১.
গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে একটা ভিডিও শেয়ার হতে দেখছি। ভিডিওর বিষয় শিশুদের পর্নগ্রাফিতে আসক্তি। রাজধানীতে অষ্টম শ্রেনীতে পড়ুয়া ১০০ জন শিক্ষার্থীর (এদেরকে শিশু বলতে ইচ্ছে করছে না) উপর একটা জড়িপ চালিয়েছে সময় টেলিভিশন, তার রেজাল্টের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ৮৮ শতাংশ স্কুল পড়ুয়া মোবাইলে পর্ণ ছবি/ভিডিও দেখে, শেয়ার করে। অনেক ক্ষেত্রে এটা স্মার্টনেসের লক্ষন। রিপোর্টারের ভাষ্যমতে, এক শিক্ষার্থী তাকে জানিয়েছে – বাবা মায়ের সামনেই সে এইসব দেখে, কোন সমস্যা হয় না।
২.
আমার এ্ইচএসসি পড়ুয়া এক বোন তার ফেসবুক ওয়ালে তার বান্ধবী এবং তার বয়ফ্রেন্ডের ছবি শেয়ার করেছে। ছবিতে সেই কাপল কোন এক ফাস্ট ফুড/রেস্টুরেন্টে বসে নাকে নাক ঘষছে। জানা গেল, এটা তাদের প্রি-কিস পর্বের ছবি। তুলেছে আমার সেই বোন।
৩.
সাবিয়া সুলতানা নামের কিশোরী একটা মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কেন? তার প্রেমিক তাদের ঘনিষ্ট সময়ের ছবি তুলে ছড়িয়ে দিয়েছে, কোন এক সাংবাদিক সেই সূত্র ধরে তার সাক্ষাতকার নিতে গিয়ে ছবি পত্রিকায় প্রকাশের হুমকী দিয়েছে, কিশোরী মেয়েটি এই অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। এখন কে দোষী এই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
৪.
এই তিনটি ঘটনার মধ্যে নিশ্চয়ই একটা সম্পর্ক আছে, তবে একটির কারণে আরেকটি ঘটেছে – এমনটি নয়। ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন, কিন্তু সামগ্রিকভাবে একটি চিত্র তুলে ধরছে – আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। এরা যৌনতাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে গেছে মোবাইলের কল্যাণে, প্রেম তাদের অন্যতম চাহিদা, শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে তাদের ছ্যুৎমার্গ নেই এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন, গোপনীয়তাকে তারা বিদায় করে দিচ্ছে। সুশীল এবং প্রগতিশীল-দের কাছে হয়তো এই সকল ঘটনাবলীর মধ্যে মোবাইলে ছবি তুলে ছড়িয়ে দেয়ার মত গুরুতর অপরাধ আর কোনটিই নয়, কোন কোন ক্ষেত্রে অপরাধও নয়। কিন্তু ধর্ম বা বাঙ্গালী সমাজ ব্যবস্থাকে আকড়ে ধরে রাখার মত পশ্চাৎপদ মানুষের কাছে এই প্রত্যেকটি ঘটনাই গুরুত্বপূর্ণ, অপরাধ এবং এর কোনটিই কাম্য নয়।
প্রত্যেকটি ঘটনারই সমাধান প্রয়োজন, এবং পশ্চাতপদ মানুষের বৈশিষ্ট্যানুসারে এরা ঘুরে ফিরে তাদের ধর্ম এবং পুরানো সংস্কৃতির কাছে পৌছে যায়, সেখানেই সমাধান খুজে পায়। এই বিশ্বাস বলে, শিক্ষার্থীদের হাত থেকে প্রযুক্তি তুলে নেয়া বা বাবা-মাকে সর্বদা সচেতন হওয়াই এই সমস্যার সমাধান নয়। বরং শিক্ষার্থী সহ সকল বয়সের মানুষের মনের মধ্যে একটা পরিশোধন যন্ত্র বসাতে পারাই সাফল্য, যার মাধ্যমে কোনটা ভালো কোনটা খারাপ তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব এবং যা মানসিক প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রন করবে। এই বিশ্বাস আরও বলে, সমস্যার পেটে বা আগায় আঘাত করলে সমাধান আসে না, বরং গোড়া থেকে উৎপাটন প্রয়োজন।
এ কারণেই, মোবাইল ডিভাইস কেড়ে না নিয়ে অথবা সর্বক্ষন চোখে চোখে না রেখে অন্যের মধ্যে সেই শিক্ষা প্রবেশ করাতে সচেষ্ট হয় যা মোবাইলে পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত হওয়াকেই শুধু পাপ হিসেবে চিহ্নিত করে না, বরং অপরিণত বয়সে নারী-পুরুষের প্রেমময় সম্পর্ককেও পরিত্যাজ্য বলে ঘোষনা করে। প্রবৃত্তির অনুসারী না হয়ে প্রবৃত্তিকে তার অনুসারী করে নেয়ার চেষ্টাও এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।
সুতরাং সমস্যাটা শুধু অল্পবয়স্ক শিক্ষার্থীদেরই নয়, সমস্যা সর্বস্তরে। শিক্ষার্থীরা যখাযখ শিক্ষার অভাবেই সমস্যাগ্রস্থ হয়, আর তাদের অভিভাবকরাও শিক্ষার অভাবেই তাদের সন্তানদের সমাধানের রাস্তা খোজেন ভিন্ন কোন রাস্তায়। পশ্চিমা সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানকে সমর্থন জানিয়ে তারই উপজাত সমস্যাকে বিতারনের চেষ্টা করে লাভ নেই। সচেতনতার এই-ই সময়। অন্যথায়, আমেরিকান পাই বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
৫.
“আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল ও মন্দ পথ।” সূরা বণী ইসরাঈল (মক্কায় অবতীর্ণ): (১৭ : ৩২)