মাটিকে যারা জীবন্ত করে তোলে

খুব সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে একটি খবর গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করা হচ্ছে। খবরটা হলো – দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডিপ টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছে না, ফলে কৃষিকাজ থেকে শুরু করে ঘর-গেরস্থালি কাজকর্ম, সব কিছুতেই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সেই এলাকার বাসিন্দারা। ব্যাপারটা দুশ্চিন্তা জাগানোর মতো খবর। যেখানে ওয়াসার মত পানি সাপ্লাইয়ের কোন ব্যবস্থা নেই, সেখানে প্রায় সবাইই ডিপ টিউবওয়েলের উপর নির্ভরশীল৷ ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেলে এর সহজ কোন সমাধান নেই।

বাংলাদেশের গ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেল যে ক্রমশই নেমে যাচ্ছে এ বিষয়ে পরিবেশবাদীরা বেশ কিছুদিন ধরেই সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছেন। দৈনিক সমকালে গত বছর প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানিসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর ভূগর্ভের পানির স্তর দুই থেকে পাঁচ মিটার করে নিচে নামছে। ১৯৬৮ সালে যখন বাংলাদেশে ডিপ টিউবওয়েল বসানো শুরু হয়, তখন সর্বোচ্চ ৫০ ফুট নিচে টিউবওয়েল বসিয়েই পানি পাওয়া যেত। এখন ১৬০ ফুট বসিয়েও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বিএডিসির ২০১৬ সালের গ্রাউন্ড ওয়াটার জোনিং ম্যাপে দেখা যায়, দেশের মধ্যভাগ ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিস্তৃত ৪৮ জেলার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৫ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে। এমনকি ‘ধান-নদী-খাল, এই তিনে বরিশালে’ও পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, গত ৫ বছরে বরিশাল নগরীতে সর্বোচ্চ ১৬ ফুট ও নগরীর বাইরে ৬ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে গেছে পানির স্তর।

ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। প্রধান কারণগুলোর একটি হলো অপরিকল্পিতভাবে ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন ও পানি উত্তোলন, অন্যটি হলো বন ধ্বংস। কোন এলাকায় যখন নির্বিচারে গাছপালা উজার করা হয় তখন সবার অলক্ষ্যে পানির স্তরও নিচের দিকে নামতে থাকে, মরুকরণ ঘটতে থাকে। এক সময় দেখা যায়, সেই মাটিতে চাষাবাদও করা সম্ভব হচ্ছে না। তখন কৃত্রিম উপায়ে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের মাধ্যমে, পানি সরবরাহ করতে হয় যা সেই পানির স্তরকে আরও নীচে নামিয়ে দিতে সহায়তা করে৷ ফলাফল, সেই এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হয়। পানির স্তর অনেক নীচে নেমে গেলেও যে সেই ভূমিকে পুনরায় জীবন্ত করে তোলা যায় তার উদাহরণ দেখিয়েছেন টেক্সাসের র‍্যাঞ্চার ডেভিড ব্যাম্বারগার।

আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে ডেভিড ব্যাম্বারগার ৫৫০০ একর জমি কিনে একটি প্রকল্প শুরু করেন। তিনি যে জমি কিনেছিলেন সেটা টেক্সাসের অন্যতম নিকৃষ্ট জমি ছিল। সেখানে কোন ঘাস ছিল না, গাছ ছিল না, অল্প কিছু পাখির দেখা পাওয়া যেত। সবচেয়ে বড় যে ব্যাপার, সেখানে পানির প্রচন্ড অভাব ছিল। পানির জন্য তিনি সে সময় সাতটি কূপ খনন করেছিলেন, প্রতিটি ৫০০ ফুট গভীর, কিন্তু কোনটি থেকেই পানি পাওয়া যায় নি। এই জমিতে প্রাণ ফিরিয়ে আনার বিশাল এক সংগ্রামে তিনি লিপ্ত হলেন।

টেক্সাসের মরুভূমিকে জঙ্গলে পরিণত করেছেন যিনি, সেই ডেভিড ব্যাম্বারগার, পার হচ্ছেন ছোট্ট একটি ঝর্ণা

ডেভিডের জীবনে সংগ্রাম ছিল, সফলতাও ছিল। তিনি দরিদ্র একটি পরিবার থেকে এসেছিলেন। দরজায় দরজায় ঘুরে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বিক্রি করেছেন জীবনের শুরুতে। তারপর ফ্রাইড চিকেন বিক্রির ব্যবসায়ে নিজেকে জড়িয়ে নেন এবং বিপুল সম্পদের মালিক হন। পুলিৎজার বিজয়ী ঔপন্যাসিক লুই ব্রমফিল্ডের একটি উপন্যাস ‘প্লিজেন্ট ভ্যালি’ পড়ে তিনি অত্যন্ত প্রভাবিত হন। উপন্যাসে পরিত্যক্ত একটি জমিকে নতুন জীবনে ফিরিয়ে আনার গল্প বলা হয়েছিল। তার কেনা ৫৫০০ একর জমিতে তিনি সেই উপন্যাসেরই বাস্তব প্রতিফলন ঘটান এবং মাত্র আড়াই বছরের ব্যবধানে সেই জমিতে, যেখানে ৫০০ ফুট গভীর কূপেও পানি পাওয়া যায় নি, সেখানে পাথর ফুঁড়ে পানির ঝরনাকে (ওয়াটার স্প্রিং) পুনরায় জীবন্ত করতে সক্ষম হন। কিভাবে সম্ভব হয়েছিল এই কাজ?

ঘাস লাগানোর মাধ্যমে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শে তিনি জমিতে নেটিভ ঘাসের চাষ শুরু করেন। ঘাস না থাকার কারণে বৃষ্টির পানি জমির অভ্যন্তরে প্রবেশ করতো না, মাটি থাকতো খটখটে শুকনো। ঘাসের কারণে বৃষ্টির পানি মাটির অভ্যন্তরে জমা হতে থাকে যা স্পঞ্জের মত পানি ধরে রাখে এবং জমে থাকা পানিই একসময় ঝরনার আকারে বের হয়ে আসে। শুষ্ক জমিতে পানির ছড়া মানে প্রাণের উপস্থিতি। যে জমিতে প্রাণ আছে সেখানে আরও অনেক কিছুই হবে।

পঞ্চাশ বছরের ব্যবধানে সেই ৫৫০০ একর জমিতে বিশাল পরিবর্তন ঘটেছে। সেখানে এখন শুরু পানির ছড়াই দেখতে পাওয়া যায় না, সেখানে রীতিমত লেক রয়েছে, আড়াইশর বেশী পাখির প্রজাতি রয়েছে। ডেভিড ব্যাম্বারগারের এই উদ্যোগ স্বীকৃতিও পেয়েছে। সারা বিশ্বে তিনি কনজারভেশনিস্ট হিসেবে বিখ্যাত হয়েছেন, অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। তার র‍্যাঞ্চের ঘটনা নিয়ে একটি বই লেখা হয়েছে, নাম Water From Stone: The Story of Selah, Bamberger Ranch Preserve।

ডেভিড ব্যাম্বারগার যা করেছেন এর জন্য তিনি অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য কিন্তু এ কথাও মানতে হবে জনবসতিহীন একটি স্থানে পানির অভাবের প্রভাব এবং জনবসতিপূর্ণ একটি স্থানের পানির অভাবের প্রভাবে বিশাল পার্থক্য রয়েছে। তানজানিয়ার একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ কোকোটা, যার আশেপাশে লবনাক্ত পানিতে পূর্ণ সমুদ্র এবং দ্বীপে নেই কোন সুপেয় পানির উৎস, সেখানে বন উজারের প্রভাব অত্যন্ত মারাত্মক এবং জীবন ও অস্তিত্বের জন্য হুমকীস্বরূপ। তা সত্ত্বেও তারা এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার চ্যালেঞ্জ নিজেরাই মোকাবেলা করছে।

কোকোটা অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি দ্বীপ যার আয়তন মাত্র এক বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা শ পাঁচেকের কিছু কম বা বেশী। দ্বীপে জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ খুব বেশি না থাকায় কোকোটাবাসী শত শত বছর ধরে নিজের দ্বীপের গাছপালা নিজেরাই কেটে উজার করেছে। তার উপর, তাদের জীবিকার প্রধান উৎস মাছ ধরাও বাধাগ্রস্ত কারণ মাছের পরিমাণ কমে গিয়েছে। দারিদ্র‍্যপীড়িত এই দ্বীপে বাচ্চাদের কোন স্কুল ছিল না। সুতরাং এই দ্বীপবাসীর ভবিষ্যত যে খুব সঙ্কটপূর্ণ সে বিষয়ে কোন সন্দেহ ছিল না। এরকম সময়ে এক দশক আগে মোবারক মুসা ওমর নামের এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় গ্রামটি ধ্বংসের মুখ থেকে ফিরে এসছে।

মোবারক মুসা ওমর
তানজানিয়ার একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ কোকোটায় সুপেয় পানির কোন উৎস ছিল না, ছবির হাস্যোজ্জল এই ভদ্রলোক, মোবরাক মুসা ওমর, সেই ব্যবস্থা করেছেন।

২০০৭ সালে ওমর তার বন্ধুর বাড়ি কোকোটায় গিয়ে সুপেয় পানির দুষ্প্রাপ্যতার বিষয়টি লক্ষ্য করে। কানাডার ২১ বছরের যুবক জেফ যে কিনা একজন ট্রি-প্ল্যান্টার এর সাথে ওমরের পরিচয় ছিল। দুজনে মিলে কোকোটা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার কাজ শুরু করে। কোকোটার জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি গাছ লাগানোর আন্দোলন খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। গাছের চারা তৈরীর জন্য সুপেয় পানির প্রয়োজন, অথচ কোকোটায় তা দুষ্প্রাপ্য, ফলে এই কাজটি তাদেরকে করতে হয়েছে অন্যস্থানে। তারপর সেই চারা কোকোটায় নিয়ে এসে লাগানো, যত্ন করা এবং বড় করে তোলা।

ওমর এবং জেফ কোকোটায় প্রথম স্কুলটিও স্থাপন করে। সাথে তৈরী হয় ওয়াটার রিজার্ভার, উদ্দেশ্য রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং। অর্থ্যাৎ, বৃষ্টির পানি ধরে রেখে সুপেয় পানির অভাব পূরণ করা। এই ওয়াটার রিজার্ভারে ২.৫০ লক্ষ লিটার পানি সংরক্ষণ করা সম্ভব। কোকোটার জনগণও সহায়তা করেছে। তারা তাদের পেশায় পরিবর্তন এনেছে, কৃষিকাজে মনযোগী হয়েছে এবং বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে বেশ কিছু ফলের উৎপাদন করছে। নিজেদের সাফল্যে এখন তারা কিভাবে মাছের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব সে বিষয়ে চিন্তা করছে।

ওমর এবং জেফ যে কাজটি করেছেন তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের বড় একটি অংশ তারা পেয়েছেন বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে। অমুনাফাভোগী প্রতিষ্ঠানের এ মডেল তৃতীয় ও উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোতে বেশ প্রচলিত। তবে ভারতের সুভেন্দু শর্মা এর ব্যতিক্রম। তিনি বাণিজ্যিকভিত্তিতে বনায়ন করেন। অর্থ্যাৎ, আপনি যদি প্রয়োজনীয় অর্থ তাকে দিতে পারেন, তবে তিনি এর বিনিময়ে আপনাকে একটি বন তৈরী করে দিবেন। এই বন হতে পারে আপনার বাড়ির আশেপাশে, আপনার অ্যাপার্টমেন্টে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিংবা শহরের পার্কে!

শুনে হয়তো অবাক হয়ে যাবেন। কিন্তু সুভেন্দু শর্মা বনের সংজ্ঞাকেই পাল্টে দিয়েছেন। সাধারণভাবে ঘন গাছপালায় ভর্তি কোন জায়গায় যেখানে বন্য জন্তুরা ঘুরে বেড়ায় বা বসবাস করে এমন জায়গাকে বন বলা হলেও সুভেন্দুর মতে বন হলো ঘন গাছপালায় ভর্তি এমন জায়গা যেখানে সহজে প্রবেশ করা যায় না। তার এই সংজ্ঞা অনুযায়ী বন তৈরীর জন্য যে সুবিশাল জায়গার প্রয়োজন হবে তা কিন্তু নয়।

শুভেন্দু শর্মা
এই হলেন শুভেন্দু শর্মা যিনি সারা বিশ্বে কমপক্ষে ২৫টি বন তৈরী করেছেন।

সুভেন্দু শর্মা একজন ইকো-এন্ট্রাপ্রিনিউর, তার প্রতিষ্ঠানের নাম এ্যাফোরেস্ট। এক দশক আগে তিনি ছিলেন একজন ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রকৌশলী যিনি টয়োটা কোম্পানিতে কাজ করতেন। সেখানে তিনি ড. আকিরা মিয়াকির সাথে পরিচিত হন যিনি টয়োটার কারখানায় একটি বন তৈরী করেছিলেন। এই বনের কনসেপ্ট বেশ প্র্যাকটিক্যাল কারণ এই ধরনের বন দশগুণ দ্রুত বড় হয়, ৩০ গুণ বেশি ঘন হয় এবং ১০০ গুণ বেশি বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়। আকিরা মিয়াকির সহায়তায় সুভেন্দু শর্মা তার বাড়ির পেছনে প্রথম বনায়ন করেন। কত বড় বন? ৯৩ বর্গমিটার জায়গায় ৪২ ধরনের মোট ৩০০ টি বিভিন্ন ধরনের গাছ!

২০১১ সালে সুভেন্দু তার প্রতিষ্ঠান এ্যাফোরেস্ট এর যাত্রা শুরু করেন। বর্তমানে সারা বিশ্বের কমপক্ষে পাঁচটি দেশে ২৫টি বন স্থাপন করেছেন এবং এর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে। সুভেন্দুর তৈরী বনের সবচেয়ে বড় সফলতা কি? তিনি সুপরিকল্পিতভাবে যে বন তৈরী করেন সেখানে বায়োডাইভার্সিটি সাধারণ বনের চেয়ে অনেক বেশি, নানা হিসেব নিকেশের মাধ্যমে গাছপালা নির্বাচন করে রোপন এবং পরিচর্যা করা হয় বলে অল্প সময়ের ব্যবধানে এই বনের গাছপালা, মাটি ইত্যাদি নিজেদের দেখভাল নিজেরাই করতে শুরু করে। ফলাফল? যে বন তৈরী হতে ১০০ বছর সময় লাগার কথা সেই বন মাত্র ১০ বছরে তৈরী হয়!

বাংলাদেশের পরিবেশে যেভাবে বিপর্যয় ঘটছে তাতে এর পরিণতি হয়তো পঞ্চাশ বছর আগেরকার টেক্সাসের ব্যাম্বারগার র‌্যাঞ্চের অবস্থায় পৌছুবে, কিংবা তানজানিয়ার কোকোটা দ্বীপের মতো। ডেভিড ব্যাম্বারগার, মোবারক মুসা ওমর এবং সুভেন্দু শর্মার মতো মানুষ এই দেশে যত বেশি হবে, বাংলাদেশকে মরুভূমির দিকে নিয়ে যাওয়াকে আমরা ততটাই দীর্ঘায়িত করতে সক্ষম হবো ।

আরও দেখতে পারেন
১। ইউটিউবে ডেভিড ব্যাম্বারগারের গল্প
২। ইউটিউবে কোকোটার গল্প
৩। শুভেন্দু শর্মার টেড টক

দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *