৫২ বছরের বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের পোস্টার

প্রিন্সেস টিনা খান নামে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের পোস্টারে লেখা – একটি ডেয়ারিং চলচ্চিত্র!

পোস্টারে এই সংলাপ ছাপা হয়েছিল ১৯৮৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমায়। ছবির পরিচালকের নাম আখতারুজ্জামান, যিনি পরবর্তীতে ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ চলচ্চিত্র নির্মান করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন। ১৯৮৪ সালের চলচ্চিত্রের পোস্টাররের সাথে যদি ষাটের দশকের পোস্টার কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত পোস্টারের তুলনা করা হয় তাহলে ধারনা পাওয়া সম্ভব – বাংলাদেশী সিনেমার পোস্টারের পরিবর্তনটা কিভাবে হচ্ছে। এই ধারনা লাভের জন্য আপনাকে দেখতে হবে বিভিন্ন সময়ের চলচ্চিত্রের পোস্টার আর এ জন্য আপনাকে যেতে হবে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ এবং বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এর যৌথ উদ্যোগে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারীতে অনুষ্ঠিত – বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের পোস্টার প্রদর্শনীতে।

১৯৫৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মাটির পাহাড়’ থেকে শুরু করে ২০১১ সালের ‘গেরিলা’ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ষাটটিরও বেশী বিখ্যাত-আলোচিত চলচ্চিত্রের পোস্টার প্রদর্শিত হচ্ছে প্রদর্শনীতে। মাটির পাহাড় আর গেরিলা ছাড়া আছে সালাউদ্দিন পরিচালিত ‘যে নদী মরু পথে’, ‘ধারাপাত’, সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘সুতরাং’, খান আতাউর রহমানের ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’, ‘সোয়ে নদীয়া জাগে পানি’, জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’, নারায়ন ঘোষ মিতার ‘ক খ গ ঘ ঙ’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘ওরা ১১ জন’, আলমগীর কবিরের ‘ধীরে বহে মেঘনা’। আছে কিশোরদের নিয়ে চলচ্চিত্র ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী, ছুটির ঘন্টা, পুরস্কার-এর পোস্টার, আরও আছে মাসুদ রানা, পালঙ্ক, যখন বৃষ্টি এল (দি রেইন), দেবদাস, লালন ফকির, সারেং বউ, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, চাকা, ব্যাচেলর, ঘানিসহ বিভিন্ন বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের পোস্টার।

কয়েকটা বিশেষ পোস্টারের কথা বলি।
ধারাপাত ছবির পোস্টারে কোন ছবি নেই, শুধু চারবার ‘ধারাপাত’ লেখা হয়েছে।
মাসুদ রানা ছবির পোস্টারের মাসুদ রানার পেছনে শার্লক হোমসের মত হ্যাট পড়া একটা কালো ছায়া।
চাকা ছবির পোস্টারে বাংলা, ইংরেজি এবং ফরাসী ভাষায় নাম লেখা কারণ ছবিটা ফ্রান্সেও প্রদর্শিত হয়েছিল।
ফেরারী বসন্ত ছবির পোস্টার নেই যা আছে সেটা পোস্টারের প্রাথমিক স্কেচ।

পোস্টার প্রদর্শনীতে দেখা হয়ে গেল প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা সাইফুল ওয়াদুদ হেলালের সাথে। ‘ক খ গ ঘ ঙ’ – ছবির পোস্টারের দিকে আঙ্গুল তুলে দেখালেন – আমার জীবনে প্রথম দেখা সিনেমা। একই অভিজ্ঞতা হতে পারে যে কারোরই। এক একটা পোস্টার দর্শককে মনে করিয়ে দিতে পারে অতীতের দারুন সব স্মৃতি।

১৯৫৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে ২৪০০-র বেশী, এর মাঝে মাত্র ৬০-৬৫ বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের পোস্টারের প্রদর্শনী খুব কম মনে হতে পারে। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বার সেক্রেটারি আনিসুর রহমান লিটু-কে এ বিষয়টা উত্থাপন করতেই স্বীকার করলেন, একই সাথে জানালেন এতগুলো বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের পোস্টারের মাঝ থেকে পোস্টার বাছাই করাটা ছিল তাদের জন্য সবচে জটিল কাজগুলোর অন্যতম। এত এত ভালো ছবির মাঝ থেকে একটা পোস্টার বাছাই করার জন্য তাদেরকে অনেক কিছু বিবেচনা করতে হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বেশী ছবি প্রদর্শনের চেষ্টা থাকবে সে নিশ্চয়তাও পাওয়া গেল।

আজ শুরু হওয়া বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের পোস্টার প্রদর্শনী চলবে আগামী ৫এপ্রিল পর্যন্ত। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সেরা ছবিগুলোর পোস্টার নিজ চোখে দেখার এ সুযোগ হারানো ঠিক হবে কি?

(ইচ্ছাকৃতভাবেই কোন পোস্টারের ছবি দেয়া হল না, ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখতে হলে একটু পরিশ্রম করতেই হবে)

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

13 Comments on “৫২ বছরের বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের পোস্টার”

  1. অতীত ও বর্তমানের মেলবন্ধন এই প্রদর্শনী।
    অবশ্যই আমাদের ঋদ্ধ করবে।

    দারাশিকো ভাইয়ের লগে আমিও ছিলাম।
    চমৎকার অভিজ্ঞতা। চলচ্চিত্র নিয়ে আগ্রহী মানুষদের ভীড় দেখে ভালো লাগল।

    1. হা হা হা
      আসলে ছবি তুলতে পারি নাই, ক্যামেরা গ্যাঞ্জাম করতেছে। কালেক্ট করা যেত, কিন্তু ইচ্ছা করে নাই। পোস্টার নিজের চোখে দেখা আর ছবিতে দেখায় তফাৎ আছে। তাই আরকি 🙂 🙂
      দেখে আসবেন, ভালো লাগবে নিশ্চিত। অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যাবে …
      ভালো থাকবেন ভাইয়া 🙂

  2. অসাধারণ! আইএমডিবি তে মাঝে সাঝে ট্রিভিয় পাওয়া যা, কিন্তু আমাদের দেশের ব্যাপার এইসব ব্যাপার নিয়ে কেউ কোন কিছু করলো না। পালটে দেবার স্বপ্ন আপনের গেলো না ভাই!

    1. সময় শেষ হয়ে যায় নাই ভাই। পাল্টে যাওয়ার সময় তো সবে শুরু। আরও কত কি বাকী … আপনিও যোগ দিন পাল্টে দেয়ার এই যাত্রায় 🙂

  3. It’s pity that I missed the exhibition. I am a PhD researcher of Fine Arts (DU) and working on poster. Is there any opportunity for me to collect information from the organizer? Please let me know.

    1. Welcome to Darashiko’s blog, Sidhartha 🙂
      I don’t know what type of information you are looking for – if it is about the posters, you better communicate with the Bangladesh Film Archive Authority, and, if it is about the films, you can check Kabbo Vai in facebook. His recent articles are about old day’s films. He is not an academician but he has profound knowledge about Bangladeshi films.

      Please let me know if I can help you further. Inviting you to visit again 🙂

Leave a Reply to কাউসার রুশো Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *