ফাল্গুনের দুই তারিখ শীতের সকালে সাদা চাদর জড়িয়ে আমি ওদের বাসার সামনে উপস্থিত হলাম। আমার হাতে চৌদ্দটি সাদা গোলাপ। সাদা বাড়িটার একতলায় ওদের বাসা। দরজা বন্ধ ছিল, তাই নক না করে সামনের বারান্দায় বসে রইলাম। একসময় দরজা খুলে দাদু বেরিয়ে এলেন। তার ধবধবে সাদা দাড়ি ও পাঞ্জাবীতে পানের পিক ফিকে বর্ণ ধারণ করেছে। দাদু আমাএ দেখে আমার খুব প্রিয় বইয়ের নামে আমাকে ডাকলেন, ‘এই শুভ্র! এই’ আমি চমকে হাতের চৌদ্দটি সাদা গোলাপ আমার সাদা চাদরের নিচে লুকিয়ে ফেললাম। জ্ঞানী দাদুকে প্রশ্ন করলাম, ‘ও সাদা বুড়ো, তুমি কি বলতে পারো শুভ্র সকাল কেন বলে?’ সাদা দাঁতে হাসলেন দাদু। ‘অবশ্যই। শুভ্র মানে সাদা, সাদা মানে যেখানে কোন রং নেই। আর সাদা মানে পবিত্র, সাদা মানে সুন্দর, সাদা মানেই শান্তির প্রতীক। তাই সুন্র সকাল মানেই শুভ্র সকাল।’
ভেতরে এসে বসলাম। কাঁচবাক্সে সাদা কিসিং গ্রুমি এই সক্কাল বেলাতেও ঘুরে ঘুরে কিস করে যাচ্ছে। ক্লাস টু-তে পড়ুয়া রুমি সাদা স্কুল ড্রেসে হাজির হল। আমি তাকে দেখেই বললাম, ‘সাদা সাদা আরও সাদা’. রুমি তার যে দাঁতটি সেদিন ফেলে দেয়া হল সেটিকে চেপে হাসল।
ওকে ডেকে পাঠালাম। সে আসল না। আমি সাদা কাগজে কালো আর লাল কালিতে গুটি গুটি করে লেখা চিঠিটা আর চৌদ্দটা সাদা গোলাপ টেবিলে রেখে বেরিয়ে এলাম।
একদিন দুপুরে ছাদে দাড়িয়ে দেখেছিলাম – দূরে ধবল বক উড়ে যায়। গুলতিতে সাদা মার্বেল মেরে একটি ধরেছিলাম, ভালোও বেসেছিলাম। কিন্তু ধবল বক আমার হয় নি।সাদা বক হারিয়ে গেল একদিন। আমি জেনে গেলাম শুভ্র রং এর বক কখনো আমার নয়।
চাদরকে কাঁধে ফেলে আমি শূন্য রাস্তায় হেটে চললাম। আমার চোখে যে শুভ্র রং আর শুভ্র ছাড়া কিছুই নেই।