হলিউডের ‘বুচ ক্যাসিডি অ্যান্ড দ্য সান্ডেন্স কিড’ (১৯৬৯) এবং ঢাকাই ‘নান্টু ঘটক’ (১৯৮০)

butch-cassidy-and-the-sundance-kid-etta-bike-raindrops-keep-fallin-on-my-head-katharine-ross-paul-newman-2ওয়েস্টার্ন সিনেমার ইতিহাসে বুচ ক্যাসিডি অ্যান্ড দ্য সান্ডেন্স কিড সিনেমাটি অবিস্মরনীয় হয়ে আছে। ওয়েস্টার্ন যুগের শেষ সময়ে দুজন আউটল’র জীবন বাচানোর সংগ্রাম এই সিনেমায় বেশ দারুণ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই সিনেমার শেষ স্থির চিত্রটি সিনেমার ইতিহাসে বেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

উপভোগ্য এই সিনেমার একটি উপাদান হল এর একটি গান – রেইন ড্রপস কিপ ফলিঙ অন মাই হেড। গানের দৃশ্যায়নে বুচ ক্যাসাডি তাদের বান্ধবী এটা প্লেসকে সাইকেলের সামনে বসিয়ে ঘুরে বেড়ায়, বিভিন্ন রকম কসরত করে, সেই সাথে ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজে গান – রেইন ড্রপস কিপ ফলিঙ অন মাই হেড। গানটি না দেখে থাকলে অনিন্দ্য সুন্দর একটি দৃশ্য আপনি মিস করে গিয়েছেন।ব্লগার কবি ও কাব্য আজ সিনেমাখোরদের একটি গ্রুপে পোস্ট দিয়েছেন ১৯৮০ সালের সিনেমা নান্টু ঘটক নিয়ে। তিনি লিখেছেন :
৮০র দশকের খুব মজার ও চমৎকার একটি বাংলা ছায়াছবির নাম ছিল গাজী মাজহারুল আনোয়ার এর ‘নানটুঁ ঘটক’ । যে ছবিতে বাংলা চলচ্চিত্রের কিছু ব্যতিক্রমধর্মী ও চমৎকার কিছু জনপ্রিয় গান ছিল। আজ সেই ছবির একটি অন্যতম জনপ্রিয় গান এক সময় রেডিওতে নিয়মিত বাজতো
চলে আমার সাইকেল
কণ্ঠ- এন্দ্রু কিশোর ও শাম্মি আখতার
কথা- গাজী মাজহারুল আনোয়ার
সুর ও সঙ্গীত- আলম খান
ছায়াছবি- নানটু ঘটক (আলমগির, সুচরিতা , ওয়াসিম ও অঞ্জনা)
পরিচালক- গাজী মাজহারুল আনোয়ার (১৯৮০)

দেখে ফেলুন গানটি

খুব অবাক হতে হবে কারণ এই সিনেমার গান চলে আমার সাইকেল হাওয়ার বেগে উইড়া উইড়া-র দৃশ্যায়ন বুচ ক্যাসিডি সিনেমার রেইন ড্রপস কিপ ফলিঙ অন মাই হেড গানের সাথে মিলে যাওয়ায়। দুই সিনেমায়ই নায়ক নায়িকাকে সাইকেলের সামনে বসিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে বেড়ায় এবং এক সময় আছাড়ও খায়। অবশ্য পার্থক্যও কম নয়, নান্টু ঘটক সাদাকালোয় নির্মিত, বুচ ক্যাসিডি রঙ্গীন। বুচ ক্যাসিডির গানের দৃশ্যায়নে পুরোটায়ই নায়িকাকে নিয়ে সাইকেলে বেড়ানো নয়, রয়েছে অন্যান্যা কর্মকান্ডও।

দুইটা গানই যারা দেখে ফেলেছেন তাদের কেউ কেউ হয়তো পরিচালক গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে নকলের দায়ে অভিযুক্ত করে ফেলেছেন। কিন্তু সিনেমা নির্মানের সাথে যারা পরিচিত কিংবা যারা বেশ ভালো সিনেমা বোদ্ধা তারা জানেন, এই ধরনের কাজকে কখনোই নকল বলা হয় না, বরং একে প্রকাশ করার জন্য ইংরেজিতে একটা সুন্দর শব্দ প্রচলিত আছে। একে বলা হয় ‘হোমেজ শট (Homage Shot)। এই ধরনের একটি শট নিজের সিনেমায় ব্যবহার করে পরিচালক পূর্বে নির্মিত কোন সিনেমা কিংবা পেইন্টিং এর প্রতি এক ধরনের কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশ করেন। বক্তব্যটা যেন এরকম – অমুক সিনেমা থেকে আমি এই অংশটুকু শিখেছি। শুনেছিলাম, টারান্টিনো বলেছিলেন, তার সিনেমার সব দৃশ্যই কোন না কোন সিনেমা থেকে ‘মেরে’ দেয়া। স্টিভেন স্পিলবার্গ এই ক্ষেত্রে বেশ অভিজ্ঞ। তিনি প্রায়ই তার নির্মিত সিনেমায় পূর্বের কোন সিনেমার হোমেজ শট ব্যবহার করেন।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার যদি সত্যিই বুচ ক্যাসিডি থেকে এই দৃশ্যটা ‘মেরে’ থাকেন, তবে আমি বেশ গর্বিত বোধ করছি কারণ তিনি এই দৃশ্যের মাধ্যমে বিশ্ববিখ্যাত একটি সিনেমার নির্দিষ্ট একটি অংশের প্রতি ‘কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেছেন। একজন সিনেমা পরিচালক হিসেবে বিশ্ব সিনেমার সাথে তিনি যোগাযোগ রেখেছিলেন।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

8 Comments on “হলিউডের ‘বুচ ক্যাসিডি অ্যান্ড দ্য সান্ডেন্স কিড’ (১৯৬৯) এবং ঢাকাই ‘নান্টু ঘটক’ (১৯৮০)”

  1. ৭০ ৮০ দশকের আমাদের পরিচালকেরা আসলেই বিশ্ব সিনেমার সাথে যোগাযোগ রেখেছিলেন এতে কোন সন্দেহ নাই……কারন মেধাবী পরিচালক আমাদের তখন ছিল…

    ৯০ এর দশকে এসে আমরা কিছু কিছু হিন্দি প্রীতিতে পেয়ে বসল…গান থেকে শুরু করে বিভিন্ন দৃশ্যের ছোট খাট নকল চলতে শুরু করল…
    তারপরপুরো একটি হিন্দি সিনেমার প্লটকে একটু ভিন্নভাবে বানানো শুরু হইল…মুল থিমটা রেখে সাবজেক্ট পরিবর্তন করে দেয়া আর কি…যেমন স্বামী কেন আসামী!
    আপনি জানেন কি না জানিনা…অথবা ঐ সময় পেপার পত্রিকায় কিছু পড়ছি বইলা ও মনে পরতাছেনা…

    কিন্তু মুভিটা পুরা একটি হিন্দি মুভির সাথে মিলে যায়…যেটা আমি গত সপ্তাহে দেখেছি…খুবই ছোট দুয়েকটা পরিবর্তন ছাড়া সেই মুভিটি আমরা বানাইছি…(মুভির নামটা আপনার জন্য ধাঁধাঁ…যত জলদি উত্তর আশা করছি)

    বাংলা মুভি নিয়া খারাপ কিছু লিখতে আমার ভালো লাগেনা…খুব বেশী নকলের কারনে কলিকাতাদের মুভি ই আমি দেখিনা…প্রসেনজিতের আমলে কিছু দেখতাম এককালে…প্রবাসি হওয়ার পর আর দেখিনা…

    তেমনি ২০০০ এর দশকে এসে যেভাবে নকলের পর নকল সিনেমা আমাদের এখানে হয়েছে তাতে ধারনা করতেছি এই সময়ের পরিচালকদের মেধা সম্পর্কে! তামিল তেলুগু আর হিন্দির নকল করা ছাড়া লিগ্যালি কোন মুভি ই হয়নাই আমাদের এখানে!!!(আগে শুধু মাত্র বাংলা আর হলিউডি মুভি দেখার ফলে এই সম্পর্কে জানা ছিলনা…পত্রিকার সাংবাদিকরা যতটুকু জানাত ততটুকুই জানতে পারতাম।অন্য ভাষার মুভি পছন্দ করতামনা পাছে বাংলা মুভি খারাপ লাগতে শুরু করে!!!)
    সোহানুর রহমান সোহান ও এই তালিকা থেকে বাদ পরেনাই!

    ৭০ ৮০র দশক আর এর পরের ২দশকে আমাদের সিনেমার অবস্থান বিবেচনা করলে হায়হায় ছাড়া আর কিছু মুখে আসেনা!

    ধন্যবাদ দারাশিকো!

  2. নান্টু ঘটকের গানটা শুনেছি। তবে দেখা হয় নাই। আপনার অবজারভেশন শার্প। লেখাটা পড়ে মজা পেলাম।

  3. দু’টোর একটা সিনেমাও দেখা হয়নি তবে গান দু’টোই শোনা।
    হোমেজ শট সম্পর্কে জানা হলো, তার জন্য কৃতজ্ঞতা!
    …ক’দিন আগে দুটো পোস্টে মন্তব্য করতে গিয়ে বারবার wp error দেখাচ্ছিলো।

    1. এরায় যে মাঝে মধ্যে কত নাটক দেখায় 🙁 🙁
      স্যরি বস। আমি নিজেও সটাৎ সটাৎ এই সমস্যায় পড়ি 🙁

Leave a Reply to দারাশিকো Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *