মারিও পূজোর উপন্যাস থেকে দ্য সিসিলিয়ান

দ্য সিসিলিয়ান

সিনেমাপ্রেমীরা মারিও পূজো-কে চিনেন গডফাদার ট্রিলজির স্রষ্টা হিসেবে। বইপ্রেমীরা গডফাদার ছাড়াও দ্য লাস্ট ডন, দ্য সিসিলিয়ান, দ্য ফ্যামিলি ইত্যাদি বইয়ের জন্যও মারিও পূজো-কে ভালোবাসেন। গডফাদার ছাড়াও তার আরও কিছু উপন্যাস ও গল্প অবলম্বনে সিনেমা নির্মিত হলেও ওগুলো গডফাদারের মতো নাম কামাতে পারেনি। দ্য সিসিলিয়ান সেরকমই একটি।

সালভাদোর জুলিয়ানো টগবগে যুবক। তার স্বপ্ন সিসিলির দরিদ্র মানুষদেরকে জমির মালিক বানানো। এ কারণে সিসিলি’র বুর্জোয়াদের সম্পদ লুট শুরু করে সে। অথচ সে কমিউনিস্ট-ও নয়। ডন মাজিনো তার আনুগত্য কামনা করে কিন্তু জুলিয়ানো তাতেও আগ্রহী নয়। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সে গড়ে তুলে বিশাল বাহিনী। একদিকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে তার জনপ্রিয়তা, অন্যদিকে শাসকগোষ্ঠীর চক্ষুশূল – জুলিয়ানোর উত্থান ও পতনের ঘটনাবলী নিয়ে দ্য সিসিলিয়ান চলচ্চিত্র যেন একটি মহাকাব্য।

মারিও পূজোর উপন্যাসটি কিন্তু বাস্তবের সালভাদোর জুলিয়ানো-র উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছিল। সিনেমা এবং বাস্তবের জুলিয়ানো’র মধ্যে পার্থক্য সম্ভবত খুব বেশি নেই। বাস্তবের জুলিয়ানো অবশ্য দস্যু হিসেবেই কুখ্যাত ছিল। তবে সিসিলির দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নিকট তার জনপ্রিয়তা ছিল। তাকে সেই সময়ের রবিন হুড হিসেবেও পত্র পত্রিকায় উপস্থাপন করা হয়েছিল। তাকে নিয়ে নির্মিতি সিনেমার নাম সালভাদোর জুলিয়ানো

প্রায় আড়াই ঘন্টা দৈর্ঘ্যের দ্য সিসিলিয়ান সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন মাইকেল চিমিনো। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সিনেমা রবার্ট ডি নিরো অভিনীত ‘ডিয়ার হান্টার’ এর মাধ্যমে চিমিনো বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন। দ্য সিসিলিয়ান তার ১৯৮৭ সালে নির্মিত সিনেমা।

দ্য সিসিলিয়ান-এ সংলাপগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিসিলির প্রিন্স বুরসা-র বিশাল অনাবাদী জমি কৃষকদের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার আন্দোলন করে চলছে কমিউনিস্টরা, জুলিয়ানো-র স্বপ্নও তাই, কিন্ত কমিউনিস্টদের সাথে যে যোগ দিতে আগ্রহী নয়। কারণ সে রাজনীতি পছন্দ করে না। অথচ শেষ পর্যন্ত সেই রাজনীতি-র চক্রান্তেই তার পতন হয়। কমিউনিস্ট বা জুলিয়ানোর চাওয়ার প্রেক্ষিতে প্রিন্স বুরসা-র অবস্থানও যুক্তিসম্মতভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমায়। আবার কৃষকদের মাঝে জমি বন্টনই কি সমাধান? এ প্রশ্নের উত্তরও পাওয়া যাবে।

ডন মাজিনো এই সিনেমায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও গডফাদার সিনেমার ডনদের মতো এখানে কোন গল্প নেই। ডন মাজিনো বরং সেই সব লোকের প্রতিনিধি যারা একদিকে আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করেন, অন্যদিকে সরকারের নির্ভরতার ভূমিকাও পালন করেন।

দ্য সিসিলিয়িান সিনেমায় জুলিয়ানো চরিত্রে ক্রিস্টোফার ল্যাম্বার্ট অভিনয় করেছেন। এই ভদ্রলোক টারজান সিনেমায় অভিনয়ের কারণে বিখ্যাত। ল্যাম্বার্ট ভালো অভিনয় করেছেন কিন্তু অজানা কোন কারণে তাকে হিরো হিসেবে গ্রহণ করতে কষ্ট হয়। তার ওই চোখ যেন এই চরিত্রের সাথে মানায় না। এ কারণেই কিনা জানি না, দ্য সিসিলিয়ান সিনেমার ব্যবসায়িক সাফল্য ভালো না, সমালোচকদের দৃষ্টিতেও নেতিবাচক অবস্থান।

তা সত্ত্বেও, দ্য সিসিলিয়ান সিনেমাটি আমার কাছে বেশ উপাদেয় মনে হয়েছে। যারা মাফিয়া-গোত্রের সিনেমা পছন্দ করেন, তাদের ভালো লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *