সাদা-কালো-রঙিন দেবদাস

রঙ্গীন দেবদাস সিনেমার পোস্টার

খুব কম পরিচালকের ভাগ্যে একই ছবি দুবার বানানোর সুযোগ ঘটে। চাষী নজরুল ইসলাম সেদিক থেকে সৌভাগ্যবান। ১৯৮২ সালে বুলবুল আহমেদ, কবরী, আনোয়ারা এবং রহমানকে নিয়ে বানিয়েছিলেন সাদাকালোর দেবদাস। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় এবার বানিয়েছেন রঙিন দেবদাস। বুলবুল আহমেদের স্থানে এসেছেন বর্তমান সময়ের সবচে জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান, কবরী ও আনোয়ারার জায়গায় অপু বিশ্বাসমৌসুমী এবং রহমানের স্থলে শহীদুজ্জামান সেলিম। সাদা-কালোর জায়গায় শুধু রং-ই আসেনি, ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে।

রং আর অভিনেতা-অভিনেত্রী পাল্টিয়েই ভালো সিনেমা নির্মান সম্ভব নয়, কারণ, ত্রিশ বছরে দর্শক পাল্টে গিয়েছে অনেক। বর্তমান সময়ের বেশীর ভাগ দর্শক দেবদাস বলতে ত্রিশ বছর আগের বুলবুল আহমেদকে বোঝেন না, তারা বোঝেন শতকোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত হিন্দী সিনেমা দেবদাসের শাহরুখ খানকে। সুতরাং, ত্রিশ বছর বাদে হিন্দী দেবদাসকে সামনে রেখে আবারও দেবদাস বানানোর ঝুঁকি মোটেই ছোট নয়, তবে আশার দিকও তো রয়েছে। ত্রিশ বছরে পরিচালকটিও তো বসে নেই, আরও ছবি বানিয়ে পরিপক্ক হয়েছেন , ফলে শুধু সাদাকালো দেবদাস নয়, নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ারও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কতটুকু সফল হলেন সে বিবেচনার জন্য সাদাকালো-রঙিন দু দেবদাসেরই প্রয়োজন।

দেবদাস: সাদাকালো বনাম রঙ্গীন

অমর কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রদ্বয় নির্মিত। জমিদার বাড়ির ছেলে দুরন্ত প্রকৃতির দেবদাসকে শোধরানের উদ্দেশ্যে কোলকাতায় পাঠালে তার তার খেলার সাথী পার্বতীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটে। দশ বছর গ্রামে পরে ফিরে এলে পার্বতীর পরিবারের পক্ষ থেকে দেবদাসের সাথে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয়। কিন্তু দেবদাসের বাবার অমত থাকায় পার্বতীর বিয়ে ঠিক হয় অন্যত্র। পার্বতীর বিয়ে হয়ে গেলে দেবদাসের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়। দেবদাসের কাহিনী এতটাই পরিচিত যে এর বেশী কিছু বলার নেই। বলতে হবে সেই গল্পের দৃশ্যায়ন সম্পর্কে।

সাদাকালো আর রঙিন – দুটো দেবদাসের চিত্রনাট্যই পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম লিখেছেন। অথবা, একই চিত্রনাট্যে দুটো সিনেমা নির্মান করেছেন। দৃশ্যায়ন থেকে শুরু করে সংলাপ প্রায় একই, রং এর সাথে অভিনেতা অভিনেত্রী আর লোকেশন পাল্টেছে শুধু। তবে, সাদাকালোর দেবদাসের গল্প লিনিয়ার – সরল রেখায় এগিয়েছে। আর রঙিন দেবদাসে গল্প শুরু হয়েছে কোলকাতায়, যুবক দেবদাস আর চুনীলালের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে। তারপর ট্রেনে চেপে গ্রামে ফিরতে ফিরতে ফ্ল্যাশব্যাকে ছোটবেলার দেবদাস-পার্বতীর ঘটনাবলী উঠে এসেছে। এর পরের অংশটুকু সরলরৈখিক। সাদাকালো দেবদাসের দর্শকরা তবে কেন রঙিন দেবদাস দেখবেন, যদি দেখতে চান, সে প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

দেবদাস চরিত্রে শাকিব খান
শাকিব খান নায়কোচিত অভিনয় থেকে অনেকটাই বেরিয়ে আসতে পারলেও পুরোটা পারেন নি। দেবদাসের মত সাহিত্য নির্ভর ছবিতে অভিনয়টা বেশী প্রয়োজনীয় ছিল।

হয়তো শাকিব খানের জন্য। একই চিত্রনাট্য হওয়ার কারণে শাকিব খান এখন বুলবুল আহমেদের প্রতিদ্বন্দ্বী। কবরী (পার্বতী) আর আনোয়ারা (চন্দ্রমুখী)র প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন অপু বিশ্বাস ও মৌসুমী। শাকিব খানের চরিত্র ও অভিনয় নিয়ে বলতে গেলে প্রশ্ন আসবেএই ধরনের চরিত্রের জন্য শাকিব খান-ই উপযুক্ত ছিলেন কিনা। আমি বলবো, না। কেন?

চিত্রনাট্যে দেবদাসের বয়স কুড়ির এদিক-ওদিক। সেই তুলনায় শাকিব খান বেশ বয়স্ক। সদ্য যুবার যে রূপ দেবদাস চরিত্র থেকে আশা করা যায় তা শাকিব খানের মধ্যে নেই। একই সাথে তার ঢুলু ঢুলু চোখ দ্বিতীয়াংশে আর ফোলা ফোলা গাল প্রথম অংশে প্রয়োজনীয় হলেও বাকী অংশে অপ্রয়োজনীয় এবং বাহুল্য যা চরিত্রের সাথে বেমানান। কিন্তু অভিনয়ের দিকে গুরুত্ব দিলে শাকিব খান তার অন্যান্য যে কোন সিনেমার চরিত্রের চেয়ে ভালো অভিনয় করেছেন। স্বয়ং পরিচালক শাকিব খানের এই অভিনয় সম্পর্কে বলেছিলেন –

শাকিব খান এ সময়ের এক নম্বর নায়ক, কাজেই সাংঘাতিক ব্যস্ত। কিন্তু দেবদাসের শুটিংয়ে সময় দিতে মোটেও কার্পণ্য ছিল না তার। আমি তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য হয়তো দ্রুত শট ওকে করছি। কিন্তু শাকিব বলছে, না চাষী ভাই এই শটটা ভালো হয়নি। এই শটটার আরেকটা টেক নিন। আমার প্রত্যাশার চেয়েও অনেক ভালো অভিনয় করেছেন শাকিব।

মিথ্যে নয়। শাকিব খান সত্যিই নিজেকে ছাড়িয়েছেন – এই ছবির জন্য তার মনযোগ চোখে পড়ে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাদা কালোর দেবদাসকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন নি শাকিব খান। এর প্রধান কারণ সম্ভবত বর্তমান সময়ে তার অবস্থান। দেবদাস চরিত্রের জন্য নায়কের চেয়ে অভিনেতার বেশী প্রয়োজন ছিল যা শাকিব খান পুরোটা কাটিয়ে উঠতে পারেন নি তার আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও।

সাদাকালোর দেবদাস বুলবুল আহমেদকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন নি শাকিব খান, পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম একই সাক্ষাতকারে বলেছিলেন,

অনেকের মতে এ পর্যন্ত যতোগুলো দেবদাস তৈরি হয়েছে তার মধ্যে সেরা পার্বতী ছিলেন কবরী। অপু বিশ্বাসকে পার্বতী চরিত্রে কাস্ট করার সময় আমার নিজের ভিতরই দ্বিধা ছিল। অপু তো এখন পর্যন্ত সাহিত্যনির্ভর ছবিতে তেমন কোনো সিরিয়াস চরিত্র করেননি। তাই সন্দেহ ছিল সে কতটুকু পার্বতী হতে পারবে। অপু পেরেছে এবং ভালোভাবেই পেরেছে। অনেক ক্ষেত্রে তার অভিনয় কবরীকে ছাড়িয়ে গেছে বলে আমার মনে হয়েছে।

আসলে কি তাই? পার্বতী চরিত্রে কবরী যতটা মানানসই, অপু ততটা ছিলেন না – তাকে একটু বয়স্ক বলে মনে হয় এবং কবরীর সরলতা তার মধ্যে অনুপস্থিত। তবে, অপু বিশ্বাস প্রত্যাশার চেয়েও ভালো অভিনয় করেছেন বলে মেনে নিচ্ছি। এই ছবির মাধ্যমে অপু বিশ্বাস তার যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন – এই যোগ্যতাকে কাজে লাগানো সম্ভব হলে অপু বিশ্বাস হয়তো সত্যিই কবরীকে ছাড়িয়ে যেতে পারবেন। তবে এ জন্য অপু বিশ্বাসকেও মনযোগী হওয়া দরকার – বিশেষত তার স্বাস্থ্য সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়াবে।

দেবদাস সিনেমায় মৌসুমী
শুধু নাচের মুদ্রাই নয়, অভিনয়েও নজর কেড়ে নিয়েছেন মৌসুমী

সাদা কালোর দেবদাসের কোন কিছু যদি ছাড়িয়ে যেতেই হয় তাহলে বলতে হবে চন্দ্রমুখী চরিত্রে মৌসুমীর কথা। অভিনয় বলুন আর এক্সপ্রেশন – আনোয়ারার চেয়ে অবশ্যই ভালো করেছেন মৌসুমী। বাঈজী চরিত্রে তার নাচ অনেক বেশী আকর্ষনীয়, কোমলমতি প্রেমিকার চরিত্রেও।

চলচ্চিত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র চুনীলাল। সাদাকালো দেবদাসে অভিনয় করেছিলেন রহমান, রঙিনে শহীদুজ্জামান সেলিম। মূল উপন্যাস চুনীলালকে যেভাবে উপস্থাপন করেছে, সাদাকালো দেবদাসে খুড়িয়ে হাটা রহমান তার অনেকটাই তুলে ধরতে পেরেছেন, কিন্তু রঙিন দেবদাসে চুনীলালের চরিত্রটি সেই তুলনায় অনেকটা গৌন। শহীদুজ্জামান সেলিম ভালো অভিনয় করেছেন কিন্তু তার চরিত্র আরেকটু বিকশিত হলে আরও ভালো হত।

গত ত্রিশ বছরে দেবদাস রঙিন হয়েছে, সেই সাথে বেড়েছে জৌলুস। রঙিন দেবদাসে বিশালাকৃতির মুখার্জী বাড়ি রঙিন টাইলস দিয়ে মোড়ানো, জানালাগুলো থাই অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরী, ভেতরে আধুনিক ডিজাইনে বার্ণিশ করা আসবাব। বর্তমানের দেবদাস পড়েন আধুনিক বাধাইয়ের শেক্সপিয়র। একটু কি বেখাপ্পা লাগছে না? শিল্প নির্দেশনার দিক থেকে রঙিন দেবদাস এভাবেই পার্থক্য তৈরী করেছে সাদাকালো দেবদাসের সাথে। সাদাকালো দেবদাসে এই জৌলুস ছিল না, কিন্তু সেটা অপেক্ষাকৃত বাস্তবধর্মী – সময়টাকে তুলে আনতে অনেক বেশী সক্ষম হয়েছিল।

সাদাকালো দেবদাসের দুটো গানগুলো লিখেছিলেন রফিকুজ্জামান, রঙিন দেবদাসেও লিখেছেন। পিরিয়ড সিনেমায় আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারের ত্রুটিটুকু এড়িয়ে যেতে পারলে সবগুলো গানই শ্রুতিমধুর। সৈয়দ শামসুল হকের লেখা এবং ইমন সাহার সুরে সুবীর নন্দীর কন্ঠে দেবদাসের মৃত্যুদৃশ্যের গানটি একদম মনের গভীরে পৌছে যায়।

গুণী পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম কেন একই চিত্রনাট্যে দুটি চলচ্চিত্র নির্মান করতে চেয়েছেন তার জবাবে বলেছিলেন,

স্যাটেলাইট প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের তরুণ প্রজন্মের সাহিত্যের সঙ্গে যোগাযোগটা কম। বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডার যে কতটা সমৃদ্ধ তা তারা জানে না। দ্বিতীয়বার দেবদাস নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছি আমি আসলে তরুণ প্রজন্মের দর্শকদের জন্যই।

তার এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু একই চিত্রনাট্যে একই পরিচালক কর্তৃক দুটো চলচ্চিত্র নির্মান করা হলে পরস্পরের তুলনা হবেই। সেই তুলনায় সাদাকালো দেবদাস এগিয়ে থাকবে রঙিন দেবদাসের তুলনায় এবং এ কারণে এই পরিচালক সেই পরিচালকের তুলনায় কম নাম্বার পেতে পারেন। আবার, শাকিব খান, অপু বিশ্বাস এবং মৌসুমী-কে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য বাহবা-ও পাবেন তিনি। রঙিন দেবদাস সত্যিই এ যুগের দর্শকের জন্য যারা সাদাকালো দেবদাস দেখে নি – সাদাকালোর দর্শকদের তৃপ্ত করার জন্য রঙিন দেবদাস নয়।

রেটিং: ৪/৫

তথ্যসূত্র ও ছবি
বাংলানিউজ ২৪
কালেরকন্ঠ
ফেসবুক

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

22 Comments on “সাদা-কালো-রঙিন দেবদাস”

  1. ডিজিটালি দেখিয়েছে নাকি ৩৫ মি মি তে? আমি কয়েকদিন পর দেখার প্লান করছি।

    1. আনন্দতে ডিজিটাল। তবে সম্ভবত ফিল্ম ফরম্যাটে বানানোর কারণে ‘ভালোবাসার রং’ এ যে রং পেয়েছিলাম সেটা পাই নাই।

      এতে অবশ্য সমস্যা হয় নি কোন।

      1. আনন্দ হল ডিজিটাল নয়। কারণ এই হল এখন বন্ধের পথে। আপনি ডিজিটাল সিস্টেমে দেবদাস দেখলেও সেটা জাজ মালটিমিডিয়া এর ডিজিটাল প্রজেকশন নয়। এটা রেইন এর কাজ। আর তারা নরমাল কম্পিউটার এর প্রজেক্টর দিয়ে সিনেমা প্রজেকশন করে। যা দর্শক দের সাথে এক ধরনের প্রতারণা। যার কারনে রং পাননি।

        1. হুম। জাজ এর ডিজিটাল নয়, দি রেইন পিকচার্স এর ডিজিটাল প্রজেকশন ছিল।
          জাজ এবং রেইন পিকচার্স এর ডিজিটাল প্রজেকশন নিয়ে আরো একটু জানার আছে। এর আগে একবার পড়েছিলাম – জাজ যে রেজুলেশনের প্রজেক্টর ব্যবহার করছে সেটা বিলো ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড। রেইন পিকচার্সের কথা জানলাম অল্প কিছুদিন আগে। তাদের বিষয়ে কোন প্রকার তথ্যই পাই নি। আপনি কিছু দিতে পারেন?

          ভালো থাকুন দেশপ্রেমিক 🙂

          1. জাজ যে প্রজেক্টর ব্যবহার করে বলে বলে বলেছে, সেটি বিশ্বমানেরই। একেকটার দাম প্রায় ২৫ লাখ। ২কে/ ৪কে প্রজেক্শন করতে পারে এগুলো।

            এই ধরনের বানিজ্যিক ডিসিপি প্রজেক্টর বানায় জাপানের NEC, কানাডিয়ান Christie এবং বেলজিয়াম এর Barco.

            জাজ বারকো এর ডিসিপি প্রজেক্টর ব্যবহার করে।

  2. শাকিব খান আর আপু বিশ্বাসকে যথাক্রমে দেবদাস আর পার্বতী চরিত্রে মানিয়ে যাওয়ার কথা না। যাই হোক হয়তো মানাতেও পারে। ছবিটা দেখলে বোঝা যাবে।
    আচ্ছা মান্না অভিনীত দেবদাস আছে নাকি??

  3. আপনে তো লোক ভালো না… অপু বিশ্বাসের শরীরস্বাস্থ্য নিয়ে কথা কন। :p
    আমি শুধু ট্রেইলার দেখছি, তাই এই মুভি নিয়ে কথা বলা আমার মানায়না। তারপরেও ট্রেইলার দেখে, পুরানো দেবদাস দেখে এবং আপ্নের রিভিউ গরম গরম থাকতে থাকতে মন্তব্য করতে চাইলাম।
    “গত ত্রিশ বছরে দেবদাস রঙিন হয়েছে, সেই সাথে বেড়েছে জৌলুস। রঙিন দেবদাসে বিশালাকৃতির মুখার্জী বাড়ি রঙিন টাইলস দিয়ে মোড়ানো, জানালাগুলো থাই অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরী, ভেতরে আধুনিক ডিজাইনে বার্ণিশ করা আসবাব।” একমত। আমার মনে হয় সবকিছুতে হিন্দি সিনেমা ফলো করার যে মানসিকতা আমাদের দর্শকদের মধ্যে গেঁথে গেছে, তার প্রভাব কিছুটা পরিচালকের মধ্যেও পড়ছে। ট্রেইলার দেখে আমার বেশ কয়েকবার মনে হয়েছে শাকিব খান শাহরুখরে নকল করতে চাচ্ছে। টোটালি এবসার্ড। শরতচন্দ্র নিচতলার মানুষ, উনার লেখাও নিচতলার মানুষের চোখের সামর্থ্যানুযায়ীই হইছে – বুলবুল আহমেদের দেবদাস সেই আবেদনটা রাখতে পারছে, পুরানো দেবদাস দেখে মনে হয় এই দেবদাস আমার পাশের বাড়িতেই থাকে।
    আর মৌসুমী অলটাইম আমার ফেভারিট, গ্ল্যামার থাকলে অভিনয়গুণ থাকবেনা – এই ধারণা মৌসুমীর ক্ষেত্রে ভুল।
    আশা করে আছি যেনো নতুন দেবদাস হিন্দি দেবদাসের বেশি ছায়ায় না থাকে- যতটুকু ট্রেইলার দেখে আমার মনে হয়েছে।
    আর দেবদাস কারেক্টারে কেনো জানি আমার আরফিন শুভ আর পারু চরিত্রে পূর্ণিমা বা মমরে দেখতে ইচ্ছা করছে।

    1. আরেফিন শুভ??
      জানিনা। অনেকক্ষণ ধরে চিন্তা করতেছি এ মূহুর্তে আমাদের দেশের কোন অভিনতোকে দেবদাস চরিত্রে মানাবে। ভেবে কাউকে পাচ্ছিনা আপাতত

      1. হ্যাঁ, এইটা ঠিক যে আরেফিন শুভ্র গাট্টাগোট্টা শরীর একটু বেমানান দেবদাস কারেক্টারের সাথে, কিন্তু হের প্রথম দিককার কিছু নাটক দেইখা মনে হইছে ওরে পরিচালক আল্টিমেটাম দিয়া যদি শরীর খাপে আনাতে পারে তাইলে সম্ভব ওরে দিয়া দেবদাসের লুক আনা- বিশেষ করে শেষ দিককার অভিমানী দৃশ্যগুলা যায় ওর লগে।

        1. স্যারি, আমি নামটা হয়তো ভুল করতেছি, আরে শুভ নামের একটা পোলা আছে না… কয়দিন ধরে পূর্নিমার লগে অভিবয় করতেছে… তার কথা কইলাম। থুক্কু, মিচটেক।

    2. শাকিব খান শাহরুখ খানকে নকল করতে চাচ্ছে ঠিক তেমনটা মনে হয় নি, তবে সে তার স্বাভাবিক নায়কোচিত স্টাইল থেকেও বের হতে পারে নি। তার দোষও পুরোটা দিতে পারছি না – বছরে কয়টা পিরিয়ড আর সাহিত্য নির্ভর ফিল্ম করে সে?

      মৌসুমী মোটু হয়েছে, কিন্তু চন্দ্রমুখী চরিত্রে খারাপ লাগলো না তো। আরেকটু ছোটখাটো শরীরের হলে হয়তো আরও বেশী মানিয়ে যেতো।

      পারু চরিত্রে পূর্ণিমা একটি ভালো চয়েস ছিল, তবে কি যেন শুনলাম – শেষ পর্যন্ত পূর্ণিমা বাদ পড়ে গিয়েছিল। আর হ্যা, শাকিব খানের পরিবর্তে আমি বিকল্প কাউকে ভাবতে পারি নি, বিশেষ করে ফিল্মী পাড়া থেকে। নাটক পাড়ায় হয়তো পাওয়া যাবে।

      আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। ইউটিউব থেকে কষ্ট করে ছবিটা নামিয়ে পাঠিয়েছিলেন বলে। নাহয় আরও সময় লেগে যেত এই লেখাটি শেষ করতে। ভালো থাকুন বস 🙂

  4. অপুর স্বাস্থ্য দেখলে আমার আম্মাও ভয় পাইত।(আমার আম্মা অনেক মোটা ছিলেন,আমি যেহেতু শুকনা ছিলাম তাই হয়ত একটু বেশী ই মোটা লেগেছে।এখন যদি আম্মাকে দেখতে পেতাম তাইলে হয়ত এত মোটা লাগতোনা,কারন এখন আমার উন্নতি হইছে)

    এই মেয়েটা খুব খারাপ অভিনয় করেনা।ইনোসেন্ট একটা ভাব আছে তার মধ্যে।কিন্তু আধুনিক কোন ড্রেসে তারে দেখলে অসহ্য লাগবে যে কারো।ময়ুরী থেকে ভিন্ন কিছুই মনে হবেনা।

    ভালোবাসলেই ঘর বাধা যায়না সহ আরো কয়েকটা মুভিতে তারে ভালো ই লেগেছে।
    যাক সে তাহলে এইখানে ভাল করার চেষ্টা করেছে।কবরী থেকে এগিয়ে যাওয়ার আশা আসলে কেউ করে বলে মনে হয়না।এইটা একটু প্রচারনা আর কি।

    শাকিব খান!!!

    ৩টা বছর লাগাইছে সে এই মুভি শেষ কর্তে।ভাবতারেন?এই কয়দিনে সে কি আরো মোটা হয়নাই? ঐ সময়ে তো কিছুটা লাইনে ছিল।মুভিটা ১০ সালেই শেষ কর্তে পার্ত।কিন্তু করেনাই।

    চাষী নজরুল যে বলেছে আগের দেবদাসকে ছাড়িয়ে গেছে সেইটাও তারে খুশী রাখার জন্য। বেচারা চাষী নজরুল!

    শাকিব নায়ক।কিন্তু অভিনেতা না। তবে অভিনয় খুব খারাপ করেনা।চেষ্টা কর্লে অভিনেতার তকমাটাও সে নিজের সাথে জুরাইতে পারে…কিন্তু তার জন্য যেরকম ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন সেটা সে কর্বে কি না শিউর না।

    বুলবুল আর কবরীর সাথে শাকিব অপুর তুলনা কর্লে দুজনেই বেস পিছনে থাকবেন।যদিও আপনে তাদের নিয়ে অনেক আশার কথা শুনাইছেন।

    খারাপ লাগেনাই।ভালো ই লাগে আশার কিছু শুনলে।

    সবশেষে মৌসুমি।
    ভিন্নমতে যাওয়ার সুযোগ নাই।(এখন কি সে কিছুটা স্লিম হইছে?)

    আর সিনেমার ট্রেলার যা দেখলাম।তাতে মনে হইছিল যেরকম বিগ বাজেটের দরকার রঙ্গীন দেবদাসের জন্য সেটা হয়নাই।সেট অনেকাংশেই দূর্বল রংচঙের মনে হইছে।

    শাহরুখের দেবদাসের পরে দেবদাস বানাইতে হইলে বাজেটের দরকার।সেটা আমাদের লোকেরা বুঝতে পারেনাই।

    ধন্যবাদ দেবদাসের প্রথম রিভিউ’র জন্য!

    1. কবরী থেকে এগিয়ে যাওয়ার আশা কিন্তু সত্যিই করি বস। কবরী অনেক দারুন গল্পে অভিনয় করার সুযোগ পাইছিল, এখন এই সুযোগ কই? সুযোগ দেন – কে বলবে না মুনমুন ময়ূরীও অনেক ভালো করতে পারে।

      শাকিব খানকে বেছে নেয়ার একটাই কারন – তার বাজার আছে। শাকিব খান ছাড়া অন্য কেউ হলে এই ছবি কতটুকু চলতো সেটা সন্দেহ। শাকিবের ফোলা গাল আর ঢুলু চোখ – খুব দৃষ্টিকটু লাগল। নিভু নিভু চোখ আর টানা টানা চোখের মধ্যে তফাৎ কম।

      বুলবুল-কবরীর তুলনায় শাকিব-অপু পিছায়া থাকবে স্বাভাবিক। এইটা পুরাটা তাদের দোষ না, তবে তারা ভাগীদার। ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা, গল্প বলার ঢং এ পরিবর্তন ইত্যাদি সব কিছুই ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছি।

      মৌসুমী স্লিম হয় নাই। তবে খারাপও লাগে নাই। তবে আমি শাহরুখ অভিনীত দেবদাসও দেখছি। কিন্তু কেন জানি এই দেবদাস দেখার সময় সেই দেবদাসের কথা ভাবি নাই। জৌলুস কম হোক – অথেনটিক জিনিস বানাক, দেবদাস ভালো লাগবে।

      সিনেমাটা আমার ভালো লাগছে। সিনেমার পুরা কাহিনীই আমি জানি। কিন্তু তারপরও মৃত্যু দৃশ্যের গান শুনে চোখে পানি আসে কেন?

      ভালো থাইকেন বস।

      1. বস কি আর কমু…এখনো কোন বাংলা সিনেমায় রাজ্জাকের কোন কষ্টের ডায়ালগ শুনলে আমার চোখে পানি এসে যায়।সাউথ ইন্ডিয়ার সিনেমাগুলিতেও যখন ফ্যামিলি ক্রাইসিস দেখায় আমি চোখে পানি ধরে রাখতে পারিনা।
        টিভিতে দেখা ইরানি মুভি দেখার কথা মনে পইড়া যায়…আমার কান্না তখনো ছিল এখনো আছে।

        শাকিব খান কষ্টের অভিনয় ভালো কর্তে পারে।রাগী চরিত্রেও সে ভাল।

        আমার স্বপ্ন তুমি নামের মুভিটা দেখেছিলেন?

        বুক ফাটা কান্নার দৃশ্য কেমন হয় সেখানে সে দেখিয়েছিল।তার সাথে মনের মানুষ আরেকজনের হয়ে যাওয়ার দুঃখে যে কেউ নিজেকে মেলাতে পার্বে।

        সে পারেনা তেমন মানতে নারাজ আমি।সেসময় তার বডি ফিটনেস আর অভিনয়ের প্রতি যে মনোযোগ ছিল সেটা ষ্টার হওয়ার পরে অনেকটাই কমে গেছে।

        ময়ুরীও ভাল অভিনয় কর্তে পারে…নার্গিস আখতার দেখিয়ে দিয়েছিল।

        আর সুযোগ?বস এই মুভি নিয়ে যা করা হইছে,এইতো প্রেম না নিয়া যা হইছে তা দিয়া অনেক কিছুই পরিস্কার।সিন্সিয়ারিটি জিনিষটা তাদের মধ্য থেকে চলে গেলে সুযোগে কি হয়?

        পূর্নিমাকে নেওয়ার কথা ছিল।কিন্তু শাকিব খানের অপু পিরিতির জন্য আর পূর্নিমার সাথে শাকিবে মনোমালিন্যর কারনে বাদ পরে গেছে।

        চাষী নজরুলের সাথে পূর্নিমার সমস্যার কথা শুনিনাই কখনো…কারন পূর্নিমার ভালো সব মুভির পরিচালক ই চাষী নজরুল।

        আপনার কথা বলিনাই আমি।আমাদের অনেক দর্শক ই এই দেবদাস দেখার পরে শাহরুখরে কল্পনা কর্ব।আর শাকিবরে খারাপ কইব।

        বাংলা ভাল মুভি(যে কয়টা ই হয়)দেখা মিস হইতেছে অনেকদিন ধইরা।আপনাদের রিভিউ আমার মনোকষ্টের কারন সেটা কি জানেন?

        আমাদের সিনে বাজারটা কেন বড় হচ্ছেনা সেই আফসোসে দিন কাটাই।
        আরব আমিরাত মালয়শিয়া কাতার ওমান সিঙ্গাপুর কোরিয়াতে যেসব শ্রমিক আছেন তারা কিন্তু সেসব অঞ্চলের সিনেমা দেখার জন্যেও সপ্তাহে একবার সিনেমামুখি হয়…

        মালয়লাম ২ থেকে ৩কোটি রুপির মুভি দেখতে এই দেশে কেরালাবাসীর অভাব হয়না।

        তামিল আর তেলুগু মুভি তো মালয়শিয়া রিলিজ দিয়া ই হিট হইয়া যায়।ইন্ডিয়াতে না দিলেও চলে অবস্থা।

        অথচ এক কোটির বেশী মানুষ আমরা বাইরে থাকি।আমাদের বিনোদন নেয়ার জন্য হলিউড বলিউড তামিল ইউরোপিয়ান(যারা ইউরোপে থাকে) মুভি আমরা হলে গিয়ে দেখি।নিজের দেশের মুভি দেখার সুযোগ নাই আমাদের।

        ভাল থাইকেন আপনেও।বেশী কৈরা বাংলা মুভির রিভিউ লিইখা আমাদের দুশের স্বাদ ঘোলে মেটানোর সুযোগ আমাদের দিবেন সেই কামনায় থাকলাম।

        অন্যরকম ভালোবাসার কি খবর বস?
        দেখবেন না?
        দেখলে রিভিউ দিয়েন।বাপ্পি মাহি কতটুকু উন্নতি কর্ল জানতে মন চায়।

  5. ছবিতে প্রথমে পূর্নিমাকে নেয়া হয়েছিলো পার্বতী চরিত্রে কিন্তু পরিচালকের সাথে তার কি জানি সমস্যা হওয়ায় শেষ মুহূর্তে পূর্নিমাকে বাদ দিয়ে অপু বিশ্বাসকে নেয়া হয়।

    দেবদাস চরিত্রে শাকিব খান একেবারে বেমানান। শুধু এই চরিত্রে কেনো, কোনো চরিত্রই শাকিব খান ফুটিয়ে তুলতে পারে না। বাজে অভিনেতা।

    1. শাকিবকে বেছে নেয়ার কারণ তো বোঝাই যায় – তার দর্শক আছে, সিনেমাটা ব্যবসা করতে পারবে। তবে অলটারনেটিভ কে হবে? আমি জানি না 🙁

      দারাশিকো’র ব্লগে স্বাগতম দুরন্ত। আবারও আসবেন। ভালো থাকুন 🙂

      1. দেবদাস চরিত্রে রিয়াজ কিংবা ফেরদৌসকে নিলেও শাকিবের চেয়ে ভালো অভিনয় করতো কারন শাকিবের চেয়ে ঐ দুইজন ভালো অভিনেতা। আর যদি নতুনদের নিয়ে করার কথা আসে তবে টিভির অভিনেতাদের থেকে কাউকে নিয়ে দেবদাস করা যেতো। শাকিবকে নেয়াতে ছবির গ্রহনযোগ্যতা কমে গেছে অনেক কারন শহরের শিক্ষিত লোকেরা বেশির ভাগই শাকিবের ছবি দেখে না।

        বাই দ্য ওয়ে, যেই পোস্টারটা দিলেন এটার ব্যাকগ্রাউন্ডের নর্তকীদের ছবিটা হিন্দি দেবদাস থেকে মেরে দেয়া হয়েছে।

        1. রিয়াজকে নিলে এটা আর কোন সিরিয়াস সিনেমা হত না, হত একটা কমেডি শো। বর্তমান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এ সিনেমার জন্য শাকিবের বিকল্প কেউ নেই। সিনেমার বাজেট কম, তাও যতটুকু বাজেট তা তুলে আনার জন্য শাকিবকে ছাড়া উপায় নেই। আর শাকিব বাজে অভিনেতা এটা বলাটা একটা কমন ফ্যাশন।

Leave a Reply to দারাশিকো Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *