রাজশাহীর খাবার

কোথাও বেড়াতে গেলে সেখানকার স্থানীয় এবং জনপ্রিয় খাবার চেখে দেখতে হবে – এই ব্যাপারটা আমার মাথায় ঢুকিয়েছে মঈন। মঈন আমার ইউনিভার্সিটির বিশেষ প্রিয় ছোটভাই। সে ভ্রমণপিপাসু এবং ভ্রমণ সাহিত্যের পাঠক। তার সাথে আমার কয়েকটি ভ্রমণ অভিজ্ঞতা রয়েছে বটে, সেগুলো বড় দলের একজন সদস্য হিসেবে। এই ধরণের ভ্রমণে পরস্পরকে ভালোভাবে জানার, নানা বিষয়ে আলাপ আলোচনার সুযোগ কম থাকে। কেবল বেড়ানোর উদ্দেশ্যে ভ্রমণে মঈনকে পাইনি। দাপ্তরিক প্রয়োজনে একবার মঈনের সাথে কুষ্টিয়া-রাজশাহী ভ্রমণ করার সুযোগ হয়েছিল, তখনই মঈনের খাদ্যপ্রীতি সম্পর্কে জানতে পারি।

মঈন আমাকে শিখিয়েছে নতুন কোন জায়গায় গেলে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে জানতে হবে কোথায় ভালো চা হয়, ভালো ও বিখ্যাত মিষ্টি কোন দোকানে পাওয়া যাবে, স্থানীয় মাছ এবং খাবার কি রয়েছে। তারপর ভ্রমণের রাত্রীগুলোতে চা খেয়ে দেখতে হবে, মিষ্টির রসে আঙ্গুল ভেজাতে হবে, পরিচিত অথবা অপরিচিত মাছ আর সবজীর রান্নার স্বাদ নিয়ে বুঝতে হবে কেনো এই খাবার জনপ্রিয়। মঈনের দেয়া এই শিক্ষা আমি মেনে চলি। ফলে, রাজশাহী যাওয়ার আগেই লিস্টি করে নিলাম – কোথায় কি কি খাবার চেখে দেখতে হবে।

ebook pdf download Rajshahi-Natore

রাজশাহী-নাটোরে ভ্রমণ কাহিনীটি তিনটি ভাগে প্রকাশ করা হয়েছে – রাজশাহী পর্ব, নাটোর পর্ব এবং রাজশাহীর খাবার। পাঠকের পড়ার সুবিধার্থে সম্পূর্ণ ভ্রমণ কাহিনীকে ছবিসহ একটি ই-বুকে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ফাইল সাইজ: ১১ মেগাবাইট।

ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন – ছবিতে অথবা এখানে

কালাই রুটি

রাজশাহী বেড়াতে যাবেন শুনলে রাজশাহী এবং আশেপাশের জেলাগুলোর বাসিন্দারা আপনাকে অবশ্যই কালাই রুটি খেয়ে দেখার অনুরোধ করবেন। কালাই রুটি বা কলাই রুটি মূলত চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্য। তবে রাজশাহীতেও এটি বহুল প্রচলিত।

মাষকলাই ডাল হলো কালাই রুটির প্রধান উপকরণ। মাষকলাই পিষলে যে আটা পাওয়া যায় তাই দিয়েই খামি তৈরী হয়। তবে, শুধু মাষকলাই ডালের আটা থেকে রুটি বানানো কষ্টকর, এজন্য সাধারণত চালের গুড়ি বা গমের আটা মেশানো হয়। রুটি ভাজা হয় মাটির তাওয়াতে।

কালাই রুটি, হাঁসের মাংস, বেগুন ভর্তা (ছবি: উইকিপিডিয়া)

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল কালাইয়ের রুটি মূলত পাওয়া যায় পদ্মার তীরে, কোর্ট এলাকায়। পদ্মা গার্ডেন থেকে আমরা যখন বের হয়েছি তখন সন্ধ্যা পার হয়ে গিয়েছে। এক রিকশাচালকের সাথে কথা বলে জানা গেল – সন্ধ্যার পরে কালাইয়ের রুটি খেতে হলে যেতে হবে উপশহরে। সেখানে কিছু হোটেল হয়েছে, যেখানে স্পেশাল কালাইয়ের রুটি পাওয়া যায়। সিদ্ধান্ত নিলাম – যাবো সেখানেই, রাতের খাবার হিসেবে আজ নাহয় কালাইয়ের রুটিই খাবো।

উপশহর বেশ গোছানো এলাকা। শহর থেকে একটু দূরে উপশহর অবস্থিত। রাস্তাঘাট চওড়া। সম্ভবত রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে উপশহর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তবে এ বিষয়ে কোন তথ্য পাইনি। এই উপশহরে রাস্তার পাশে অবস্থিত তিনটি দোকান – সবগুলোতেই কালাই রুটি বিক্রি হয়। হোটেলের ভেতরে এবং বাহিরে কিছু ছেলে-মেয়ে কালাই রুটি খাচ্ছে। রিকশা থেকে নামতেই ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেলো।

বাছাই করে অপেক্ষাকৃত ভালো মানের ‘কালাই হাউজ’ হোটেলে বসে বুঝলাম – ছোট বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে বসার জন্য এই হোটেল মোটেই উপযুক্ত নয়। টয়লেট নেই, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা আছে। গরম থেকে বাঁচতে ফ্যান চালানো মাত্রই হোটেলের বাহিরের দিকে যে চুলায় কালাই রুটি ভাজা হচ্ছিল সেখান থেকে ধোঁয়া আসতে লাগল। এই হোটেলে বসে খাওয়া সম্ভব না। বাথরুমে যাওয়া প্রয়োজন, ফলে বেশি সময় কাটানোও সম্ভব হবে না। বাধ্য হয়ে খাবার পার্সেল করে নিয়ে আমাদের অস্থায়ী আস্তানার দিকে রওয়ানা করতে হলো।

দুই পদের কালাই রুটি হয়। সাধারণ এবং স্পেশাল। বিশ টাকা এবং ত্রিশ টাকা। কালাই রুটি খেতে হয় বিভিন্ন পদের ভর্তা দিয়ে। কম ঝাল অথবা বেশী ঝাল। এছাড়া মাংস দিয়ে খাওয়া যায়। হাঁসের মাংসের সাথে কালাই রুটি বেশ জনপ্রিয়। গরুর ভুঁড়ি বা বট দিয়েও খাওয়া যায়। যেহেতু আমাদের উদ্দেশ্য হলো কালাইয়ের স্বাদ আস্বাদন কর, তাই সাধারণ ও স্পেশাল কালাই রুটির সাথে হাঁসের মাংস, বট, বেগুন ভর্তা ইত্যাদি নেয়া হলো।

যা বুঝলাম – কালাই রুটি হলো পহেলা বৈশাখের পান্তাভাত। রুটিগুলো বেশ পুরু এবং শক্ত। খালি রুটি চিবিয়ে গিলতে গেলে গলায় বেজে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এ কারণেই ভর্তা বা ঝোল টাইপের কিছু দিয়ে খাওয়া হয়। এই রুটি মূলত দরিদ্র শেণির মানুষের খাবার। সহজে হজম হওয়ার নয়, তাই ক্ষুধা লাগে দেরীতে। কালাই রুটির বেশিরভাগ দোকান তাই রাস্তার পাশেই। শখের বশে মানুষ খায় বলে সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে, আমরাও সেই প্রভাবে খেয়ে দেখেছি। আবারও রাজশাহী গেলে হয়তো খাবো, তবে একবারের বেশী নয়।

জিলাপি

জিলাপির প্রতি আমার সামান্য দুর্বলতা আছে। ভালো করে ভাজা রসে ডুবানো গরিম জিলাপির স্বাদ অসাধারণ। চট্টগ্রামে জিইসির মোড়ের জিলাপি খেয়েছি, ভালো কিন্তু দুই নাম্বার মোড়ের জিলাপির তুলনায় ওভাররেটেড। জিইসির জিলাপির পরিবেশ ভালো, বান্ধবী নিয়ে খাওয়া যায় বলে সুনাম বেশি। দুই নাম্বারের জিলাপির দোকানে মাছি উড়ে বলে বান্ধবীরা ঘেঁষে না আর এ কারণে অসাধারণ এই জিলাপির স্বাদ সবাই পায় না। এ আমার নিজস্ব অভিমত।

ঢাকার শাহী জিলাপি আমার খুবই না-পছন্দ। সেই তুলনায় রেশমি জিলাপি দারুণ পছন্দের। এক সময় পান্থপথ-গ্রীণ রোডের ক্রসিং-এর জিলাপির প্রায় নিয়মিত খদ্দের ছিলাম। গুড়ের জিলাপি পেলে খাওয়ার সুযোগ সাধারণত মিস করি না। তবে জিলাপি বেশি খাই না। অস্বাস্থ্যকর জিনিস। পোড়া তেলে ভাজা খাবারে কষ্ট হয়।

রাজশাহীর জনপ্রিয় খাবারের তালিকা করতে গিয়ে দুই দোকানের জিলাপির কথা জানা গেল। বাটার মোড়ের জিলাপি এবং বর্ণালীর মোড়ের তিলের জিলাপি।

বাটার মোড়ের জিলাপী, রাজশাহী (ছবি: বাংলানিউজ২৪)

বাটার জিলাপির সাথে সাক্ষাৎ হলো হঠাৎ। অটোয় চড়ে রেশম কারখানা দেখতে যাচ্ছি, এক জায়গায় দেখি জিলাপি ভাজা হচ্ছে। দোকানের সাইনবোর্ডে দেখি বাটার মোড় লিখা। অটোচালকের সাথে কথা বলে জানলাম এটাই সেই বিখ্যাত বাটার মোড়ের জিলাপি। ততক্ষণে গাড়ি এগিয়েছে কিছুদূর। জিলাপি খাওয়ার আগ্রহের কথা বলতেই অটোচালক গাড়ি ঘুড়িয়ে দোকানের সামনে নিয়ে গেলো।

দোকানটা ছোট নয়। বরং জিলাপির দোকানের তুলনায় যথেষ্ট বড়। প্রধাণত জিলাপি বিক্রি করলেও সিঙ্গারা-নিমকি ইত্যাদিও বিক্রি করে সম্ভবত। ভেতরে বসার ব্যবস্থা আছে। তবে আমাদের যেহেতু সময় কম তাই পার্সেল করে নিলাম।

জিলাপি খেলাম অটোতে বসেই। চমৎকার জিলাপি। মচমচে। গরম। ভাজা হয়েছে মাপমতো। মিষ্টিটাও ঠিকঠাক। পরপর কয়েকটা খাওয়া গেল। বাকীদের অভিজ্ঞতাও বেশ ভালো। এই জিলাপি বারবার খাওয়া যায়।

বর্ণালীর মোড়ের তিলের জিলাপির জন্য আগ্রহ বেশী ছিল। তিলের জিলাপি টার্মটাই নতুন শুনেছি। আগে কখনও খেয়েছি বলে মনেও পড়ে না। কিন্তু বর্ণালীর মোড়ে ঠিক কোন দোকানে জিলাপি বিক্রি হয় তা জানা গেল না। বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করেছি, অটোচালক-রিকশাওয়ালার কাছে জানতে চেয়েছি কিন্তু কেউই বলতে পারল না। শেষে এক অটোতে করে আস্তানায় ফেরার সময় জানতে চাইলাম। তিনি বর্ণালীর মোড়ে এসে একটি দোকান দেখিয়ে বললেন, ‘ঐ যে ঐখানে তিলের জিলাপি পাওয়া যায়। কিন্তু এখন পাবেন না। শুধু রমজানে পাওয়া যায়।’

নেমে যাচাই করে দেখা যেতো, কিন্তু সারাদিন বেড়ানোর পরে আর আগ্রহ হলো না। তিলের জিলাপিও খাওয়া হলো না।

রাহমানিয়া হোটেল

রাজশাহীতে ভালো খাবারের হোটেল কি? – এই প্রশ্ন করলে সম্ভবত সবাই-ই রাহমানিয়া হোটেলের নাম বলবে। অনেকেই মনে করেন – রাজশাহী ভ্রমণে গেলেন কিন্তু ৬৫ বছরের পুরানো রাহমানিয়া হোটেলে খেলেন না, তবে আপনার ভ্রমণ অসম্পূর্ণ রয়ে গেলো। আমাদের অবশ্য অভিযানের উদ্দেশ্যে রাহমানিয়া হোটেলে যাওয়া হয়নি, গিয়েছি পেটের তাগিদে। রাতের খাবার খেতে হবে, ছিলাম সাহেববাজারে, ফলে রাহমানিয়া হোটেলে উপস্থিত হলাম।

হোটেল খুব বড় নয়। সব মিলিয়ে বোধহয় দশটা টেবিল। হাত-মুখ ধোয়ার ব্যবস্থা আছে, তবে টয়লেট নেই। ইচ্ছে ছিল রাহমানিয়া হোটেলেই ডিনার সারবো, কিন্তু নানা কারণে সেটা সম্ভব হলো না। রুমালি রুটি, নান রুটি, হালিম, ভাত, গরুর মাংস ইত্যাদি কিনে আস্তানায় ফিরে খেলাম। অসাধারণ মনে হয়নি, তবে মোটামুটি ভালো বললেও অন্যায় হবে। হয়তো হোটেলে বসে খেলে অভিজ্ঞতা আরেকটু ভালো হতো।

নবরূপের মিষ্টি

রাজশাহীর সাহেববাজারে নবরূপের মিষ্টির দোকানে উপস্থিত হয়েছি সন্ধ্যার বেশ কিছু সময় পরে। দোকানে খদ্দেরের ভীড়, বসার জায়গা পেতেও সময় লাগছে। দোকানটা বড়সড়। এক সাথে অনেকজন কর্মচারী কাজ করছে। সরগরম অবস্থা।

দোকানের দুই দিকে শো-কেসে বহু পদের মিষ্টি সাজানো। রাজভোগ, গোপালভোগ, চমচম। রসগোল্লা, ছানার পোলাও, ক্রীম রোল। এত পদের মিষ্টি এক দোকানে আগে কখনও দেখি নি। আর আছে দই। দই-চিড়া খাচ্ছে সবাই। অর্ডার করলাম আমরাও। দুর্ভাগ্য! চিড়া শেষ হয়ে গিয়েছে বলে খাওয়া গেলো না। বাধ্য হয়ে শো-কেস থেকে বাছাই করে কয়েক পদের স্বাদ যাচাই করে দেখলাম। কোনটা যে সেরা, তা আলাদা করতে পারিনি।

নবরূপের মিষ্টান্ন ভান্ডার যে কোন মিষ্টিপ্রেমীর জন্য আদর্শ গন্তব্য। এত বাহারী মিষ্টি খাওয়ার জন্য একবার এলে চলবে না, বার কয়েক আসতেই হবে। আমরাও পরেরবারের জন্য কিছু মিষ্টি রেখে এলাম।

রানার মিষ্টি

রানার মিষ্টির সাথে পরিচয়টা কাকতালীয়। প্রথমদিন রাতে ভাতের খোঁজে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি, তখন দু-তিনটি হোটেল দেখতে পেয়ে এগিয়ে গেলাম। একটি দোকানের সামনে ভীড় একটু বেশী। হোটেলের সামনে কতগুলো বাইক, অটো পার্ক করে রাখা। গিয়ে দেখি, কেউই ভাত-তরকারী বিক্রি করে না, ভাজা-পোড়া নাস্তা বিক্রি করে। ভীড় জমে আছে যে দোকানের সামনে সেটি মিষ্টির দোকান। ভেতরে বসার ব্যবস্থা থাকলেও ভেতরে কেউ নেই। সামনে বেঞ্চিতে, টেবিলে বসে লোকজন মিষ্টি, নিমকি বা পুড়ি খাচ্ছে। চুলায় মিষ্টি রান্না হচ্ছে, দোকানের ভেতরে বিশাল ডেকচিতে রসের মধ্যে মিষ্টি ডুবিয়ে রাখা। এরকম মিষ্টির দোকান সব জেলাতেই কম-বেশি দেখতে পাওয়া যায়, ফলে অতটা গুরুত্ব না দিয়ে আমি ফের ভাতের সন্ধানে চললাম।

একদিন পরে মঈনের সাথে ফোনে কথা বললাম – রাজশাহীতে কোথায় খাওয়ার অভিজ্ঞতা নেয়া উচিত সেটা জানার জন্য। মঈন খুব স্পেসিফিক কিছু বলতে না পারলেও সিএন্ডবি মোড়ের রানার মিষ্টির কথা বললো। মঈনের বর্ণনার সাথে মিলিয়ে বুঝলাম – আগের রাতে দেখা মিষ্টির দোকানই রানা মিষ্টি ঘর।

স্পঞ্জ রসগোল্লা
রানার স্পঞ্জের রসগোল্লা (ছবি: তৌফিক আহমেদ অনিক)

সুতরাং, রাজশাহী থেকে ফেরার কয়েক ঘন্টা আগে উপস্থিত হলাম রানার মিষ্টির দোকানে। মিষ্টিগুলো বানানো হয় রাতে, এ কারণেই গরম গরম মিষ্টির লোভে শহরের মিষ্টিপ্রেমীরা। দুই পদের মিষ্টি – রসে ডুবানো বড় মিষ্টি অথবা রসে ডুবানো ছোট মিষ্টি। সাথে নিমকি, ডালপুড়ি ইত্যাদি খেতে চাইলে পাওয়া যাবে।

আমরা অন্য কিছু খাওয়ার অবস্থায় ছিলাম না। শুধু মিষ্টির অর্ডারই দিলাম। গরম গরম মিষ্টি হাজির হয়ে গেলো। চামচ দিয়ে কেটে মুখে দিতেই বুঝলাম কেন এই মিষ্টির সুনাম দূর-দুরান্তে ছড়িয়েছে। নরম, মুখের মধ্যে গলে গেলো। মিষ্টতা হয়েছে একদম ঠিকঠাক। খুব ভালো লাগলো। রাজশাহী ভ্রমণে এটা উপরি পাওনা। ঢাকার জন্য মিষ্টি কিনে নিলাম। প্লাস্টিকের বাটিতে রস আর মিষ্টি দিয়ে ভালো করে বেঁধে দিলো। ঠান্ডা হওয়ার পরে মিষ্টির সেই স্বাদ অবশ্য পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই গেলো।

রাজশাহীর আরও কিছু খাবারের স্বাদ নেয়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু সময়াভাবে সেটা সম্ভব হয়নি। যেমন সাহেববাজারের বিদ্যুতের কলিজার সিঙ্গারা। সাহেববাজারে যখন গিয়েছি তখন রাত আটটা বাজে। এ সময়ে সিঙ্গারা খাওয়া কোন সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না, তাই কলিজার সিঙ্গারা খাওয়া হয়নি। এছাড়া, ইচ্ছে ছিল পিউলি মাছ খাওয়ার। বছর কয়েক আগে একবার রাজশাহী এসে প্রত্যেক বেলায় এই মাছ খেয়েছি। পিউলি নদীর মাছ। আকারে ৬/৭ সেন্টিমিটারের বেশি হয় না। এই মাছের তরকারিতে একটু মিষ্টিভাব থাকে। এবার কোন হোটেলেই পিউলি মাছ পাওয়া গেলো না। পরে লীনাদের বাড়িতে গিয়ে জানা গেলো – এখন এই মাছ কম পাওয়া যায়। লীনাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পথে এক ছেলেকে পাওয়া গেলো যে নদী থেকে অল্প কিছু মাছ ধরে বাড়ি ফিরছে, তার কাছে পিউলি মাছ দেখেছিলাম, কিন্তু স্বাদ নেয়ার মতো সময় ছিল না।

এসব খাবার পরের বারের জন্য রেখে গেলাম।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *