ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ এক দশক ধরে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী মাসে এপার-ওপার বাংলার চলচ্চিত্র নিয়ে ‘আমার ভাষার চলচ্চিত্র’ প্রদর্শনীর আয়োজন করে আসছে। বইমেলায় আগত দর্শকদের সামনে ঢাকা এবং কোলকাতার ভালো সিনেমাগুলো প্রদর্শনের এই প্রচেষ্টা তাদের স্লোগান ‘সুস্থ চলচ্চিত্র, সুস্থ দর্শক’-কেই তুলে ধরে। এ বছরের ২৩ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত মোট পাচদিনে মোট ২০টি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। প্রতিটি মাত্র ২০ টাকা দামের টিকিটে এতগুলো সুস্থ চলচ্চিত্র দর্শকদের বড় পর্দায় দেখার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ডিইউএফএস কে আন্তরিক ধন্যবাদ।
আগের বছরগুলোতে এই প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সোনালী সময়ের ছবিগুলো বেশী স্থান পেত, কোলকাতার সিনেমার ক্ষেত্রেও অনেকটা তাই। পুরাতন এই সিনেমাগুলোর পাশাপাশি নতুন মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা থাকতো কিছু, কিন্তু তাদের সংখ্যা নিতান্তই কম। এ বছরে প্রদর্শিত সিনেমাগুলোর প্রায় সবগুলোই সাম্প্রতিক সময়ের এবং একমাত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমাই অপেক্ষাকৃত পুরাতন কিন্তু যুগান্তরী সিনেমা। এটা অবশ্যই একটা প্রশংসনীয় দিক এই জন্য, দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ভালো সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে এবং এইধারা চলতে থাকলে শুধু বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়েই আমার ভাষার চলচ্চিত্র আয়োজন করা সম্ভবপর হবে। অন্যদিকে, মন খারাপের দিক হল, মোট প্রদর্শিত ২০টি ছবির মধ্যে ৮টি সিনেমা বাংলাদেশের, একটি উভয় দেশের এবং বাকীগুলো ভারতের সিনেমা। এই দু:খ কষ্টে পরিণত হতে পারে যদি কেউ ভারতীয় বিকেলের এবং সন্ধ্যার শো-তে শুধু ভারতীয় সিনেমা দেখারই সুযোগ পায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিকেল চারটের শো-তে তানিম নূরের ‘ফিরে এসো বেহুলা’ ছাড়া আর কোন বাংলাদেশী সিনেমা বিকেলের এবং সন্ধ্যার শো-তে স্থান পায়নি।
কেন এই অবস্থা তা জানা গেলে বিবেচনা করা সহজতর হয়। ডিইউএফএস ফেব্রুয়ারী মাসের এই চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমেই সারা বছরের মোট আয়ের সিংহভাগ তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। যেহেতু এখন বইমেলা চলছে এবং বইমেলায় আগত দর্শকরাই এর লক্ষ্যবস্তু, সেক্ষেত্রে তারা যেন অধিকতর আয় করতে পারে সে চেষ্টা করাই স্বাভাবিক। ফলে অপেক্ষাকৃত জনপ্রিয় কোলকাতার সিনেমাগুলো যাদের ট্রেলার এবং গান এদেশের দর্শকরা ঘরে বসেই স্যাটেলাইট চ্যানেলের মাধ্যেম ও ইউটিউবে দেখে অভ্যস্ত হয়ে যায়, সেগুলো দেখার আগ্রহ তৈরী হওয়াই স্বাভাবিক। অন্যদিকে, ঢাকাই চলচ্চিত্রগুলোর প্রচারণার জন্য ইউটিউব, ফেসবুক আর দৈনিক পত্রিকার বিনোদন পাতার সামান্য অংশ বরাদ্দ থাকায় সবার কাছে পৌছানোর সুযোগ কম থাকে এবং দর্শকের মধ্যে আগ্রহ তৈরী করাও দু:সাধ্য হয়ে দাড়ায়। ফলে ঢাকাই সিনেমার কোন কোনটি কোলকাতার সিনেমার তুলনায় ভালো হলেও দর্শকের মস্তিস্কে স্থানলাভে ব্যর্থ হয় এবং বিকেল ও সন্ধ্যার শো-তে কোলকাতার সিনেমাই স্থান পায়। এতে করে, দেশের ভালো সিনেমাগুলো যাদের সুযোগ এমনিতেই কম তারা মেলার দর্শকদের কাছে পৌছে যাবার এই শেষ সুযোগটা থেকেও বঞ্চিত হয়।
তাহলে সমাধান কি? ঢাকাই সিনেমার খবর এবং ট্রেলার যেমন দর্শকদের কাছে পৌছে দেয়া দরকার, তেমনি দর্শকের হাতের নাগালে পৌছে দেয়ার সুযোগটাও তৈরী করতে হবে। ঢাকাই সিনেমাকে দর্শকের কাছে পৌছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করছে ডিইউএফএস এবং তাদের ‘আমার ভাষার চলচ্চিত্র’ প্রদর্শনসূচিতে যেন দেশী সিনেমা গুরুত্ব পায়, অন্তত: ভারতীয় সিনেমার সমান গুরুত্ব, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কিছুটা ঝুকি নিয়ে হলেও বিেকল এবং সন্ধ্যার শো-গুলোতে ঢাকাই সিনেমার অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে অথবা অন্য কোন উৎসের সহায়তায় সিনেমা দর্শন যেন উপভোগ্য হয়, বিশেষত নিভাঁজ সাদা পর্দা, উন্নতমানের সাউন্ড, ভালো মানের ডিভিডি ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে। প্রদর্শনীর পরিবেশ ভালো হলে সিনেমা বেশী উপভোগ্য হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের মত অন্যান্য আরও কিছু সংগঠনকে এগিয়ে আসা উচিত দেশী সিনেমার প্রদর্শনে। বিশেষ বিশেষ উৎসবে স্বল্পমূল্যে সবার কাছে সিনেমা পৌছে দেয়ার উদ্যোগটা জরুরী। প্রাইভেট চ্যানেলগুলো চলচ্চিত্রনির্মাতাদের কিছুটা সহযোগিতা করতে পারে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা সিনেমার ট্রেলার দেখানোর সুযোগ করে দিয়ে। মনে রাখা উচিত, ঢাকাই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়ন শুধু পরিচালক বা শুধু প্রদর্শকের দায়িত্ব না, এই সকলের এবং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একে নিশ্চিত করতে পারে।
প্রসারের ব্যাপারটা আমি সব সময় গুরুত্ব দিয়ে দেখি। যে কারনেই নেটওয়ার্কিং ব্যাপারটা গুরুত্ব দিচ্ছি। অপেক্ষাকৃত ভালো সিনেমা হচ্ছে, কিন্তু লোককজন জানছেনা। বা দেখা গিয়েছে, হাতে গোনা কিছু হলে রিলিজ দেয়া হচ্ছে।
ভারতীয় সিনেমার আগ্রাসন থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের সিনেমার প্রসার বারাতে হবে। এই কাজে মিডিয়া বরাবর বিপরীত দিকে গিয়েছে। ব্রেকিং নিউজ কেনো সব সময় হত্যাকান্ড আর মন্ত্রীদের মহান বানী হয় সেটাই মাথায় ঢুকেনা। ক্ষয় ক্ষতি না হলে কি ব্রেকিং নিউজ হয়না?
আর টিভিতে চুলের নাটক না দিয়া এক ঘন্টা যদি সিনেমা পারার খোজ খবর ফলাও করে দিতো প্রতিদিন, তাইলে তো ব্যাপক প্রসার পাইত। পাবলিক রে খাওয়াইতে হবে। পাবলিক সব সময় জানা খাবার দাবার খাইতে চায়।
যাইহোক, ব্যানার তো চরম হইছে ভাইজান। লাইক ইট। 😀