দেশের অখাদ্য নায়িকারা তাদের সর্বস্ব দিয়ে একটা বড় টাকা ওয়ালা প্রডিউছার জোগাড় করে , বায়না একটাই, তুই যেমনে পারিস যে ভাবে পারিস সব নিয়ে নে ভাই , কোলকাতার যে কোন একটা নায়ক আমার ফিল্মটাতে চাই। (সৈকত নাসির)
উপর্যুক্ত মন্তব্যটি করেছেন নবীন কিন্তু দুরন্ত সম্ভাবনাময়ী চলচ্চিত্র পরিচালক সৈকত নাসির। জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত এবং তারিক আনাম খান, মাহিয়া মাহি ও শিপনকে নিয়ে তিনি বহুদিন পর একটি রাজনৈতিক গল্পসমৃদ্ধ চলচ্চিত্র দেশা দ্য লিডার নির্মান করে আলোচনায় এসেছেন। বর্তমানে তার পরবর্তী সিনেমা পুলিশগিরি নির্মান নিয়ে ব্যস্ত আছেন। ব্যস্ত আছেন পুলিশগিরির পরের সিনেমা নির্মানের প্রস্তুতি নিয়েও। এমন সময় তিনি এ মন্তব্য করেছেন যখন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে কলকাতার নায়কদের আনাগোনা বেড়েছে, প্রতিটি ছবিতে না হলেও এই মুহুর্তে গোটা দশেক চলচ্চিত্রে কলকাতার অভিনেতারা নায়ক হিসেবে অভিনয় করছেন বা করতে যাচ্ছেন। সৈকত নাসিরের মন্তব্যটি চলচ্চিত্রের দৈন্যদশাকে তুলে ধরার জন্য যথেষ্ট।
সৈকত নাসিরকে চলচ্চিত্র পরিচালনার সুযোগ দিয়ে লাইম লাইটে নিয়ে এসেছে যে প্রতিষ্ঠান সেই জাজ মাল্টিমিডিয়াও একই পথে চলছে। ঠিক হল না, বরং বলা ভালো, সেই পথ তৈরী করেছে। অগ্নি ২ তে ওমের বিপরীতে মাহিয়া মাহি, আশিকীতে অঙ্কুশের বিপরীতে নুসরাত ফারিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। নুসরাত ফারিয়ার মত একটি ছবিও মুক্তি পায় নি এমন নায়িকা থেকে শুরু করে একটি বা দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে এমন নায়িকারা কলকাতার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে পত্রিকার পাতায় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করে নিচ্ছেন। বছর শেষে দেখা যাচ্ছে – বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি কোন দিক থেকে সফলতার মুখ দেখতে না পারলেও নায়িকা উৎপাদনে বিপুল সফলতা অর্জন করেছে, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েও যাচ্ছে এবং বিদেশে রপ্তানীও করতে পারছে। কিন্তু নায়িকার উৎপাদন এত বেড়ে যাওয়ার কারণ কি?
কারণ ঠিক তাই যা আপনি ভেবেছেন। এই উপমহাদেশে যে সিনেমাগুলো নির্মিত হয় তার কয়টায় নায়িকা খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র? কতগুলো সিনেমায় নেচে-গেয়ে গ্ল্যামার আর শারীরিক রূপ-সৌন্দর্য্য প্রকাশ ছাড়া নায়িকার করার মত কাজ থাকে? ছবিতে প্রেম খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ অংশ নয়। প্রেম প্রয়োজন, কারণ প্রেমের কারণে পাঁচ-ছয়টা গান সম্ভব। প্রেম প্রয়োজন, কারণ এর কারণে প্রেমিক নায়কের তিন-পাঁচটা অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করা সম্ভব। প্রেম প্রয়োজন কারণ এর অভাবে বিরহদৃশ্য এবং গান উপস্থাপন করা প্রায় অসম্ভব। প্রেমের প্রয়োজনে নায়িকার উপস্থিতি, কিন্তু নায়িকার উপস্থিতিতে বাকী যত কর্মকাণ্ড তাতে নায়িকার উপস্থিতি সিনেমার দর্শকেরই মত – হাত পা গুটিয়ে দেখতে থাকা। ফলে কলকাতার নায়কের বিপরীতে তো বাংলাদেশের নায়িকা দুধভাত – অন্ততঃ দেশী নায়িকার হাত ধরে বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করা সম্ভব হয়।
অতএব, বাংলাদেশী নায়িকা অভিনয় করবে কলকাতার নায়কের বিপরীতে – এই সংবাদে খুব তৃপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই যদি আপনি বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের উন্নয়ন নিয়ে ভাবেন। সত্যিটা হল – এই দেশের বাজারটা ওই দেশের নির্মাতাদের প্রয়োজন। দেশের আম-জনতাকে তৃপ্ত রেখে বাজারে প্রবেশ করার সবচে সহজ তরিকা হল নায়িকার হাত ধরা। সেটাই করছে কলকাতা। আফসোসের ব্যাপার হল, সৈকত নাসির যেমনটা ইঙ্গিত করেছেন, এই নায়িকারা এতটাই বোকা, বুঝতেই পারছে না – কলকাতার নায়ক এমনিতেই তার হাত হাতড়ে খুঁজবে, বরং হাতটুকু ধরতে দেয়ার জন্য নিজে থেকেই ঝাপিয়ে পড়ছে।
যাদের বোধ এই স্তরে, তাদের দিয়ে কি বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের উন্নয়ন সম্ভব? চিন্তার বিষয়!
বাংলা সিনেমা মানেই ৩-৪টা গান ৫-৬ টা মারামারি আর শেষে নায়ক নায়িকার মিলন।
আমরা এখনো এ ধারা থেকে বের হতে পারছিনা।কিছু বল্লেই পরিচালকরা সিনেমার বাজেট এর দোষ দেয়।ভালো সিনেমা করতে কি এমন বাজেট লাগে।বাজেট তো লাগে ভুং ভাং ছবি করতে।সে দিক থেকে কোলকাতায় যেমন সম্পুর্ন
ব্যবসায়িক সিনেমা হচ্ছে ঠিক তেমনি আর্ট ফিল্ম ও হচ্ছে। আমাদের এখানে কেন হয় না?
বাজেট?
নাকি ভালো ফিল্ম ডাইরেক্টর এর অভাব?
অভাবটা সদিচ্ছার, শুনতে খারাপ লাগলেও কথাটা সত্যি। বাণিজ্যিক সিনেমার জগৎটা এমন্সব লোকের হাতে যারা কেবল বর্তমানকে নিয়েই ব্যস্ত। নিজেদের ভূমিকার কারণে যে তারা তাদের জগতের ক্ষতি করে যাচ্ছে, নিজেদের মালিকানা হারাচ্ছে সেটা বুঝতেই চাচ্ছে না। সাময়িক টাকার জন্য পুরো ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংস করতেও তাই বাধছে না। এরা নিজেদেরকে উন্নত করতে চায় না, নতুনদের ঢুকতেও দিতে চায় না। অল্প কিছু এজেন্ট বা দালাল সিনেমার প্রদর্শন নিয়ন্ত্রন করে, ফলে আপনি ভালো গল্পের সিনেমা নির্মান করলেও প্রদর্শন করতে পারবেন না। এছাড়া রয়েছে এদেশের বিশাল পরিমান অশিক্ষিত গর্দভ শ্রেণির দর্শক। এরা চায় তারকা, চায় বড় বাজেটের মশলাদার সিনেমা। ফলে আপনার সিনেমা খরচটাই তুলে আনতে পারবে না। পুরো ব্যাপারটাই একটা ভিশাস সাইকেল। মুক্তি হবে কিভাবে আমি নিজেও আসলে জানি না।
ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।
ভাই লেখাটি কি বিএমডিবি ব্লগে দেয়া যায়? ওই সাইটে লগইন করা সহজ। ফেসবুক দিয়েও পারবেন।
ধন্যবাদ আগ্রহ প্রকাশের জন্য। বিএমডিবি-তে দিয়েছি, কাইন্ডলি পাবলিশ করবেন।
একদম মনের কথাটি বলেছেন ।
এইরকম অবস্থায় কি করা প্রয়োজন তা কি কারও বোধগম্য হচ্ছে না ?
আধুনিকতার কথা বলে ফিল্মে যে আবারও নোংরামি প্রবেশ করানো হচ্ছে তা কি কারও চোখে পড়ছে না ?
জাজ তো বাংলাদেশের ফিল্মে বিকিনি নিয়ে এসেছে এবং খুব সুকৌশলে আম জনতাকে খাইয়েও দিল , কেউ দেখল না !
ইরানের চলচ্চিত্রের ইতিহাস খুবি পুরনো তারা অনেক আধুনিক ও হয়েছে এবং তারা একটার পর একটা মাস্টারপিস বানায়, অস্কারেও দিব্যি যায়, অস্কার ও পায় , ওখানে তো এখনও বিকিনির প্রয়োজন পড়ে নি ?
কাগজে পত্রে না হোক বেশ ভালভাবেই যে ভারতীয় বিগড়ে যাওয়া আগ্রাসন আমাদেরকে উঠতে- বসতে পেয়ে বসেছে তা এইসব কর্মকাণ্ড দিয়ে দিব্যি বুঝা যায় ।
এইসব অশ্লীলতার এখানেই শেষ চাই, খারাপের চাইতে না থাকাই ভাল , একবার এই অশ্লীলতার আগ্রাসন মোকাবেলা করতে অনেকেরই দারুনভাবে কষ্ট করতে হয়েছে ,
এখন আবার কি ওই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে ?
যদি তাই হয় তবে এগুলোর পিছনের মানুষ গুলোকে সমূলে উথপাটন করা উচিত ।
অনেক খারাপ লাগে ভাইয়া এই সমস্ত কর্মকাণ্ড দেখলে ।
আমাদের দেশে তো কিছুর অভাব আছে বলে মনে হয় না একবারও ,
এত সমৃদ্ধ সংস্কৃতি থাকার পরও কেন আমাদেরকে অন্য দেশের আগ্রাসনে পেয়ে বসবে ? কেন ?
দেরী হয়ে গেল রিপ্লাই দিতে, দুঃখিত ফারহান খান।
এই জায়গায় আসলে করার মত ভূমিকা রাখতে পারে সরকার। যারা পুলিশের ব্যবহার নিয়ন্ত্রন করতে পারে, তারা বিকিনির ব্যবহার নিয়ন্ত্রন করতে পারবে না তা তো নয়।
হয়তো প্রচলিত ধারার বাহিরে গিয়ে কিছু করা প্রয়োজন – এফডিসির ভেতরে থেকে সিনেমা বানিয়ে পরিবর্তন করা সহজ না। এদের নানা ধরনের সমস্যা আছে। অর্থ যেখানে প্রধান নিয়ামক, সেখানে সংস্কৃতি রক্ষা করা কঠিনই বটে।
বাংলা আর কলকাতার বিনোদনের আর বিস্তারিত খবর জানতে ক্লিক করুন।
বাংলা সিনেমাতে আসলে কোন ক্রিয়েটিভিটি নাই।তারা শুধু অন্যের কপি করে আর মার্কেটে অাসতে চায়।বাংলা সিনেমাতে ক্রিয়েটিভিটি আনা উচিত।