মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ধর্ষক এবং ধর্ষিতার মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে – এমন একটি সংবাদ বেশ আলোড়ন তুলেছে। সংবাদে প্রকাশ, আসমা নামে এক ভদ্রমহিলাকে তারই গ্রামের আলমগীর উত্যক্ত করেছে বহুদিন। তারপর তাকে ছলনা করে বন্ধুর বাসায় নিয়ে ধর্ষন করেছে প্রায় ছয় মাস, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়ে করতে রাজী না হওয়ায় আসমা বিভিন্ন পর্যায়ে সহায়তা চেয়ে ব্যর্থ হয়ে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর দরবার পর্যন্ত গিয়েছেন এবং সফল হয়েছেন। তার ধর্ষক এখন তার স্বামী।
এ ধরনের ঘটনা নতুন নয়। বিয়েতে রাজী না হওয়ায় চেয়ারম্যান, এমপি, মন্ত্রী পর্যন্ত যাওয়ার ঘটনা অনেক আছে, প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে অনশন বা অবস্থান ইত্যাদি ঘটনা অনেকবারই পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। এই ঘটনার অভিনবত্ব হল – ধর্ষিতা প্রধানমন্ত্রীর দরবার পর্যন্ত গিয়েছেন। সম্ভবত তিনি ‘মাই নেম ইজ খান’ দ্বারা প্রভাবিত।
প্রশ্ন হল – আলমগীর যদি আসমাকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করে নিতো তবে কি আলমগীর একজন ‘ধর্ষক’ এবং আসমা একজন ‘ধর্ষিতা’ হিসেবে পরিচিত হতো? বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কের ঘটনা মোটেই নতুন নয় বরং বর্তমানে বেশ প্রচলিত। তাহলে কি বিয়ে বিয়ে করা না করার উপর ‘ধর্ষন’ শব্দের প্রয়োগ নির্ভর করে?
দ্বিতীয়ত, ধরে নিচ্ছি আলমগীর আসমাকে সত্যিই প্রথমবার এবং বারবার সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করেছে। সেক্ষেত্রে আলমগীরের সাথে আসমার বিয়ে দেয়াটা কি সঠিক সমাধান? ভিকারুন্নেসা নূন স্কুলের শিক্ষক পরিমল যদি ভিক্টিমদের বিয়ে করে নেয় তবে কি তার শাস্তি মওকুফ হবে? যে বিয়েতে দুজনের মধ্যে মানসিক নৈকট্য নেই এবং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাই যেখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়ায়, সেই বিয়ে কি আলমগীরকে বৈধভাবে ধর্ষনের অনুমতি দেয় না? আলমগীর যদি আসমাকে সত্যিই ভালো না বাসে এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বিয়ে করতে বাধ্য হয়, তাহলে আসমার অবস্থান কি উন্নত হয়?
তৃতীয়ত, এ ধরনের সমস্যার সমাধানের জন্য যদি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়, তবে তার নিচের বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনের কার্যকারিতা কোথায়? প্রধানমন্ত্রী কতগুলো প্রেম / ধর্ষনের সমাধান করবেন?
চতুর্থত, পত্রিকাগুলো যেভাবে ধর্ষক এবং ধর্ষিতার ছবি ছাপিয়ে যাচ্ছেন – তাতে কি ধর্ষিতার, হয়তো ধর্ষকেরও, সম্মানহানি ঘটছে না?
উত্তর নয় – ভাবনার খোরাক হতে পারে প্রশ্নগুলো!