সারিন্দার বেসুরো পদ

সারিন্দা রেস্টুরেন্টের খিচুড়ি

বাদ্যযন্ত্র নাকি বাগধারা

বাদ্যযন্ত্র হিসেবে সারিন্দা যতটা না প্রচলিত, তার চেয়ে বেশি প্রচলিত এর প্রবাদ – আমি বলি কী আর আমার সারিন্দা বাজায় কী! সম্ভবতঃ তার চেয়ে একটু কম জনপ্রিয় হলো ময়মনসিংহের সারিন্দা রেস্টুরেন্ট। বিশ্বাস হচ্ছে না? গুগল ম্যাপস এ এই মুহুর্তে রেটিং দিয়েছেন ৩,৬৫৮ জন। আর, হাজারের বেশি ভোট রয়েছে এমন রেস্টুরেন্ট মাত্র তিন-চারটি, যাদের মধ্যে এই রেস্টুরেন্ট বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে। সে হিসেবে, সারিন্দা রেস্টুরেন্টকে ময়মনসিংহের সবচেয়ে জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট বলা যায়, নাকি?

যারা সারিন্দাকে কেবল বাগধারাতেই চিনেন তাদের জন্য বাদ্যযন্ত্রটির পরিচয় তুলে ধরা যাক। এই বাদ্যযন্ত্রটি ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচলিত। বাংলাদেশে বাউলদের হাতে দেখা যায়। সেতার বা তানপুরার মত এই যন্ত্রেও তার থাকে। তিনটি তার। দেখতে দোতারার মতো হলেও যন্ত্রটি বাজাতে হয় ধনুকাকৃতির ছড়ের সাহায্যে। ছড় বানানো হয় ঘোড়া বা অন্য কিছু পশুর পশম দিয়ে। এছাড়া রেশমি সুতাও ব্যবহৃত হয়।

সারিন্দা রেস্টুরেন্ট

বাদ্যযন্ত্র বা বাগধারার সাথে সারিন্দা রেস্টুরেন্টের কোন যোগাযোগ আছে বলে জানা নেই। তবে, রেস্টুরেন্ট হিসেবে ময়মনসিংহের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়। ২০২২ সালে ঈদের পরে পরিবারসহ ময়মনসিংহ বেড়াতে গিয়ে প্রথমবার সারিন্দায় ভোজনের সুযোগ হয়েছিল।

সি কে ঘোষ রোডে সারিন্দা রেস্টুরেন্ট অবস্থিত। এই রাস্তাটি অত্যন্ত ব্যস্ত, যানজট লেগেই থাকে। এমনকি, রিকশা বা অটোচালকরাও অনেক সময় যেতে আগ্রহী হন না।

দোতলায় ভবনের অর্ধেকটা জুড়ে রেস্টুরেন্টটির বসার জায়গা। চমৎকার পরিবেশ। মুখোমুখি চারজন করে বসার জন্য টেবিল-সোফা। অর্ধচন্দ্রাকৃতির বসার ব্যবস্থা রয়েছে দুটি। সেখানে একত্রে আট-দশজন খেতে পারে। সব মিলিয়ে একত্রে সত্তর আশিজনের ব্যবস্থা আছে বলে মনে হলো। খাবারেও নানা ধরণের বৈচিত্র্য। আমরা তাদের স্পেশাল কাচ্চি বিরিয়ানি অর্ডার করলাম।

পনেরো বিশ মিনিট পরে স্পেশাল কাচ্চি বিরিয়ানি হাজির। পিতলের ছোট হাড়িতে করে পরিবেশন করা হয়েছে। সাথে আস্ত সিদ্ধ ডিম। সাধারণ কাচ্চির তুলনায় খাসির গোস্তের পরিমাণ বেশি হওয়াতেই সম্ভবত স্পেশাল। গরম গরম কাচ্চি, আমরাও ক্ষুধার্ত ছিলাম। ঝাপিয়ে পড়লাম।

পার্থক্যটা টের পেতে একটু সময় লাগলো। ঝাল। কাচ্চিতে ঝাল হয় এই ধারণা কখনও ছিল না। প্রথমে ভাবলাম – বোধহয় আমার জিহবায় সমস্যা। বাচ্চাদেরও ঝাল লাগছে দেখে বুঝলাম সেরকম কিছু না। আমার স্ত্রী ঝাল খেয়ে অভ্যস্ত, কিন্তু দেখলাম তারও কষ্ট হচ্ছে। কোনমতে কোল্ড ড্রিংক্স সহকারে জীবনের প্রথম ঝাল কাচ্চি বিরিয়ানি খেয়ে উঠলাম।

নেত্রকোনা থেকে ফেরার সময় ভাবলাম – লাঞ্চটা ময়মনসিংহের ভালো কোন হোটেলে করে নিবো। সাথে রুহুল কাদের-রিয়া আছে। তারা আগে ময়মনসিংহ আসেনি। রেটিং-রিভিউ দেখে সেই সারিন্দা রেস্টুরেন্টেই ফিরতে হলো।

আগের অভিজ্ঞতা ভুলিনি। অন্যদেরকেও জানিয়ে দিলাম। তাই কেউই স্পেশাল কাচ্চির অর্ডার দিল না। এবার খিচুড়ির অর্ডার হলো – স্পেশাল মাটন। রিয়া বিরিয়ানি-খিচুড়ির দিকে গেলো না, মোরগ পোলাওয়ের অর্ডার করলো।

খিচুড়ি-মোরগ পোলাও পরিবেশন করা হলো। সুঘ্রাণ ভেসে বেড়াচ্ছে। ভুনা খিচুড়ি থেকে ট্যাঙ্কের কামানের মতো খাসির নলা বেরিয়ে আছে। মুখে দিলাম এবং দমে গেলাম। সমস্যাটা কি স্পেশাল আইটেমে? নাকি কপালে? এটায়ও ঝাল! স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশিই।

হয়তো ময়মনসিংহের লোকেরা ঝাল খেতেই ভালোবাসে। অথবা, এই রেস্টুরেন্ট এর খাবারে ঝাল থাকে বলেই সবাই খুব মজা করে খায়। কিন্ত আমাদের মুখে তো আর সেই ঝালে তৃপ্তি হলো না। খিচুড়ির পরে তাই ফালুদা খাওয়া হলো। শুকরিয়া, সেখানে ঝাল ছিল না।

মোরগ পোলাওয়ের সাদা পোলাওতে ঝাল ছিল কিনা, সেটা রিয়া নিশ্চিত করতে পারেনি।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *