বেন ওয়েড নামের কুখ্যাত গ্যাংস্টার এবং তার গ্যাং এর স্টেজকোচ ডাকাতির চাক্ষুষ সাক্ষী হলেন বৃষ্টিহীন খরা আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত র্যাঞ্চার ড্যান ইভান্স। বেন ধরা পড়লে টাকার বিনিময়ে পরের দিনের ৩টা ১০ এর ইউমাগামী ট্রেনে তুলে দেয়ার দায়িত্ব নেয় ড্যান। আর বেনকে ছিনিয়ে নেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা শুরু করে তার দল, তাদের নেতৃত্বে আছে চার্লি। এই হলো ৩:১০ টু ইউমা ছবির গল্প।
এক কাহিনী নিয়ে দুটি সিনেমা নির্মিত হয়েছে। প্রথমটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৭ সালে। এর পঞ্চাশ বছর পরে ২০০৭ সালে মুক্তি পায় রিমেক। দুটি সিনেমাকেই দর্শকরা বেশ ভালোভাবে গ্রহণ করেছিল। ফলে এই দুই সিনেমার মধ্যে কোনটি সেরা তা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।
সাদা-কালো ৩:১০ টু ইউমা
১৯৫৭ সালের সাদা-কালো সিনেমার দৈর্ঘ্য দেড় ঘন্টা। সেখানে, ড্যান ইভান্স চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ভ্যান হেলফিন, বেন ওয়েড চরিত্রে গ্লেন ফোর্ড। দুজনেই খ্যাতিমান অভিনেতা। সিনেমার পর্দায়ও তারা চরিত্রের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী অভিনয় করে গিয়েছেন। আসলে গল্পটিই এমন যে, দুটো চরিত্রের মধ্যে কাকে বাদ দিয়ে কার পক্ষ নিবেন – এ নিয়ে আপনাকে ভাবনায় পড়তে হবে।
রঙ্গীন ৩:১০ টু ইউমা
অন্যদিকে ২০০৭ সালের ৩:১০ টু ইউমা সিনেমার দৈর্ঘ্য দুই ঘন্টার একটু বেশী। পঞ্চাশ বছরের ব্যবধানে নির্মিত সিনেমায় কেবল সময় বাড়ানো হয়নি, কাহিনীর ব্যপ্তিও বৃদ্ধি পেয়েছে, গতি বেড়েছে, পাল্টেছে রঙ। এখানে বেন ওয়েড চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাসেল ক্রো, ড্যান ইভান্স চরিত্রে ক্রিশ্চিয়ান বেল। দুজনেই হালের ডাকসাইটে অভিনেতা এবং যথারীতি পর্দায়ও তাদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
জেমস ম্যানগোল্ডের কারিশমা
রিমেক সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন জেমস ম্যানগোল্ড। তিনিও শক্তিমান পরিচালক। গার্ল ইন্টারাপ্টেড, নাইট এন্ড ডে, ওলভেরাইন, লোগান এবং গেল বছরের ফোর্ড ভার্সেস ফেরারি সিনেমার মত বিখ্যাত সিনেমাগুলোর পরিচালক তিনি। থ্রি টেন টু্ ইউমার রিমেক করতে গিয়ে তিনি কাহিনীকে কিছুটা টেনে লম্বা করেছেন, চরিত্রগুলোকে আরেকটু গভীরে নিয়ে গিয়েছেন। যেমন, ড্যান ইভান্সের দুর্দশাকে আরও বড় করে তুলতে তিনি একটি পা কেটে বাদ দিয়েছেন, জমি উদ্ধারের জন্য বকেয়া অর্থের পরিমান নির্দিষ্ট করে দেননি। বেন ওয়েড চরিত্রটিকেও তিনি শাণিত করেছেন। একদিকে যেমন তার কুখ্যাতির কারণগুলোকে প্রতিষ্ঠা করেছেন তেমনি তার প্রতি দর্শকের অনুরক্ত হবার যথেষ্ঠ উপাদানও যুক্ত করেছেন।
ড্যান ইভান্স এর কি হলো
তবে, শেষ পর্যন্ত দুই সিনেমার ড্যান ইভান্সের চরিত্রের পার্থক্য বেশ বড় হয়ে দাঁড়ায়। অরিজিনাল সিনেমায় শুরুতে টাকার জন্য বেন ওয়েডকে ট্রেনে তুলে দেয়ার দায়িত্ব নিলেও শেষ পর্যন্ত সেটা সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধে রূপান্তরিত হয়। অন্যদিকে, রিমেকে, সন্তানের কাছে গ্রহণযোগ্যতাই যেন মূখ্য হয়ে উঠে ড্যানের কাছে। এই পার্থক্যের কারণে দুই চরিত্রের পরিণতিও দুই রকম। কোন চরিত্রটিকে আপনার ভালো লাগবে – সেটা নির্ভর করবে আপনার বয়স এবং রুচির উপর।
আনুগত্যে সেরা চার্লি প্রিন্স
২০০৭ সালের সিনেমায় সবচেয়ে বড় আকর্ষন হলো বেন ওয়েডের শিষ্য চার্লি প্রিন্স। তার আনুগত্য এবং নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা, হিংস্রতা দুর্দান্তভাবে ফুটে উঠেছে। অস্বীকার করা উচিত হবে না, রঙিন সিনেমাটি এত বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠার কারণ চার্লিই। এর পুরস্কারও পেয়েছে চার্লি। তাকে এখন সিনেমার কাল্ট ক্ল্যাসিক হিসেবে গণ্য করা হয়।
সাদা-কালো বনাম রঙ্গীন
১৯৫৭ সালের সিনেমা সেই তুলনায় সাদা-মাটা মনে হতে পারে। যে বিষয়টি চোখে পড়ার মতো – এই সিনেমায় অপ্রয়োজনীয় কোন দৃশ্যই রাখা হয়নি। কন্টেনশন সিটি, যেখান থেকে বেন ওয়েডকে ইউমাগামী ট্রেনে তুলে দেয়া হবে, এত দারুণভাবে তৈরী করা হয়েছে যে আপনার বিশ্বাসই হবে না – এটি একটি সিনেমা। সেই তুলনায় জেমস ম্যানগোল্ডের সিনেমায় কন্টেনশন সিটি একেবারেই নতুন, যেন এখনও গড়ে উঠছে। বাড়ি-ঘর থেকে শুরু করে সব কিছুই নতুন কাঠের তৈরী, শহরটিও একদম ছোট।
সবশেষে
যাহোক, দুই সিনেমার মধ্যে রিমেক অনেক বেশি উপভোগ্য সিনেমা। আমার দেখা সেরা ওয়েস্টার্ন সিনেমাগুলোর একটি ২০০৭ সালের থ্রি টেন টু ইউমা। কিন্তু মনে দাগ কেটে যাওয়ার মতো সিনেমা হলো ১৯৫৭ সালে যেটি মুক্তি পেয়েছিল। জেমস ম্যানগোল্ড অনেক চেষ্টা করেও সিনেমার গতি এবং উত্তেজনার কারণে এই বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে পারেন নি।