বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে বাংলা সংস্কৃতি

বাংলা বৎসরের প্রথম দিনে বোধহয় বাংলাদেশী সিনেমায় বাংলাদেশী সংস্কৃতির উপস্থিতি নিয়ে কথা বলা একদিনের বাঙ্গালীপনা হিসেবে গণ্য হবে না – এই ভরসায় প্রশ্ন করি – বাংলাদেশী সিনেমা কতটুকু বাংলাদেশী?

প্রশ্নের উত্তর লিখে পড়ে দিতে গেলে কষ্টকর, সময়সাপেক্ষ; কারণ এর আগে বাংলাদেশী সংস্কৃতিকে সংজ্ঞায়িত করা লাগে। পরিবর্তনশীল সংস্কৃতি সংজ্ঞায়িত করা কঠিন, কতটুকু পরিবর্তন সংস্কৃতির আওতায় থাকবে তা নির্ণয় করাও সহজসাধ্য নয়। কিন্তু মোটাদাগে, বাংলাদেশী যে সিনেমা আমরা দেখি, বিশেষ করে গত বিশ বছরে নির্মিত সিনেমাগুলো, সেগুলো বাংলাদেশী সংস্কৃতিকে কতটা তুলে ধরে সে চিন্তা করা যেতে পারে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক এতিহ্যমন্ডিত ঘটনাগুলোর উপস্থিতি আমার দেখা সিনেমাগুলোর মাঝে বেশ কমই পেয়েছি। গহীনে শব্দ সিনেমায় চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা বা চৈত্র সংক্রান্তির উৎসব স্থান পেয়েছিল টাইটেল অংশে, যদিও গহীনে শব্দকে বাণিজ্যিক সিনেমা হিসেবে দাবী করা আর সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরী করা সমান কথা। আমার দৃষ্টিতে গত বছরের সেরা সিনেমা কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘ইভটিজিং’ -এ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যমন্ডিত ‘লাঠিখেলা’র দুর্দান্ত উপস্থিতি ছিল। এছাড়া ফোক সিনেমাগুলোতে হাডুডু খেলা, যাত্রা/মেলা, বেদেবহর ইত্যাদিকেও লুপ্তপ্রায় বাংলাদেশী সংস্কৃতির উপস্থিতি হিসেবে গন্য করা যেতে পারে।

সিনেমায় বাংলাদেশী সংস্কৃতি উঠে না আসার কারণ সম্ভবত বেশীরভাগ সিনেমাই শহরকেন্দ্রিক কাহিনী নিয়ে নির্মিত হওয়া। শহরের জীবন পদ্ধতিতে নিজস্ব সংস্কৃতির দৃশ্যমান এবং স্পষ্ট উপস্থিতি কম, সূক্ষ্মভাবে যেসব বিদ্যমান সেগুলো সিনেমায় উঠে আসে না। ফলে, গ্রামকেন্দ্রিক সিনেমা ছাড়া বাংলাদেশী সংস্কৃতিকে তুলে ধরার কোন চেষ্টা বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে পাওয়া যায় না।

অথচ, বাংলাদেশী সিনেমার পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সিনেমা দেখতে গিয়ে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে সিনেমায় বেশ ভালোভাবে প্রতিফলিত হতে দেখছি। ভারতীয় সিনেমার সাংস্কৃতিক আগ্রাসন তো এত বেশী যে আমাদের মত দুর্বল মেরুদন্ডের দেশের নিজস্ব সংস্কৃতিকে গিলে ফেলে ভারতীয় সিনেমার সংস্কৃতি জায়গা দখল করে ফেলেছে। এই আগ্রাসনকে ঠেকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশী সংস্কৃতির নিজস্ব জায়গাগুলো চিহ্নিত করা এবং সচেতনভাবে সেগুলোতে বানিজ্যিক সিনেমায় তুলে ধরার চেষ্টা সময়ের দাবী। শুধু নির্মাতাগোষ্ঠী নয়, দর্শকগোষ্ঠিও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।

আমাদের সিনেমা বাংলাদেশী সংস্কৃতিময় সিনেমা হোক – বাংলা নতুন বছরে এই প্রত্যাশা করি। দারাশিকো’র পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *