রিফাতের জ্বর আসছে গতরাতে। আজ সকালেই তার আর তার আম্মুর বাড়ি চলে যাওয়ার কথা ছিল। গতরাতে আমার কাছ থেকে বিদায়ও নিয়েছে। কিন্তু রাতেই জ্বর। ১০২ ডিগ্রি। বিদায় নেয়ার পরও যাওয়া হয় নাই বলে তারা একটু লজ্জিত, সামনে আসতে চায় না। কিন্তু জ্বরো ব্যক্তির মাথায় হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করতে হয় – ‘এখন কেমন লাগছে’, তাই আমিই রিফাতের কাছে গেলাম।
রিফাত এবার এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ছে। আমি জ্বর সংক্রান্ত কুশলাদি জিজ্ঞেস করলাম, কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখলাম। জ্বর আছে। ওর আম্মু থার্মোমিটার নিয়ে আমাকে দিলেন জ্বর মাপতে। রিফাতকে দিলাম জ্বর মাপার জন্য। সে বগলে থার্মোমিটার দিয়ে চোখ বন্ধ করল আর আমি একটা শিশুতোষ বইয়ের পাতা উল্টাতে থাকলাম। মিনিট পাঁচেক বাদে দেখি সে থার্মোমিটার দিয়েছে উলটো করে, মানে পারদের অংশ বাইরের দিকে। সে জ্বর মাপতে জানে না।
আমি আঁতেল লোক, জ্বর মাপা বাদ দিয়ে তাকে জ্বর মাপা শিখাতে শুরু করলাম। থার্মোমিটার কি দিয়ে তৈরি, মানুষের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কত, গরম ভাতে থার্মোমিটার দিলে কি হবে, ঝাঁকি দিয়ে কিভাবে তাপমাত্রা কমাতে হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপর দুই তিনবার পরীক্ষাও নিলাম, সে সফলভাবে পাশ করতে পারলো। এবার ফাইনাল পরীক্ষা – তার নিজের জ্বর সে নিজে মেপে জানাবে কত হল।
মাপছো?
জ্বি।
কত হইল?
একশ ছয়।
মানুষের এত জ্বর সাধারণত হয় না। ১০২ এর আশে পাশে থাকবে, ভালো করে দেখ।
একশ চল্লিশ?
উহু। থার্মোমিটারে ৯৪ থেকে ১০৮ পর্যন্ত দেয়া আছে, ১৪০ হবে না, ভালো করে দেখ।
অ। তাহলে একশ চার?
এত হবে না। কই দেখি? আররে, জ্বর তো একশ চারের বেশি। আম্মা, আম্মা! তাড়াতাড়ি রিফাতের মাথায় পানি দেন।
রিফাতের মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে একটু পর।