মোটু ফিরে এসেছে!

মোটু

মোটু ফিরে এসেছে!
মোটু হল পৃথিবীর সবচে অলস বেড়াল, বছর চারেক হল সে আমাদের ফ্যামিলি মেম্বার, থাকে আমাদের বাসায়ই।

বেড়াল নিয়ে আমাদের কখনোই কোন আহলাদ ছিল না। বরং বেড়াল ছিল আমাদের দুই ভাইয়ের টার্গেট প্র্যাকটিসের বস্তু। অস্ত্র হল স্যান্ডেল। দুই পদ্ধতিতে এই অস্ত্র নিক্ষেপ করা হত। শরীরের কোন নড়াচড়া না করে পায়ের স্যান্ডেলকে হাতে নেয়া এবং হাতকে পেছনে নিয় হঠাৎ নিচু করে বেড়ালের দিকে ছুড়ে মারতে হতো। খেয়াল রাখতে হত, স্যান্ডেল যেন বেড়াল পর্যন্ত উড়ে গিয়ে বেড়ালের হাতখানেকের মধ্যে মাটিতে ঠোকর খায়। দুটো উদ্দেশ্য, স্যান্ডেলের আগমন টের পেয়ে বেড়াল যেদিকেই সরুক না কেন ছুটন্ত স্যান্ডেলের রেঞ্জের মধ্যে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী এবং, স্যান্ডেলের বাড়ি খেলে তুলনামূলক কম আঘাত পাবে, তাতে নেক্সট টাইম একই বেড়ালকে টার্গেটের সুযোগ থেকে যায়। মরে টরে গেলে বেড়াল একটা কমে যাবে – এই চেতন আমাদের মধ্যে ছিল।

অস্ত্রের দ্বিতীয় ব্যবহার হত যখন লোড করার সুযোগ থাকতো না। রাস্তা দিয়ে বেড়ালটা হেটে যাচ্ছে, অথবা তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। স্যান্ডেল হাতে নিতে নিতে পালিয়ে যেতে পারে, কিন্তু চোখের আড়াল, তখন আর হাতে নেয়া যাবে না, পা-কেই এমনভাবে ঝাড়ি দিতে হবে যেন স্যান্ডেল পা থেকে ছুটে গিয়ে বেড়াল পর্যন্ত পৌছে যায়। এটা একটু রিস্কি। কোনভাবে ছুড়তে ভুল হলে দেখা যেত স্যান্ডেল উপরের দিকে উঠে গেছে, অথবা, বিড়ালের পাশের ড্রেনে গিয়ে পড়েছে। বাকী পথ তখন ভেজা স্যান্ডেল-কে লাথি দিয়ে দিয়ে বাসা পর্যন্ত নেয়া লাগত।

টার্গেট প্র্যাকটিসের কারণেই সম্ভবত এলাকার কোন বেড়াল আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নিতে আসে নি, তবে বাচ্চা ডেলিভারীর উদ্দেশ্যে এসেছে অনেকবার। সফল ডেলিভারীর দিন সাতেকের মধ্যেই বাচ্চাসহ নতুন কোথাও আশ্রয় নিয়েছে – তাদের জন্য আমাদের আলাদা কোন মায়া-মমতা বা শত্রুতা ছিল না। দুধভাত বেড়ালের সাথে আবার কি?

অথচ, আব্বার রিটায়ারমেন্টের পর পুরানো বাসস্থান ছেড়ে আব্বা-আম্মা যখন নতুন বাসায় একাকী থাকা শুরু করল তখন কিভাবে যেন একটা বেড়াল আমাদের ঘরে চলে এল। প্রথম দিকে সে শুধু খাওয়ার সময় আসতে থাকলো, তারপর বাসাতেই থাকতে শুরু করল। বেশ পোটকা শরীর আর অলস স্বভাবের কারণে তার নাম হয়ে গেল মোটু। ২৪ ঘন্টা দিনে-রাতে সে ঘুমায় প্রায় বিশ ঘন্টা, এক জায়গায় নয়, ঘুরে ঘুরে সাত আট জায়গায়। পৃথিবীর কোন কিছুতেই মোটুর কোন আগ্রহ নেই – মুর্গীর বাচ্চা যে বিড়ালের খাদ্য হতে পারে, ইদুরের সাথে যে বেড়ালের চিরশত্রুতা – তার কোনটাই বোধহয় মোটুর জানা নেই।

বলা যায় এ কারনেই মোটু পরিবারের সদস্য হয়ে গেল। খাতির যত্ন যা করার আব্বাই করে। দুপুর রাতের মেনু কি হবে সেটা ঠিক করা হয় মোটুর কথা চিন্তা করে, বয়স্ক মোটু সব গরুর হাড্ডি খেতে পারে না, মুর্গী বা মাছ তার প্রিয়। ফলে কোন বেলায় মাছ-মুর্গী না থাকলেও মোটুর কথা চিন্তা করে আগের বেলায় মাছ/মুর্গীর টুকরো রেখে দেয়া হয়।

গত পরশুদিন হঠাৎ খবর এল মোটু নাকি দুদিন ধরে বাসায় নেই। মোটুর বয়স হয়েছে, পাড়ার তরুন-যুবা বেড়ালগুলোর সাথে মোটু পেড়ে উঠে না, কদিন পরপরই যখম নিয়ে ঘরে ফিরে, যখন তখন মরে যেতে পারে। ফলে, দুদিন ধরে নিখোঁজ থাকার ফলে ধরেই নেয়া হচ্ছিল মোটু বোধহয় মারাই গেছে। আব্বার মন খারাপ, আম্মারও। তাদের মন খারাপ দেখে আমাদেরও খারাপ লাগে। একদম একাকী আব্বা-আম্মার সাথে অন্তত: একটা বেড়াল ছিল, মোটু মারা গেলে কি হবে? আবার আরেকটা বেড়াল? মোটুর কোন অলটারনেটিভ হয়?

হয় না! এবারের মত মোটু ফিরে এসেছে। কথা বলতে পারে না বলে এ কদিন কোথায় ছিল সেটা ঠিক জানা যায় নি, জানার প্রয়োজনও নেই। মোটু ফিরে এসেছে, সেটাই বড় কথা। মোটুকে নিয়ে আমার রিটায়ার্ড আব্বা আবারও একটু সময় ব্যস্ত থাকবে, খাবার সময় মোটুকে ডাকাডাকি করবে, একাকীত্বের সঙ্গী হবে মোটু।

কখনো কখনো একটা বেড়ালও একটা মানুষের মত ভূমিকা পালন করে। মোটু তুই ভালো থাক্।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *