ব্লো: ড্রাগ স্মাগলারের জীবনী

Blow মাদক সম্রাট
ড্রাগ স্মাগলার জর্জ জাং এর জীবন নিয়ে সিনেমা ব্লো

আপনি যদি ১৯৭০-র শেষের দিকে অথবা ১৯৮০-র প্রথমদিকে কোকেইন নিয়ে থাকেন, তবে শতকরা ৮৫ ভাগ সম্ভাবনা ওটা আমাদের কাছ থেকে পেয়েছেন !

এই বক্তব্য আমেরিকার ড্রাগ স্মাগলার জর্জ জাং এর। ১৯৯৪ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জাং-কে ৬০ বছরের জেল শাস্তি দেয়া হয়, তবে নানা কারণে এই শাস্তির পরিমান কমিয়ে আনা হয় এবং আগামী ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর জাং এর মুক্তি পাওয়ার কথা। কিভাবে বোস্টন শহরের এক সাধারণ পরিবার থেকে এত পরিমান ডলারের মালিক হয়েছিলেন যে টাকা গোনার বদলে ওজন করতে হয়েছিল – ষাট পাউন্ড ওজন হলে তিন মিলিয়ন ডলার আর পঞ্চাশ পাউন্ড ওজন হলে আড়াই মিলিয়ন – তা জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে Blow: How a Small Town Boy Made $100 Million with the Medellín Cocaine Cartel and Lost It All অথবা দেখতে হবে Ted Demme পরিচালিত ও জনি ডেপ অভিনীত সিনেমা – Blow (2001), আমি দ্বিতীয়টি বেছে নিয়েছি।

মাদক নিয়ে সিনেমা

ড্রাগ এবং ড্রাগ স্মাগলারদের নিয়ে সিনেমার কথা উঠলে অবশ্যই রিকুয়েমে ফর আ ড্রিম এর কথা আসবে। রিকুয়েমে নিঃসন্দেহে একটা ভালো ছবি, কিন্তু আমার কাছে তারচেয়েও বেশী ভালো লাগে ড্যানি বয়েল পরিচালিত ‘ট্রেইনস্পটিং‘। আর অভিনয় বা এক্সপ্রেশন দেখার জন্য লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও অভিনীত ‘দ্য বাস্কেটবল ডায়রিস‘। কিন্তু যেই ড্রাগের কারণে রিকুয়েমে ফর আ ড্রিম, ট্রেইনস্পটিং বা দ্য বাস্কেটবল ডায়রিস, কিংবা, আমাদের নুরুল আলম আতিকের ‘ডুবসাঁতার‘ – সেই ড্রাগ স্মাগলারের বায়োপিক দেখার জন্য ‘ব্লো’ খুব ভালো বাছাই।

ড্রাগ স্মাগলার জর্জ

জর্জের বাবা দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার মুহুর্তে জর্জকে বলেছিলেন – জীবনে টাকার মূল্য খুব বেশী না, কথাটা জর্জ বিশ্বাস করতে পারে নি। টানাটানির সংসারে জর্জের মা-র অভিযোগ-অভিমান ইত্যাদি জর্জকে অনেক টাকা আয় করার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছিল। বাল্যবন্ধু টুনাকে নিয়ে জর্জ বোস্টন থেকে দক্ষিন ক্যালিফোর্নিয়া চলে আসে এবং বান্ধবী বারবারা ও তার বন্ধু ডেরেকের সহযোগিতায় গাঁজা বিক্রির সাথে জড়িয়ে পড়ে। ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে বোস্টনেও। আরও বেশী মুনাফার জন্য সরাসরি মেক্সিকো থেকে ড্রাগ কেনা শুরু করে ‘বোস্টন জর্জ’ নামে পরিচিতি পাওয়া জর্জ। হঠাৎ জেলে যেতে হয় জর্জকে এবং তারপরই ব্যবসার পণ্য পাল্টে যায়।

ড্রাগ স্মাগলাররা টাকা গুণছে
ড্রাগ স্মাগলারদের টাকা!

​মাত্র দুই ঘন্টার মধ্যে জর্জের ড্রাগ ব্যবসার শুরু-উন্নতি-চূড়া-পতন দারুন ভাবে উঠে এসেছে। স্টোরি টেলিং স্টাইলটা দারুন – জর্জের কন্ঠস্বরকে অনুসরণ করে বারবার লাফ দিয়েছেন পরিচালক – ফলে দারুন এক গতি পেয়েছে গল্প। ​জর্জের প্রাচুর্য, উন্নতি ইত্যাদিকে তুলে ধরার যে পদ্ধতিগুলো খাটিয়েছেন পরিচালক – ব্রিলিয়ান্ট। টাকা গোনার সিকোয়েন্সটা সেরকম একটি দৃশ্য। মার্থাকে বিয়ে করার পর তাদের বাড়িতে জর্জের বাবা-মা বেড়াতে আসার দৃশ্যে খুব ধীরে ধীরে যেভাবে জর্জের আর্থিক অবস্থাকে তুলে ধরা হয়েছে – পরিচালকে স্যালুট জানাতে হয়।

জীবনে টাকার মূল্য কত

ড্রাগ স্মাগলারের বায়োগ্রাফি হলেও গল্প বারবার ঘুরেফিরে ছেলেবেলায় বাবার কথার দিকেই ফিরে এসেছে – জীবনে টাকার মূল্য খুব বেশী নয়। বাবার এই কথাকে উপলব্ধি জর্জ শেষ পর্যন্ত করেছিল নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে এবং এই ঘটনাগুলোই মূলত জর্জের জীবনের গল্প। শেষের দিকে জর্জ তার বাবাকে একটা ছোট্ট মেসেজ পাঠায় – টেপ রেকর্ডারে। হৃদয় ছুঁয়ে যাবে এই কথাগুলো।

And remember that time when you told me that money wasn’t real. Well old man, I’m 42 years old, and I finally realize what you were trying to tell me, so many years ago. I finally understand. Your the best, pop, just wish I could have done more for you, wish we had more time. Anyway, may the wind always be at your back, and the sun always upon your face, and may the wings of destiny carry you aloft to dance with the stars. I love you Dad. Love George.

যেহেতু ড্রাগ স্মাগলারের বায়োগ্রাফি তাই পুরো ছবিতেই জর্জ জাং চরিত্রে অভিনয় করা জনি ডেপের একচেটিয়া উপস্থিতি। এবং, জনি সেটা দুর্দান্তভাবেই করেছেন। দুই ঘন্টার ছবিতে জনি ডেপ বিভিন্ন লুকে এসেছেন ছবিতে, এবং কোনটাই অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

মাদক নিয়ে চলচ্চিত্রগুলো হৃদয় ছুঁয়ে যায়, ভালো লাগা চলচ্চিত্রের তালিকায় স্থান পায় – কিন্তু মাদকের ব্যবহার বন্ধ হয় না। ড্রাগ অ্যাডিক্টেড এবং ড্রাগ স্মাগলারদের নিয়ে সিনেমা দেখা এই আমরাই গাঁজাকে স্নেহের স্বরে ‘উইড’ বলে ডেকে সুখটান দেই, স্টিক হাত বদলের মাধ্যমে নতুন নতুন হাতকে ঢুকিয়ে নেই আমাদের গন্ডিতে। শুধরে নেই নিজেদের, বাচিঁয়ে দেবো আরও অনেককে – এই পোস্ট শেষ করার আগে এই শপথ নিন। ধন্যবাদ।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

6 Comments on “ব্লো: ড্রাগ স্মাগলারের জীবনী”

  1. মাদক নিয়ে ছবি। টাকা ভাল, ভুল পথে টাকা কারোই ভাল লাগবে না। যাই হোক, আপনার বর্ননায় ছবিটা চোখের সামনে এসে গেল। ভাল ছবি নিঃসন্দেহে। দেখে ফেলা দরকার কিন্তু সেই সময় কি জুটবে?

    চমৎকার লেখা। শুভেচ্ছা।

Leave a Reply to অতিরিক্ত একজন Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *