কারবালার ছবি দি মেসেঞ্জার

পোস্টার: দ্য মেসেঞ্জার অব ইমাম হুসাইন (ছবি: ইউটিউব)
পোস্টার: দ্য মেসেঞ্জার অব ইমাম হুসাইন (ছবি: ইউটিউব)

যে যুগে বাংলাদেশ টেলিভিশন বা বিটিভি ছাড়া অন্য কোন বেসরকারী টিভি চ্যানেল ছিল না অথবা থাকলেও কেবলমাত্র শহর অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল সেই সময়ের কথা মনে করছি। আরবী মহররম মাস আসলেই বিটিভিতে বাংলায় ডাব করা একটি চলচ্চিত্র দেখানো হত। ছবির নাম দ্য মেসেঞ্জার / দ্য মেসেঞ্জার অব ইমাম হুসাইন (আ) অথবা বাংলায় ‘দূত’। রাসূল (স) এর নাতি ইমাম হুসাইন (আ) এর পাঠানো গুরুত্বপূর্ণ এবং খুবই গোপনীয় একটি চিঠি নিয়ে একজন দূত কুফা’র দিকে যাচ্ছেন, শত্রুপক্ষের কাছে ধরা পড়ে গেছেন কিন্তু চিঠিটি নষ্ট করে ফেলেছেন এবং পরবর্তীতে শাস্তিস্বরূপ মৃত্যুবরণ করেছেন – এই ছিল দ্য মেসেঞ্জার চলচ্চিত্রের কাহিনী।

বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি যার প্রধান চরিত্র বা পত্রবাহক ছিলেন হযরত কায়েস ইবনে মুসাহ্হার। কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইন (আ) এর মর্মান্তিক পরিণতির কিছু সময়ের আগের ঘটনা এটি। হযরত মুয়াবিয়া (রা) এর পুত্র এজিদ তখন খলিফার আসন দখল করেছেন। কিন্তু জনগণের সমর্থন এবং খিলাফতের যোগ্যতার বিবেচনায় খলিফা হবার দাবীদার ইমাম হুসাইন (আ)। কুফার বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট থেকে ইমাম হুসাইন (আ) চিঠি পান, কুফায় আসার আমন্ত্রন পান, তার নেত্বৃত্ব চান। এসব চিঠির উত্তরে তিনি মুসলিম ইবনে আকিলকে কুফায় পাঠান সেখানকার জনগণের মতামত এবং প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য৷ মুসলিম ইবনে আকিলকে কুফার জনগণ স্বাগতম জানায় এবং মুসলিম ইবনে আকিল কুফার পরিস্থিতি অনুকুলে বলে ইমামকে জানায়৷ কিন্তু এর মধ্যে কুফার গভর্ণর পরিবর্তন হয় এবং আল নুমান ইবনে বাসীর এর স্থলে নতুন গভর্ণর আব্দুল্লা্হ ইবনে জিয়াদ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ সময় মুসলিম ইবনে আকিল এবং তার আশ্রয়দাতা হানি ইবনে আরওয়াকে হত্যা করা হয়। মুসলিম ইবনে আকিলের চিঠি পেয়ে ইমাম হুসাইন (আ) কুফার দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন, পথিমধ্যে তিনি মুসলিমের হত্যা-সংবাদ পান কিন্তু যাত্রা অব্যাহত রাখেন। তিনি কায়েস ইবনে মুসাহার আল-সায়দাবির মারফত কুফার গণ্যমান্য লোকদের কাছে এক পত্র প্রেরণ করেন। এই পত্র বহন করে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে শাহাদাত পর্যন্ত সময়কেই দ্য মেসেঞ্জার চলচ্চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে।

কায়েস ইবনে মুসাহ্হার ধরা পরে যান এবং তাকে গভর্ণর আবদুল্লাহ ইবনে জিয়াদের কাছে পাঠানো হয়। ধরা পড়ার সময়ই কায়েস চিঠিটি নষ্ট করে ফেলেন। গভর্ণর তাকে চিঠির বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চান কিন্তু কায়েস তা গোপন রাখেন। পরে গভর্ণর তাকে প্রস্তাব দেয় কুফার জনগনের সামনে ইমাম হুসাইন (আ) সম্পর্কে নিন্দা করার বিনিময়ে মুক্তির জন্য। কায়েস জনগণের সামনে উপস্থিত হন কিন্তু ইমাম হুসাইন (আ) এর আগমনের সংবাদ জানিয়ে সবাইকে তাকে সহযোগিতা করার আহবান জানান এবং গভর্ণরের নিন্দা করেন। শাস্তিস্বরূপ কায়েস ইবনে মুসাহ্হারকে গভর্ণরের প্রাসাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়।

পুরো ছবিটির মধ্যেই এক প্রকার গাম্ভীর্য বিদ্যমান ফলে খুব সহজেই ছবির সাথে মিশে যাওয়া সম্ভব হয়। খুবই দুঃখজনক, এই ছবির নাম ছাড়া আর কোন তথ্যই বাংলা বা ইংরেজি ভাষায় পাওয়া গেল না। সম্ভবত এটি ইরানে নির্মিত কোন টিভি মুভি এবং ভাষা ফারসি। পরিচালক বা অন্য কোন কলাকুশলীর নাম জানা সম্ভব হয় নি। ধারনা করছি ছবিটি ১৯৭০-৯০ এই সময়ের মধ্যে নির্মিত।

ইউটিউবে এই ছবিটির উর্দু এবং বাংলা সংস্করণ দুটোই পাওয়া গেল। বাংলা সংস্করনটি এখানে যুক্ত করে দিলাম।

সূত্র:
১. উইকিপিডিয়া

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

4 Comments on “কারবালার ছবি দি মেসেঞ্জার”

  1. এই টিভি সিরিজের কথা আগে জানতাম না! সময় নিয়ে দেখব।

    1. সংশোধন: এইটা কিন্তু সিরিজ না, সম্ভবত টিভির জন্য বানানো মুভি। সঠিক তথ্য পাই নাই। তবে দ্য মেসেঞ্জার নামে টিভি সিরিজ আছে একটা, সেটা অবশ্য ভিন্ন কাহিনী।

Leave a Reply to দারাশিকো Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *