নিউমার্কেটের ভিতরে একটা ক্যামেরার দোকান আছে – ক্যামেরা সারানোর প্রয়োজনে দুইবার যেতে হয়েছিল গত সপ্তাহে। দুদিনই দেখলাম দোকানের টিভিতে কোলকাতার বাংলা চ্যানেল চলছে। প্রথমদিন একটা সিরিয়াল – সা সা করে ক্যামেরা মুখের উপর স্থির হচ্ছে শুধু, আর দ্বিতীয়দিন, কোন একটা ট্যালেন্ট হান্ট শো। যেহেতু আমি টিভির দর্শক না তাই দুটোর একটাও চিনতে পারলাম না।
দ্বিতীয়দিন যে ছেলেটা ক্যামেরা সারাই করছিল তাকে বলে ফেললাম – ভারতীয় চ্যানেল দেখেন কেন? বাংলাদেশী চ্যানেল দেখতে পারেন না?
সে প্রথমে জবাব দিল – ‘বাংলাদেশী চ্যানেলে দেখার কিছু আছে নাকি?’ তারপর একনাগাড়ে বলে গেল – বাংলাদেশে যোগ্যতার বিচার হয় না, আমার আপনার মেধা আছে কিন্তু সেই মেধার কোন বিচার হয় না, বাংলাদেশী চ্যানেলে এরকম একটা অনুষ্ঠান করতে পারবে? অনুষ্ঠানটা যদি আমি আর দশ মিনিট দেখি তাহলে বাংলাদেশী প্রতিযোগিও পাবো যার মেধার বিচার বাংলাদেশে হচ্ছে না বলে সে ভারতে গেছে। এই দেশে আছে কি? জীবনের কোন নিরাপত্তা নাই। আমি এখান থেকে বের হবো, আমার জীবনের নিরাপত্তা নাই, কেউ আমাকে খুন করে ফেলল, তারপর এক মাস পর জেল থেকে বের হয়ে আসল ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি ততক্ষনে অন্য চিন্তায় ডুবে গিয়েছি – কথা কানে ঢুকে নি। বাংলাদেশের কোন সরকারের হ্যাডম নাই জানি, তারপরও কোন সরকার যদি দুঃসাহস দেখিয়ে ৫০টা ভারতীয় চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় তাহলে ঠিক কতদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে? কল্পনার ঘোড়া উড়ালল দিল রীতিমত – বাসার কর্তা যদি বন্ধ করে দেয় তাহলে কি হবে? অসহযোগ আন্দোলন – গৃহিনী রান্না বন্ধ করে দেবে – সিরিয়াল বন্ধ, ছোট সন্তানটা খাওয়া বন্ধ করে দেবে – কার্টুন বন্ধ, বড় সন্তানটা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেবে – স্পোর্টস চ্যানেল বন্ধ, মেয়েটা মুখ গোমড়া করে থাকবে সারাদিন – মিউজিক চ্যানেলটা বন্ধ, কর্তা নিজেও হয়তো সিআইডি দেখতে না পারার কারণে রাতে হাঁসফাঁস করবেন। নাট্যকার বন্ধুরা কি কল্পনার ঘোড়া ছুটিয়ে কিছু তৈরী করবেন?
ভারতীয় চ্যানেল দেখে দেখে এই আমরাই প্রতি বছর দুই হাজার কোটি টাকা ভারতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। দেশপ্রেম যদি শুধু পাকিস্তানের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধারের মধ্যে সীমিত হয়ে যায়, তাহলে প্রেম থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু নিশ্চিত থাকেন – ‘দেশ’টি হারাতেই হবে।