‘জাগো‘ দেখে আমি যখন অডিটোরিয়াম থেকে বের হয়েছি তখন আমার গলা খসখসে হয়ে গেছে, রুমাল ভেজা – কারণ সিনেমা দেখতে দেখতে আমি পাগলের মত চিৎকার করে কুমিল্লা একাদশকে সাপোর্ট করেছি – ত্রিপুরা একাদশকে ছিড়ে ফুরে দেয়ার আনন্দে রুমাল কামড়ে ধরে অন্ধকারে বোকার মত কেঁদেছি। কিন্তু আমার বুকটা কেমন যেন ফুলে ছিল – দারুন এক তৃপ্তি।
কদিন আগে ‘পোড়ামন‘ দেখে ফেরার সময়ও বুকটা এরকম তৃপ্তিতে ফুলে ছিল – সাইকেল নিয়ে আমি এক প্রকার উড়ে উড়ে বাসায় পৌছে গেছি – তৃপ্তিতে জাকির হোসেন রাজু-কে আমি ‘দারাশিকো অ্যাওয়ার্ডে’র নমিনেশন পর্যন্ত দিয়ে ফেললাম।
শাকিব খান অভিনীত ‘দেবদাস‘এর শেষ দৃশ্য দেখতে দেখতে আবার চোখে পানি চলে আসল – কি নির্বুদ্ধিতা। দেবদাসের পরিণতি কি হবে সে কে জানে না, শাকিব খান ‘খ্যাত’ অভিনেতা সেটাও তো মনে আছে – তারপরও চোখ সামলানো যায় না কেন?
সিনেপ্লেক্সে ‘লাইফ অব পাই‘ থ্রিডি দেখার অনেক আগে থেকেই জানি – এটা ইল্যুশন – আসলে সিনেমার পর্দায়ই দেখছি – কিন্তু বৃষ্টির দৃশ্যে হাতটা অটোমেটিক্যালি কিভাবে উঠে গেল বৃষ্টি ধরার জন্য?
এই তৃপ্তি আমি কম্পিউটারের সামনে বসে খু-উ-ব কম পেয়েছি। কম্পিউটারে আমি ঝকঝকে প্রিন্টের ছবি দেখি, হেডফোনে নিখুঁত শব্দ শুনি – কিন্তু অন্তরে তৃপ্তি পাই না। রঙিন দেবদাস দেখার পর পরই সাদাকালো দেবদাস দেখেছি – স্বীকার করেছি, সাদাকালো দেবদাস অনেক বেশী ভালো ছবি, কিন্তু কই চোখে পানি তো আসল না?
লাইফ অব পাই বাদ দেই, জাগো, পোড়ামন, দেবদাস দেখার সময় ত্রুটিগুলো টুপ টাপ করে চোখের সামনে ধরা পড়ে যায়। ‘জাগো’ দেখার সময় ফেরদৌসের অভিনয় দেখে পছন্দ হয় নি, পোড়ামন-এ ট্রেনের সিকোয়েন্সের চরম আবেগময় মুহূর্তে আমি বুঝতে পারছি ক্যামেরাম্যান লং-শটে পেছনে বসে থাকা দর্শকদের ফ্রেমে না রেখে যদি ক্লোজ শটে নিত – তাহলে সাইমনের আবেগ আরও অনেক বেশীমাত্রায় ছুয়ে যেত, দেবদাস দেখার সময় বুঝতে পারছিলাম পরিচালক চাষী নজরুল বিশ বছর পর একই ছবি বানাচ্ছেন – নায়ক নায়িকা পাল্টেছে শুধু।
ইউটিউবে বাজে প্রিন্ট আর শব্দে বাংলাদেশী ছবি দেখে সিনেমার গুষ্টি উদ্ধার করা যায় কিন্তু সিনেমাহলে গিয়ে একটা সাধারণ মানের ছবি দেখেও যে তৃপ্তি পাওয়া যায় সেটা কখনো পাওয়া যায় না।