্রভাবশালী নয়। লোকেশন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন পবিচালক শুভাশিষ রায়। আর বাসের ভিতবে খুনের দৃশ্যটা রোমহর্ষক।

নতুন দিনের সিনেমাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য যে শহর চোরাবালি দেখা আবশ্যক।

ফেসবুকে দেখতে পারেন এ ব্যাপারে

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

2 Comments on “যে শহর চোরাবালি: পথ শিশুদের নিয়ে ডিজিটাল ফিল্ম”

    1. দিলেন তো ক্যাচাল লাগায়া। আমি টিএসসি তে দেখছিলাম, ডিইউএফএস এই ফিল্মটার প্রিমিয়ার পার্টনার ছিল। কোন একটা এনজিও এর প্রোডিউসার, নাম মনে করতে পারছি না। এই দুজনের সাথে যোগাযোগ করলে জানা যেতে পারে। অথবা ফেসবুক পেইজে ক্রিয়েটরকে একটা মেসেজ করে দেখুন – তিন এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারবেন। আশা করছি – একটা ডিভিডি পেয়ে যাবেন 🙂

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *