এক্সাম: একটি রুমে একটি সিনেমা

এক্সাম নামের ব্রিটিশ থ্রিলার সিনেমাটা আমি দেখেছি কারণ এটা দেখলে সাজিদ নামের এক পিচ্চি (সাইজে নয়, বয়সেও নয় – আমার সাথে বয়সের পার্থক্যে) আমাকে একশ’ টাকা দিবে। গত তিন সপ্তাহ ধরে সে আমাকে উত্যক্ত করছে প্রচন্ড রকম। দুটো সিনেমা দেখতেই হবে – একটা এক্সাম, অন্যটা আইডেনটিটি। আমি চার্লি চ্যাপলিন নিয়ে ব্যস্ত, কিন্তু সে সিনেমার ডাউনলোড লিঙ্ক টিঙ্ক দিয়ে আমার ইনবক্স ভর্তি করে ফেলল। ঘ্যান ঘ্যান বন্ধ করতেই ডাউনলোড করে ফেললাম এক্সাম, অন্যটা ডাউনলোড চলছে। দুটো সিনেমা দেখলে দু’শো টাকা। একটা দেখে ফেলেছি, এখন ভালোয় ভালোয় টাকা পেলে সব চুকে বুকে যায়।

একটা রুম। তাতে মোট নয়জন প্রতিযোগী – চারজন পুরুষ, চারজন নারী। সবার টেবিলে একটা করে উত্তরপত্র। ইনভিজিলেটর মোটা কন্ঠে পরীক্ষার নিয়মাবলী জানিয়ে দিলেন – বড়ই অদ্ভুত সে নিয়ম। উত্তরপত্র ‘স্পয়েল’ করলে ডিসকোয়ালিফায়েড, ইনভিজিলেটর বা রুমে কর্তব্যরত গার্ডের দৃষ্টি আকর্ষন করলে ডিসকোয়ালিফায়েড, যে কোন কারনেই হোক না কেন রুম থেকে বের হলে ডিসকোয়ালিফায়েড। সময় আশি মিনিট। পরীক্ষার সময় শুরু হল। কিন্তু দেখা গেল প্রশ্নটাই লেখা নেই কোথাও। তার মানে, প্রশ্নটা খুজে বের করে তারপর সঠিক উত্তর দিতে হবে – তবেই যোগ্য লোকটি খুজে পাওয়া যাবে।

একটা মাত্র রুমে নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে আবদ্ধ রেখে দেড়ঘন্টা একটা সিনেমাকে টেনে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত এর স্ক্রিপ্ট। এই সিনেমার স্টোরী উদ্দীপক। দর্শক হিসেবে আপনি যদি অনেক অনেক সিনেমা না দেখে থাকেন তবে আপনার আগ্রহ থাকবে শেষ পর্যন্ত। প্রতিযোগিদের পাশাপাশি প্রশ্নটা খুজে বের করার আগ্রহে শেষ পর্যন্ত সিনেমাটা দেখতে হবে। বিখ্যাত সিনেমা ‘টুয়েলভ অ্যাঙরি ম্যান’ সিনেমার সাথে এই সিনেমার কিছু মিল পাওয়া যাবে। সেখানেও একটা মাত্র রুমে বারোজন লোক মিলে একটা প্রশ্নের উত্তর বের করার চেষ্টা করে। এটুকুই। আর কোন দিক থেকেই এই সিনেমা সেই সিনেমার নিকটবর্তী হতে পারে না। এর কারনও সিনেমার স্টোরী।

একটা চাকুরীর জন্য পরীক্ষায় বসেছেন আটজন পরীক্ষার্থী। সেই পরীক্ষাটা এমন অদ্ভুত যে বাস্তবতার সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে – টুয়েলভ অ্যাঙরি ম্যান– এর স্টোরী সেখানে অত্যন্ত সাধারণ বাস্তব জীবনের ঘটনা। টুয়েলভ অ্যাঙরি ম্যান – সিনেমায় বারোজনের কারও ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত নেই ঘটনার সাথে, কিন্তু এই সিনেমায় আটজনেরই ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত। সুতরাং যেখানে ব্যক্তিগত স্বার্থ জড়িত সেখানে ব্যক্তি চরিত্রের গোপনীয় ও নোংরা দিকগুলো একে একে বের হয়ে আসবে স্বাভাবিক। আর বের হয়ে আসলেই এই সিনেমা হয়ে যাবে টিপিক্যাল হরর সিনেমার কাহিনী। ফলে এক্সাম সিনেমা কখনোই টুয়েলভ অ্যাঙরি ম্যান হয়ে উঠবে না।

তাই বলে বোধহয় একদম ফেলে দেয়ার সিনেমা নয় এক্সাম। স্টোরী আর স্ক্রিপ্ট বোঝার জন্য এই সিনেমা অনেক ভালো একটা সিনেমা। দেড়টি ঘন্টা একটি রুমের কাহিনী নিয়ে দর্শককে চেয়ারে বসিয়ে রাখা খুব সহজ কাজটি নয়। আগ্রহ বোধ করলে দেখে ফেলুন – এবং, এ জন্য আমি কোন টাকা দিতে পারবো না  🙂

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

16 Comments on “এক্সাম: একটি রুমে একটি সিনেমা”

  1. থ্যাঙ্ক ইউ …… থ্যাঙ্ক ইউ …….।…. এখন আইডেণ্টিটি দেখেন । আরও মজা পাইবেন । 😀
    বি . দ্র :- আমার নাম না নিলেও চলত । 😉

  2. বেশ মজাদার রিভিউ 🙂
    চার্লি চ্যাপলিন নিয়া ব্যস্ত শুনে খুব ভালো লাগলো। কী কী মুভি দেখলেন?? এই অধমের খুব প্রিয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব চ্যাপলিন সাহেব। একদা চ্যাপলিনকে নিয়ে দু’খানা পোস্ট লেখার দু:সাহস করছিলাম। আপনার দৃষ্টিগোচর হয় নাই সম্ভবত

    1. @রুশো ভাই ব্যস্ত থেকে মাত্র ৪ টা দেখছে ……।
      ১।মডার্ণ টাইমস
      ২।গোল্ড রাশ
      ৩।সিটি লাইটস
      ৪।গ্রেট ডিক্টেটর
      তাই না নাজমুল ভাই !!!!!!!!!!! 🙂

    2. এই কদিনে মোট চারটা সিনেমা দেখলাম চ্যাপলিনের।
      দ্য গোল্ড রাশ
      দ্য গ্রেট ডিকটেটর
      মডার্ন টাইমস
      দ্য কিড

      আপাতত চ্যাপলিন বিরতি। দেখা উচিত এরকম কোন মুভি বাদ পড়ে গেছে নাকি?

      1. শাবাশ……………। দি কীড রক্স…………… ( আই মিন পিচ্চিটা ) ।

  3. সিটি লাইটস তো আগেই দেখছেন। দি সার্কাস টা দেইখেন

  4. লেখা নিয়া কি আর কমু। দারাশিকোর প্রতিদ্বন্ধী তো সে নিজেই।

    তয়, একশ টাকা পাইলে খবর দিয়েন। খিদা লাগছে।

    1. এইটারে বলে ইন্সট্যান্ট ব্লগিং – লেখা যে খুব জাতের হয় নাই সেইটা লেখার সময়ই বুঝছি।
      গত রাতে ঘুমানোর সময় দশ মিনিট দেরী হইছিল এই সিনেমাটার জন্য – তাই লিইখা আজকের ঘুম নিশ্চিত করলাম 🙂

  5. সাজিদ নামের এক পিচ্চি (সাইজে নয়, বয়সেও নয় – আমার সাথে বয়সের পার্থক্যে)
     
    একবার বললেন, বয়সে পিচ্চি নয়, আরেকবার বললেন বয়সেই পিচ্চি। বিষয়টা বুঝলাম না 🙂

    1. @marufallam দারাশিকো’র ব্লগে স্বাগতম মারুফ আল্লাম।
      বিষটা বোধহয় জটিল করে ফেলেছি। যদি তাকে বয়সের দিক থেকে বিবেচনা করা হয় তবে সে মোটেও পিচ্চি নয় (গ্রাজুয়েশন লেভেলের স্টুডেন্ট), কিন্তু আমার সাথে বয়সের পার্থক্যে পিচ্চিই বলা যায়। তাই পিচ্চি বলা। বোঝা গেল?ভালো থাকবেন। আবারও আসবেন 🙂

      1. @দারাশিকো ভাই, আমার ব্লগেও আপনাকে স্বাগতম। নতুন ব্লগ। সমৃদ্ধ করব ধীরে ধীরে। মুভি নিয়েও লেখার ইচ্ছে আছে। মজার ব্যাপার হলো, আমার ব্লগের থিমটা আপনারটার মতোই প্রায়।

        1. @marufallam ফিরে আসার জন্য অনেক ধন্যবাদ মারুফ আল্লাম। আপনার ওয়েবসাইটটা ঘুরে এসেছি। সুন্দর , গোছানো সাইট। তবে একই দিনে অনেকগুলো পোস্ট দেখে মনে হচ্ছে নিয়মিত আপডেট করা হয় না। নিয়মিত হোন, সাইটের জন্য শুভকামনা :)ভালো থাকবেন 🙂

Leave a Reply to দারাশিকো Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *