লকডাউন সময়কে কিভাবে কাজে লাগাবেন

করোনা-ভাইরাস-লকডাউন-টিপস-সময়কে-কিভাবে-কাজে-লাগাবেন

অবশেষে বাংলাদেশেও লকডাউন শুরু হয়ে গেল। অবশ্য, দাপ্তরিক ভাষায় একে লকডাউন বলা হয়নি, সাধারণ ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। অনান্য সাধারণ ছুটির তুলনায় এই ছুটি সম্পূর্ণই আলাদা। কারণ, ছুটি দেয়া হলেও আদতে আপনাকে ছুটি কাটানোর অধিকার দেয়া হয়নি, বরং একান্ত বাধ্য না হলে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং, নাম যাই দেয়া হোক না কেন, এটা লকডাউনই। মদকে দুধ বললে কি সেটা দুধ হয়ে যায়, বলুন?

যাহোক, যারা সপ্তাহে দুদিন ছুটি কাটিয়ে অভ্যস্ত তারা হয়তো শনিবার পর্যন্ত আরাম আয়েশে কাটিয়ে দিতে পারবেন, হাজার হোক, অভ্যাসের কিছু ভালো দিক রয়েছেই। বাকীরা ইতোমধ্যেই হাপিয়ে উঠার কথা। ঘরবন্দি জীবন কার ভালো লাগে, বলুন? তারচেয়ে বরং দেখে নেই লকডাউন সময়কে কিভাবে কাজে লাগানো যায়।

যা করবেন না

স্ক্রিন টাইম: লকডাউন সময়ে স্ক্রিন টাইম প্রচুর বেড়ে যাবে। এমনিতেই আমরা সারাদিন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকি বলে ঘাড়কুঁজো জাতিতে পরিণত হয়েছি। সুতরাং, সতর্ক হওয়া উচিত। দৈনিক কি পরিমান সময় মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা হয় তা পরিমাপ করার জন্য কিছু অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। আপনার পছন্দ অনুযায়ী একটা ইন্সটল করে জেনে নিন আপনি দৈনিক কি পরিমান সময় মোবাইলে কাটাচ্ছেন, তারপর লক্ষ্য ঠিক করুন এবং লক্ষ্য পূরণে সচেষ্ট হোন।

অনর্থক ভোজন: মানুষ বোর ফিল করলে বেশি খেতে চায়। আসলে খাওয়ার মাধ্যমে এই বোর-ফিল থেকে মুক্তি চায়। খেয়াল করে দেখবেন, এ সময় ঘরের মহিলারাও নানা রকম রান্না বান্না করে। যাহোক, অনর্থক খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। নাহয় করোনা ইফেক্টে ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

করোনা সংবাদ: সারাদিন করোনা সংবাদে ডুবে থাকবেন না। দিনে দুই তিনবারের বেশি নিউজ ওয়েবসাইটে ঢুকবেন না, করোনা নিয়ে বেশি বেশি নিউজ পড়বেন না। এতে আপনার মানসিক সুস্থ্যতা বজায় থাকবে। প্রচুর সংবাদ আপনাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলতে পারে, অসুস্থ্য না হয়েও অশান্তিতে ভুগবেন। কি দরকার?

যা করতে পারেন

বই পড়ুন: সদ্য শেষ হওয়া বই মেলা থেকে বই কিনেছেন কিন্তু সময়ের অভাবে পড়া হচ্ছে না? এই দশদিনে দুটো বই পড়ে ফেলুন। স্টকে বই না থাকলে দুটো ডাউনলোড করে নিন। ঠকবেন না।

অনলাইনে কোর্স করুন: নিজের দক্ষতা, জ্ঞান বাড়িয়ে নেয়ার জন্য অনলাইনে একটি কোর্স করে ফেলতে পারেন। এডএক্স, কোর্সেরা কিংবা উডেমি – ফ্রি-তে কিছু একটা বিষয়ে জেনে নিন, সময়টা কাজে লেগেছে বলে ভালো বোধ করবেন। আইইএলটিএস, জিআরই, জিম্যাট ইত্যাদির প্রস্তুতি নিতে পারেন।

আইইএলটিএস প্রস্তুতি নিয়ে আমি গোটা দশেক পোস্ট লিখে একটি ওয়েবসাইট বানিয়েছি। দেখতে পারেন এখানে

সিনেমা দেখুন: তালিকায় বেশ কিছু ভালো সিনেমা রয়ে গেছে যেগুলো সময়ের অভাবে দেখতে পারছেন না? এখন উপযুক্ত সময়। দৈনিক একটার বেশি সিনেমা দেখার দরকার নেই। সিনেমা দেখা আপনার বিনোদন, পেশা নয় – ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না। সিনেমার সাজেশনের জন্য সিনেমার গ্রুপগুলোতে দেখতে পারেন। আমার সাজেশন চাইলে এই লিংকটা দেখার অনুরোধ করবো।

আধ্যাত্মিক কার্যাদি: ব্যস্ততার জন্য ধর্ম-কর্ম করতে পারেন না যারা তারা এই সময়ে নিয়মিত ধর্ম-কর্ম করার চেষ্টা করতে পারেন। প্রতিদিন কিছুক্ষণ অর্থসহ কোরআন শরীফ পড়ুন, কিছু দোয়া মুখস্ত করুন। মনে জোর পাবেন।

সমাজে অবদান রাখুন: দুর্যোগপূর্ণ এই সময়ে সমাজের জন্য কিছু করার চেষ্টা করতে পারেন। যাদের সংসার দৈনিক আয়ের উপর নির্ভর করে তাদেরকে সহায়তা করতে পারেন। এরকম একটি প্রতিষ্ঠান চ্যারিটি প্ল্যাটফর্ম যারা ১৫০০ টাকা একটি পরিবারের এক সপ্তাহের খাবার বিতরণ করছেন, তাদের উদ্যোগের সাথে যোগ দিতে পারেন।

করার মতো কাজের অভাব নেই। কেবল মনে রাখতে হবে আপনি লকডাউনের সময়টাকে কাজে লাগাতে আগ্রহী – তাহলে আপনি নিজেও এরকম দশটি আইডিয়া দিতে পারবেন। আপনার আইডিয়া শেয়ার করুন, হয়তো অন্যরা সেখান থেকে দু-একটা লুফে নেবে। আর হ্যা, এই সময়ে অন্যান্যদের সাথে যোগাযোগ রাখতে ভুলবেন না। বিশেষ করে, মুরুব্বীরা যেন নিরাপদে থাকে, করোনা সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলো ঠিক-ঠাক মেনে চলে সে ব্যাপারে তাদেরকে বারবার অনুরোধ করুন।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

4 Comments on “লকডাউন সময়কে কিভাবে কাজে লাগাবেন”

  1. দীর্ঘ এই অলস সময়কে কাজে লাগানোর চমৎকার সব উপায় । আমরা অবশ্য ব্যস্ত আছি পরিকল্পনা প্রণয়ন, টেবিল ওয়ার্ক আর সীমিত আকারে চ্যারিটি প্লাটফর্মের খাদ্য সহায়তা বিতরনের মধ্যে।

    1. আন্তরিক ধন্যবাদ স্যার। আপনারা অনেক বড় দায়িত্ব কাধেঁ নিয়েছেন। রাব্বুল আলামীন আপনাদের সহায় হোক।

  2. খুবই ভাল লেগেছে । আমরা বই পড়া, সিনেমা দেখা, কোরআন শরীফ পড়া ও সুরা মুখস্থ করার সাথে সাথে কিছু খেলা ও খেলতে পারি । যেমন – ক্যারাম, লুডু বা দাবা খেলা । এই খেলাগুলো খেলতে খুব বেশি সময় অপচয় হয় না সাথে বিনোদন ও হয়ে যাবে ।

    1. চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ রিমা। ক্যারাম আর লুডু তো আগে প্রায় সব ঘরেই খেলা হতো, এখন মোবাইলের পর্দায় স্থান নিয়েছে, কিন্তু সেই মজাটা কি আর পাওয়া যাচ্ছে?

Leave a Reply to দারাশিকো Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *