বেগার খাটা বললে লোকে কি বুঝে? বিনা পয়সায় পরিশ্রম করা। অথচ ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছর আগে বেগার খাটা উৎসব বেশ আনন্দের সাথে উদযাপন করা হতো। কিভাবে?
সাধারণত যে অঞ্চলে পাটের চাষ হয়, সেখানে এই শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। পাট চাষের সময় বৃস্টি হলে ক্ষেতে এক ধরনের নিড়ানী দিতে হয়। যারা অবস্থাসম্পন্ন কৃষক তারা এ সময় বেগার খাটার ডাক দিতেন। বেগার খাটার আয়ু একদিন। ওই একদিন বাকি সব কৃষক নিজের জমি চাষ না করে এক কৃষকের জমি নিড়ানি দিবে, সকাল থেকে শুরু করে শেষ না হওয়া পর্যন্ত। এই যে কৃষকরা সারাদিন পরিশ্রম করলো এর কোন নগদ বা বিনিময় মূল্য নেই, আছে উপহার, এবং সেটা খাবার।
সাধারণত দুইবার খাবার দেয়া হয়। প্রথমটা ক্ষেতে থাকাকালীন, পিঠা বা এই জাতীয় কিছু। পরের খাবার দেয়া হয় রাতে। মূলত ওটাই বেগার খাটার প্রধান পুরস্কার। তিন চারপদ খাবার থাকতো। ভাত, সবজি, ডাল এবং মুরগির মাংস। সামর্থ্য অনুযায়ী কেউ কেউ মিস্টান্ন জাতীয় কিছু আয়োজন করতো। এই খাবারের বৈশিষ্ট্য হল – পদ কম হোক বা বেশী, খাওয়ার কোন সীমা বাধা থাকতো না। যে যত পারে খাবে, কেউ বাধা দেবে না।
সময়ের বিবর্তনে এই উৎসব প্রায় হারিয়ে গিয়েছে। হয়তো কোথাও কোথাও এই উৎসব এখনো হয়। ভেবে দেখা যায় এরকম একটি অনুষ্ঠানের সামাজিক গুরুত্ব আসলে কত বেশী। দল বেঁধে যে মানুষগুলো বেগার খাটে, কিংবা খায়, সেই মানুষগুলোর মধ্যে বন্ধন প্রতিমুহুর্তই শক্তিশালী হয়। একই সাথে – যে স্বচ্ছল ব্যক্তিটি বেগার খাটিয়ে পেট ভরিয়ে খাওয়াচ্ছে সেই মানুষটির সাথে দু্রত্ব মোচন হয় প্রতি বছরই। জানা গেল, কাউকে বেগার খাটার জন্য ডাকা হলে না আসা ছাড়া তার আর কোন উপায় থাকতো না। ফলে চাইলেও সমাজ থেকে দূরে থাকা সহজ হয় না।
আজই জানা গেল বেগার খাটা নামের এই উৎসবের কথা। যার কাছ থেকে জেনেছি তিনি ফরিদপুর অঞ্চলের লোক। শোনার পর থেকে বেগার খাটা এক উৎসবে যোগ দেয়ার খুব আগ্রহ বোধ করছি। আছেন নাকি কেউ আমাকে বেগার খাটানোর?