লালবাজারের গোয়েন্দা শবর দাশগুপ্ত, তার সাথে আমার পরিচয় অনেকটা হুট করে, অন্যান্য গোয়েন্দাদের সাথে পরিচয়ের মত নয়। এ দেশীয় তিন গোয়েন্দা, মিসির আলী, কুয়াশা কিংবা মাসুদ রানা অথবা ওই দেশের ফেলুদা কিংবা ব্যোমকেশ বা দূর দেশের শার্লক হোমস, জেমস বন্ড ইত্যাদি – এদের কারও সাথেই হুট করে পরিচয় নয়। তাদের নাম শুনেছি, তাদের সম্পর্কে অল্প বিস্তর জেনেছি, তাদের প্রতি আগ্রহ তৈরী হয়েছে এবং তারপর তাদের সাথে পরিচিত হয়েছি – সকলের সাথেই একই ফরম্যাটে সাক্ষাত। কেবল পশ্চিমবঙ্গের লালবাজারের গোয়েন্দা শবর দাশগুপ্তের সাথে আগে সাক্ষাত, তারপর পরিচয় এবং তারও পরে গিয়ে তার খ্যাতি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। একটু ভেঙ্গে বললে, শবর দাশগুপ্তের স্রষ্টা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় যে কোন গোয়েন্দা চরিত্র সৃষ্টি করেছেন কিংবা শবর নামে যে কোন গোয়েন্দা আছে তা না জেনেই বই পড়তে গিয়ে শবরের সাথে সাক্ষাত এবং সাধারণ আর সব চরিত্রের মত একজন ভেবেই বিদায়। পরবর্তীতে আবার শবরের সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমেই জানতে পারলাম – ইনি নিয়মিত গোয়েন্দা, হুটহাট করে তদন্তে নামেন নি।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখার চরম ভক্ত ছিলাম এককালে, সম্ভবত এখনো আছি। অবশ্য বেশ কয়েক বছর ধরে তার কোন বই পড়া হয় না, সুতরাং ভক্ত থাকার যোগ্যতা আছে কিনা সে নিয়ে আমার নিজেরই সন্দেহ আছে। গোয়েন্দা শবরের বইগুলো ভালো লাগার পেছনে কারণ হল এর উপস্থাপন। অন্যান্য গল্পে যেমন ঘটনার-চরিত্রের-জায়গার বিস্তারিত বর্ণনা থাকে, গোয়েন্দা শবরের গল্পে তা নেই। এর বৈশিষ্ট্য হল সংলাপের মাধ্যমে গল্পের উপস্থাপন। শবর আর কোন ব্যক্তির সাথে কথোপকথন, চলতেই থাকে, কথার ধরন থেকে বুঝে নিতে হয় কে কার সাথে কথা বলছে। এই কথা বলতে বলতেই এক সময় কেসের সুরাহা করে ফেলে শবর, সব মিলিয়ে হয়তো সামান্য কয়েক পৃষ্ঠা পাওয়া যায় যেখানে সংলাপ নেই। কেসের সমাধানে সরব নিজে গবেষনা করে না, ম্যাগনিফায়িং গ্লাস দিয়ে মনযোগ দিয়ে কিছু দেখে না, অন্যের চোখ এড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন এভিডেন্স পকেটেও পুরে না। যেহেতু সে সরকারী গোয়েন্দা, সেহেতু তার প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সরকারেরই অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট থেকে সরবরাহ করা হয়, শবর তার বিশ্লেষন করে অপরাধীকে শনাক্ত করে। ও হ্যা, শবরের তেমন নির্দিষ্ট কোন সহকারীও নেই বলে মনে পড়ছে।
কিছুদিন আগে সাম্প্রতিক ডটকমে গোয়েন্দা শবরকে নিয়ে একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। প্রবন্ধকার সেখানে শবর দাশগুপ্ত সংক্রান্ত বইয়ের একটি অপূর্ণাঙ্গ তালিকা উপস্থাপন করেছিলেন। আধাঘন্টা গুগল করার পর জানা গেল শীর্ষেন্দুর রহস্য সমগ্র নামে একটা বই প্রকাশিত হয়েছে – বাংলাদেশে পাওয়া যায় কিনা বলতে পারছি না – সেখানে শবরসহ আরও রহস্যগল্পগুলো স্থান পেয়েছে। সেখানে যে গল্পগুলো আছে তার সবগুলোই শবরকে নিয়ে কিনা নিশ্চিত করে বলতে পারি না। পদক্ষেপ, রূপ, মারীচ, ঈগলের চোখ
১/ ঈগলের চোখ
২/ মারীচ
৩/ ঋণ
৪/ আলোয় ছায়ায়
৫/ সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে
৬/ প্রজাপতির মৃত্যু ও পুনর্জন্ম
৭/ পদক্ষেপ
৮/ রূপ
শবর দাশগুপ্ত চরিত্রকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত দুটি ছবি নির্মিত হয়েছে। দুটোই পশ্চিমবঙ্গে – একই পরিচালক কর্তৃক। এবার শবর এবং ঈগলের চোখ। একটি দেখা হয়েছে। বাকীটাও দেখার ইচ্ছে। বাকীগুলোও পড়ার ইচ্ছে। দেখা যাক – কবে সম্ভব হয়।