সময় বাকী পনেরো দিনেরও কম। এই মার্চের ২২/২৩ তারিখ থেকে শুরু হবে পবিত্র রমজান মাস। অনেকে এর মধ্যেই রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করে দিয়েছেন। বিশেষতঃ বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ ব্যবসায়ীরা বরাবরের মতই গলাকাটার প্রস্তুতি নিয়েছেন, অন্যদিকে গলা বাঁচাতে অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল লোকজন রমজানের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী কিনে রাখছেন। আধ্যাত্মিক পূর্ণতা লাভে সহায়তার জন্য নানা ধরণের সভা-সেমিনার, আলোচনা-বক্তৃতা, ওয়াজ ইত্যাদি শুরু হয়েছে, আগ্রহীরাও সেগুলো থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য অংশগ্রহণ করছেন বা ইচ্ছা করছেন। ব্যক্তিগত পর্যায়েও প্রস্তুতি চলছে – ইবাদতের পরিমাণ বাড়াচ্ছে। আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি রমজানের সামাজিক প্রস্তুতিও গ্রহণ করা যেতে পারে। কিছু আইডিয়া দিচ্ছি।
সামাজিক কাজে রমজানের প্রস্তুতি
ইফতার করানো
রোজাদারকে ইফতার করানো একটি উত্তম কাজ। কিভাবে বেশি মানুষকে ইফতার করানো যায় সেই উপায় খুঁজে নেয়া যেতে পারে। অনেক মসজিদে ইফতার আয়োজন করে, সেখানে অংশগ্রহণ করা যেতে পারে। যারা ব্যাচেলর বা মেসে থাকেন, তারা সেখানে বাকীদের ইফতার করানোর উদ্যোগ নিতে পারেন। একদিনের বড় আয়োজনের চেয়ে নিয়মিতভাবে ছোট আয়োজন করলে উপকার বেশি পাওয়া যাবে মনে হয়।
খাদ্য সহায়তা
ইফতার করানো ছাড়াও খাদ্য সহায়তা দেয়া আরেকটি উত্তম কাজ। এ বছর খাবারের দাম যেহেতু বাড়তি, তাই এটাও খুব ফলপ্রসূ হতে পারে৷ সামর্থ্য অনুযায়ী ইফতার বা অন্যান্য খাবারের একটা প্যাকেজ চিন্তা করে নিন, তারপর আত্মীয় স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে যারা অপেক্ষাকৃত দরিদ্র, তাদেরকে উপহার হিসেবে দিন। এই দুর্মূল্যের বাজারে উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী পেলে নিশ্চয়ই খুশি হবেন তারা।
অনগ্রসরকে সহযোগিতা করা
আমাদের বন্ধু ও আত্মীয়দের মধ্যে কিছু মানুষ থাকে যারা আধ্যাত্মিকভাবে অনগ্রসর। হয়তো নিয়মিত নামাজ পড়ে না অথবা পড়লেও অন্য দিকে ঘাটতি আছে। রমজানের আগে থেকেই তাদেরকে রমজানের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য উৎসাহিত করা, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা ও খোঁজ খবর নেয়া শুরু করা যেতে পারে। যে কোন কাজেই সঙ্গী থাকলে ভালো ফল পাওয়া যায়। আমরা যদি ভালো মুসলমান হবার ক্ষেত্রে তার সহযোগী হতে পারি, তাহলে হয়তো সেও নিয়মিত হবে।
যাকাত
ইসলামের একটি আর্থিক ইবাদত হলো যাকাত। রমজান মাসেই সাধারণত সকলে যাকাত হিসাব ও আদায় করে থাকে। রমজান মাস আসার আগেই তাই যাকাত হিসাবায়ন এবং আদায়ের বিষয়ে প্রস্তুতি নেয়া যেতে পারে। যাদেরকে যাকাত দেয়া যেতে পারে তাদেরকে আগে থেকেই চিহ্নিত করা, যারা যাকাত দেয়ার মতো স্বছল তাদেরকেও উৎসাহিত করা গেলে সঠিকভাবে আদায় এবং ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব। এ বিষয়ে দুটি লেখা পড়তে পারেন: আয়কর দিলে যাকাত দিতে হবে কি এবং ঋণের যাকাত দেয়া না দেয়া বিষয়ে।
তহবিল গঠন
এই আইডিয়াটা সবার জন্য সম্ভব হবে না হয়তো। যারা একটু বড় প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এবং যেখানে কিছুদিন পরপর কর্মী ও তাদের আত্মীয় স্বজনের সহায়তার জন্য চাঁদা তুলতে হয়, তারা এই উদ্যোগটি নিতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় একটি তহবিল গঠন করে সেখানে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের স্বেচ্ছায় যাকাত, দান ইত্যাদি দেয়ার জন্য উৎসাহিত করা যায়। সহকর্মীদের বিপদ-আপদে এই তহবিল থেকে সহায়তা দেয়া গেলে বছরের অন্য সময়ও চাপ কমবে।
হোটেল রেস্তোরাঁয়
এলাকায় যে হোটেল রেস্তোরাঁগুলো রয়েছে সেখানেও বোধহয় সামাজিক কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ইফতারের আয়োজনে যেন ভেজাল না দেয়া হয় এবং দিনের বেলা খাবারের হোটেল চালু রাখলেও সেটা যেন গোপনীয়তার সাথে পরিচালনা করা হয় সে ব্যাপারে উৎসাহিত করতে পারেন। আশা করা যায় আগে থেকেই অনুরোধ করলে তারা পালনের চেষ্টা করতে পারে।
খাদ্য তহবিল
তুরস্কে একটা ভালো কাজ প্রচলিত রয়েছে বলে শুনেছি। সেখানে রুটির দোকানদাররা দোকানে আলাদা একটি পাত্র রাখেন। কেউ রুটি কিনতে এলে ইচ্ছেমাফিক রুটি কিনে সেই পাত্রে রেখে দেয়। অন্যদিকে দরিদ্র যে মানুষটি রুটি কিনতে পারছে না সে সেই পাত্র থেকে প্রয়োজনীয় রুটি সংগ্রহ করে নেয়। বাংলাদেশেও করোনার সময় কেউ কেউ এমনটা চালু করেছিল। আমরা কয়েকজন মিলে যদি বাজারের দোকানগুলোতে এরকম একটা পাত্র রাখার ব্যবস্থা করি এবং সাথে একটা নোটিশ টানিয়ে দেই, তাহলে কে জানে, হয়তো কিছু লোক সেই পাত্রে দান করতে আগ্রহী হবে আর কিছু লোক প্রয়োজনমাফিক নিয়েও যাবে। আল্লাহ ভালো জানেন।
সকলে মিলে এবং সকলের কল্যাণে যদি কিছু করা হয় তবে সেটাকেই সামাজিক কাজ হিসেবে ধরে নেয়া যায়। সে হিসেবে রমজানের প্রস্তুতির জন্য সামাজিক কাজ কি হতে পারে তা আপনিও ভেবে চিন্তে বের করে নিতে পারেন। আপনার বন্ধু এবং পরিবারের সাথে আলোচনা করে সমাজের লোকদের কল্যাণে কি করা যায় সেটা ঠিক করতে পারেন। তারপর আরও বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করাটাও রমজানের প্রস্তুতির সামাজিক দিক হতে পারে।
আমি কেবল কিছু আইডিয়া দিলাম, আমি নিজে তার কিছু পালন করতে চেষ্টা করি, কিছু পালনের স্বপ্ন দেখি। আপনাদের সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্য একটাই, যদি এই লিখা থেকে আপনারা কেউ উৎসাহিত হন এবং বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন, তাহলে সমাজের মানুষেরা উপকৃত তো হবেই, তার সওয়াব আমিও পাবো।
রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের এবং রমজানকে সঠিকভাবে পালনের সুযোগ করে দিন। আমীন।