গতকাল দুপুরে এক অফিসে ভাত খেতে হল। ‘আমাদের রবিউলের রান্নায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন এবং ভালো আইটেম হল ডাইল (ডাল)’ – যে ভাইয়ের সাথে গিয়েছিলাম তিনি বললেন। সত্যি কথা। জলপাই দিয়ে রান্না করা ডাল দিয়ে ভাত খেতে গতকাল বেশ ভালোই লেগেছিল। মনে পড়ে যাচ্ছে, ডাল নিয়ে ঘটনার সংখ্যা তো কম নয়, সে নিয়ে একটি পোস্ট (অকাজ) দেয়া যায়।
উপরেরটা না নিচেরটা
ছোটবেলার কথা। মামার বাসায় বেড়াতে এসেছি। রাতে খাবার সময় মামা বললেন, ‘কি মামু, ডাইল নিবানা?’ ডালের চেহারা খুব সুন্দর, আকর্ষনীয়। আমি ‘হু’ বলে সায় দিলাম। মামা বললেন, কোনটা নিবা – ‘উপরেরটা না নিচেরটা?’ যদিও আমি সবসময় নিচের ঘন অংশটুকুই খাই, সেদিন ডালের বাহ্যিক রূপ আমাকে মোহিত করেছিল, তাই সোৎসাহে বললাম, ‘উপরেরটা’। ‘চক চক করিলেই সোনা হয় না’ এই কথাটার প্রমান সেদিন আরেকবার পেলাম, ডালটা খারাপ ছিল না, তবে চেহারাটা আরও বেশী সুন্দর ছিল, নিচের ডালটা নিশ্চয়ই আরো ভালো ছিল!
ইউনিভার্সিটির ডাইল
ইউনিভার্সিটিতে ঢোকার আগে এর ডাইলের অনেক নাম শুনেছি – সে ‘সু’ এবং ‘কু’ উভয়ই। এই ডাল নাকি পানির মত, খাওয়া যায় না, বাজারের পচা এবং পুরানো ডাল দিয়ে রান্না হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপর একদিন হলে উঠলাম এবং তখনই চিনলাম ডাল কি জিনিস!
এত পাতলা ডাল আর কোথাও রান্না হয় কিনা জানি না, কিন্তু সত্যি কথা হল এই ডাল খেতে কিন্তু কেউ মাইন্ড করে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাচ/ছ’ বছরের জীবনে এই ডাল খেয়েই বহু ছাত্রের স্বাস্থ্য ভালো হয়েছে। কেন জানি না!
এই আমি বরাবরই খুব শুকনো। গত সাড়ে চার-পাচ বছর ধরে আমার ওজন ৫৩ কেজি, একটুও কম না, বেশীও না। কেন যে ওজন বাড়ে না সে এক বিশাল রহস্য। হলে প্রায় সবাই ভাত খাওয়া শেষে এক বাটি ডাল খায়, তাতে নাকি একমাসে স্বাস্থ্য ভালো হয়। সুতরাং আমিও শুরু করলাম, একমাস গেল, দুমাস গেল, তিনমাসও পার হয়ে গেল, ওজন বাড়লো না, স্বাস্থ্যও ভালো হলনা — সুতরাং হাল ছাড়লাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর আব্বা অনেক আশা করে থাকলেন খুব শীঘ্রই আমার স্বাস্থ্য ভালো হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বছর ঘুরে যায়, স্বাস্থ্য ভালো হয় না। আব্বার আশাও পূরন হয় না। একদিন জানা গেল তিনি শুনেছিলেন হলের রান্না করা ভাতের ফ্যান ফেলা হয় না বরং ডালের সাথে মিশিয়ে ডালকে ঘন করা হয়। সুতরাং স্বাস্থ্য ভালো না হয়ে যাবে কোথায়। … … কি জানি, হয়তো এখন আর মেশায় না!
চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে গেলাম পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় প্রামাণ্যচিত্র তৈরীর জন্য তথ্য সংগ্রহে। দুপুরে খেতে গেলাম শাহ আমানত হলে। প্লেট ধুয়ে পানি নিয়ে বসে আছি, ফেলার পাত্র পাচ্ছি না। বোকা হয়ে গেলাম যখন দেখলাম এক ছাত্র তার প্লেট ধোয়া পানিটুকু ডালের পাত্রে ঢেলে দিল! পরে আবিস্কার করলাম, আমরা যাকে ডালের পাত্র ভেবেছি তাই পানি ফেলার পাত্র বরং কোন ছাত্রের অতিরিক্ত ঝোল ফেলে দেয়ার জন্য তা ডালের চেহারা ধারন করেছে।
উল্টো ঘটনাটা বেশী ঘটে। হলের ডাইলের পাত্রে প্লেট ধোয়া পানিটুকু ফেলে দিয়েছেন এমন ঘটনাটা প্রতি মাসেই একবার দুবার করে ঘটে। আমাদের ইকনোমিকস স্যার বাজেট নিয়ে পড়াতে গিয়ে বলতেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে হাত ধোয়ার জন্য ডাল দেয়া হয়!’ শুনলে হাসি পায়, কিন্তু এই ডাইল খেয়েই কত ছাত্র মন্ত্রী মিনিষ্টার আর জজ ব্যারিস্টার হয়ে গেল, সুতরাং ডাইলের আর দোষ কি? তবে কিনা এই ডাল খেয়েই যদি এত কিছু হওয়া যায় তবে ভালো ডাইল খেলে এদের অবস্থাটা কি হবে ভাবুন তো!!!
‘তবে?’
কৌতুক না বাস্তব?
একটা গল্প বলি। ছাত্র হোস্টেলে একদিন ডাল খাওয়ার পর সবাই বুঝতে পারলো ডালে কোন একটা সমস্যা হয়েছে। সমস্যাটা ঠিক কি ধরতে না পেরে সবাই গেলো হোস্টেল সুপারের কাছে। তিনিও ডাল খেয়ে দেখলে স্বাদে গণ্ডগোল! ডাকলেন বাবুর্চিকে।
‘আজকের ডাল তুমি রান্না করেছো?’
‘জ্বি স্যার।’
‘ডালে তো মনে হয় কোন উপকরণ কম বেশি হয়ে গেছে।’
‘কি বলেন স্যার!’
‘হলুদ দিয়েছিলে?’
‘জ্বি স্যার।’
‘লবন?’
‘জ্বি স্যার।’
‘তাহলে বাদ পড়ল কি?
এবার পাচক এক হাতা ডাল খেয়ে নেয়!
‘ওওওও স্যার… হে হে স্যার .. .. বুঝতে পেরেছি!’
‘কি ব্যাপার?’
‘হে হে স্যার, ডাল রান্নার সময় ডাল দিতেই ভুলে গিয়েছিলাম .. হে হে’
জগতের সকল প্রানী ডাইল খেয়ে সুখে শান্তিতে বাস করুক!!