ট্রি অব লাইফ (The Tree of Life): অনুভবের চলচ্চিত্র

ট্রি অব লাইফ সিনেমার পোস্টার

‘ট্রি অব লাইফ’ নিয়ে লিখবো বলে গত দেড় সপ্তাহ ধরে আমি কোন সিনেমা দেখিনি। কিছুক্ষন আগে উপলব্ধি করতে পারলাম, এই সিনেমা নিয়ে লেখার যোগ্যতা আমার এখনো হয়নি। গত দেড় সপ্তাহ ধরে আমি বেশ কয়েকবার লিখতে বসেছি, লিখতে পারিনি। এই সিনেমাকে ভাষায় ব্যাখ্যা করা আমার পক্ষে সম্ভব না। শেষে মরিয়া হয়ে শুরু করলাম – আমাকে কেউ দিব্যি দেয়নি যে ভালোই লিখতে হবে। যা হোক তাই লিখবো।  ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমাটির পরিচালক টেরেন্স মালিক, তার আরেকটি সিনেমা বেশ পরিচিত – থিন রেড লাইন। উনসত্তর বছর বয়সী এই ভদ্রলোক তার সাম্প্রতিক সিনেমাটি বানিয়েছেন তা সিনেমার ইতিহাসে আরেকটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।

সিনেমায় গল্পটি ন্যারেটিভ না। ১৯৫০ এর দশকে কোন এক গ্রীষ্মের সময়ে ও’ব্রেইন পরিবারের গল্প এটি। পরিবারে তিনটি ছেলে, তাদের মা এবং বাবা। বড় ছেলেটির নাম জ্যাক, মূলত মধ্যবয়সে পৌছে যাবার পরে তার সেই শৈশবমুখর দিনগুলোর স্মৃতিচারণ দেখা যায় সিনেমায়। মি: ও’ব্রেইন চরিত্রে ব্রাড পিট অভিনয় করেছেন, মিসেস ও’ব্রেইন চরিত্রে জেসিকা চেস্টেইন। যেহেতু সিনেমাটি ন্যারেটিভ না, ফলে কোন নির্দিষ্ট গল্প খুজে পাওয়া কষ্টকর। তবে তারমাঝেও একটি গল্প আছে। ও’ব্রেইন পরিবােরর এক সদস্যের অকাল মৃত্যুতে মি. এবং মিসেস ওব্রেইন এর মানসিক যাতনা একই সাথে তাদের জেষ্ঠ্য সন্তান জ্যাক যার সাথে সেই অকালপ্রয়াত ভাইটির খুব ভালো সম্পর্ক ছিল তার টুকরা চিত্র দেখা যায় এই সিনেমায়।

মি. ওব্রেইন চরিত্রটি বেশ কঠোর, কিন্তু কোথাও কোথাও সে কোমল। অন্যদিকে মিসেস ওব্রেইন চরিত্রটি ঠিক তার উল্টো। সন্তানদের বন্ধু সে। বাবা যখন বাড়ীতে উপস্থিত থাকেন না তখন মা’র সাথে কিশোর ছেলেদের খেলাধুলাসহ যাবতীয় দুষ্টামী-বন্ধুত্ব। বাবার উপস্থিতিতে পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতি। সেখানে কেউ হাসে না, প্রত্যেকটা কাজে হতে হয় নিয়মনিষ্ঠ, শৃঙ্খলাবদ্ধ। এ ধরনের একটি চরিত্র স্বাভাবিকভাবেই দর্শকদের চোখে বিরূপ গণ্য হয়। কিন্তু এই ট্রি অব লাইফে মি. ওব্রেইনের এই চরিত্রটি একটু ভিন্ন। কোন এক অজানা কারণে এই চরিত্রটির প্রতি একসময় মায়া সৃষ্টি হয়, ক্ষোভ উবে যায়।

খেয়াল করলে দেখা যাবে এই সিনেমার পরিবার নিয়ে গল্পটি চিরন্তন। এইরকমই পরিবেশে বড় হয়েছি আমি আপনি, আমাদের বাবা-দাদারা। হয়তো সামনের প্রজন্ম এই রকম পরিবেশটা পাবে না, তাদের পরিবারে সন্তান সংখ্যা একটিই, খেলাধূলার জন্য ড্রইংরুমই ভালো জায়গা। বাবারা সেখানে যতটা না শাসক তার চেয়ে বেশী বন্ধু, খেলার সাথী। কিন্তু যেহেতু আমি আপনি প্রজন্মের লোক নই, তাই সিনেমাটি আপনার ভালো লাগতে বাধ্য।

মনে করে দেখুন তো বাবাকে আপনি কতটা ভয় পেতেন, কিন্তু ভয়ের আড়ালে ভালোবাসাটুকুকেও উপেক্ষা করতে পারতেন না। মনে করে দেখুন নিজের ভাই বোনের সাথে মিলে আপনি কত অজানা জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন, আপনার প্রতিবেশীদের দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করেছেন অনায়াসেই কারণ তারা চোর বা অন্য কিছুর ভয়ে দরজা বন্ধ করে রাখতো না, মায়ের কাছে আবদারগুলোর কথাই বা ভুলে যাবেন কেন? ট্রি অব লাইফ তাই ১৯৫০ এর দশকে কোন আমেরিকান পরিবারের গল্প না, এটা চিরন্তন সার্বজনীনতার গল্প।

ট্রি অব লাইফ এখন পর্যন্ত যারা দেখেছেন তারা প্রায় সবাই বলেছেন এই সিনেমা মাথার উপর দিয়ে গেছে। সত্যিই তাই, কারণ টেরেন্স মালিক এখানে গতানুগতিক পদ্ধতিতে সিনেমা বানাননি। তিনি এর সাথে জীবনদর্শনকে, ধর্মীয়অস্তিত্ব এবং প্রভাবকে একত্র করার চেষ্টা করেছেন। এটা দেখার বিষয় নয়, উপলব্ধি করার বিষয়। ও’ব্রেইন পরিবারের গল্প থেকে বেরিয়ে গিয়ে যখন অপার্থিব দৃশ্যাবলীর শুরু হয়, তখন দেখতে ভালো লাগলেও এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন জাগে। কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে, পুরো দৃশ্যটাই যৌক্তিক।

একটি পৃথিবীর শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীকে তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমায়। ফলে মহাকাশ জগত এবং পৃথিবী সৃষ্টির পূর্ব কাহিনীর পাশাপাশি মানবপূর্ব ইতিহাসও এখানে পাওয়া যায়। আবার সিনেমার শেষে মৃত্যু পরবর্তী অবস্থার একটা চিত্রও তৈরী করেছেন টেরেন্স মালিক। আপনি ধর্মে বিশ্বাসী হন আর না হন, মৃত্যুর পরে আপনি আপনার প্রিয়জনের সাথেই থাকতে চাইবেন এটাই স্বাভাবিক। আমরাও সিনেমায় দেখতে পাই বিশাল এক সমুদ্রের পাড়ে সমবেত হয়েছে ওব্রেইন পরিবার, সেখানে আছে তাদের প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন প্রিয় মুখ।

টেরেন্স মালিকের এই সিনেমাটি বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্রকার স্ট্যানলি কুব্রিকের ‘২০০১: আ স্পেস অডিসি’-র সিগনেচার ফিল্ম। সম্ভবত কুব্রিকের সিনেমাটির পর আর কেউ এ ধরনের সিনেমা নির্মান করেননি, টেরেন্স মালিক আবারও নির্মান করলেন। আপাতদৃষ্টিতে অর্থহীন শটের সমাহার স্ট্যানলির ২০০১ সিনেমায় পাওয়া যায়। ফলে বিশ্বখ্যাত ফিল্ম ক্রিটিকরাও তাদের সমালোচনায় কুব্রিকের নাম উচ্চারণ করেছেন। যারা সিনেমা নির্মান সম্পর্কে আগ্রহী তারা এই সিনেমাটির নির্মান পদ্ধতি নিয়ে পড়াশোনা করে দেখতে পারেন।

ট্রি অব লাইফের স্পেশাল ইফেক্টের সুপারভাইজার ছিলেন ডগলাস ট্রাম্বাল, তিনি কুব্রিকের ২০০১ সিনেমাতেও একই কাজ করেছেন, মজার ব্যাপার হল এই ডিজিটাল যুগে এসে তারা দুজনে সেই কুব্রিকের সময়েই ফিরে গেছেন, সেই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে ইফেক্টগুলো তৈরী করেছেন।

যারা আইএমডিবি-র রেটিং এর উপর অনেক নির্ভর করেন তাদের জন্য ট্রি অব লাইফ সিনেমাটা হতাশাব্যাঞ্জক হবে। ওখানে রেটিঙ মাত্র ৭.১। রোটেনটম্যাটোস এ এর রেটিঙ ৮৪%, মেটাক্রিটিকে ৮৫%। পুরস্কারের ডালিতে ইতোমধ্যেই অনেকগুলো পুরস্কার বাগিয়ে নিয়েছে এই সিনেমা। অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে মনোনীত হয়েছে বেস্ট পিকচার, ডিেরক্টর এবং সিনেমাটোগ্রাফীতে

আমার বিশ্বাস দুর্দান্ত লাইটিং এবং সিনেমাটোগ্রাফীর কল্যাণে সিনেমাটোগ্রাফী বিভাগে ট্রি অব লাইফ অস্কার জয় করবে। সিনেমার প্রত্যেকটি দৃশ্য একএকটি জীবন্ত ওয়ালপেপার। প্রায় পুরো সিনেমাতেই ক্যামেরার এত সপ্রভিত আচরন এবং মুভমেন্ট দেখিনি, সম্ভবত সম্পূর্ণ চিত্রগ্রহণই স্টেডিক্যামে করা। ক্যামেরা যখন দুলে দুলে এই চরিত্র থেকে সেই চরিত্রে ঘুরে বেড়ায় তখন বাস্তবিকই মনে হবে আপনি জীবনবৃক্ষের এক ডাল থেকে অন্য ডালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সেই সাথে আছে মিউজিক। প্রতি মুহুর্তে আপনাকে গভীর থেকে গভীরে ডুবে যেতে সাহায্য করবে – ও’ব্রেইন পরিবারের চতুর্থ সন্তান হিসেবে নিজেকে একাত্ম করার সুযোগ দেবে।

ট্রি অব লাইফ সিনেমা অবশ্যই সবার জন্য না, যারা সিনেমা দেখে ভাবতে চান, সিনেমা নির্মানের পেছনে পরিচালকের ভাবনাকে বুঝতে চান এবং মনে করেন সিনেমাকে আর্ট হিসেবে একটা মূল্য দেয়া উচিত, শুধু দর্শকপ্রিয়তার উপর ভিত্তি করে নয়, তাদের জন্য ট্রি অব লাইফ। একবার দেখলে মাথার উপর দিয়েই যাবে, কিন্তু তাই বলে এর উপভোগে কোন ব্যত্যয় ঘটবে না।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

27 Comments on “ট্রি অব লাইফ (The Tree of Life): অনুভবের চলচ্চিত্র”

  1. আমিও একটা লিখছিলাম ভাই, পরে সরাইয়া দিছি যখন মনে হইছে মালিক সাহেব এই রিভিউ পড়লে হাসতে হাসতে বিষম খাইব 🙁

    1. দারাশিকো’র ব্লগে স্বাগতম নিপাট গর্দভ 🙂

      মালিক সাহেব পড়তে চাইলে আপনারে দিয়াই পড়াইতো, তখন আপনি উল্টাসিধা বুঝাইলেই চলতো, আমরা মিস করে ফেললাম 🙁

      আসবেন মাঝে মাঝে 🙂

  2. দেখেছি মুভিটা। অসাধারণ লেগেছে!
    তবে মূল বক্তব্য বোঝার জন্য কয়েকবার দেখতে হয়েছে।
    কিছু জায়গায় বারবার টেনে দেখেছি সীন না বোঝার কারনে…
    কারনটা হল এটা গতানুগতিক সিনেমার বাইরের গল্প নিয়ে তৈরি। মেকিং টাও একেবারেই আলাদা।
    পোস্ট পড়ে আরো কিছু বিষয় ক্লিয়ার হল!
    অনেক ধন্যবাদ এটা নিয়ে লেখার জন্য।

  3. 😀
    যাক রিভিউ পাইছি । এখন দেখুম । দেইখা আবার আসুম জানাইতে যে ক্যামন লাগলো । 😀

  4. ‘অনুভবের চলচ্চিত্র’ নামটা যথার্থই দিয়েছ! খুব স্থূলভাবে বিচার করলে কিছুটা আধ্যাত্মিক, কিছুটা স্মৃতিচারণমূলক সিনেমা এটা! সূক্ষ্ম বিচারে কি ক্যাটাগরিতে পড়বে সিনেমাটা আমি জানি না। ফোকাস এক এক সময় এক এক দিকে চলে গেছে। তুমি যা যা লিখেছ এর বাইরে নতুন কিছু বলার নেই। তবে প্রথম ৩০ মিনিট একটু বেশিই একঘেয়ে, ফেসবুকে বলেছি! এছাড়া আমার কাছে সবই ঠিক আছে।

    সিনেমাটা মনোযোগ দিয়ে একনাগাড়ে বসে দেখলে ভালো হয়। কেটে কেটে দেখলে তাল হারিয়ে যায়। আপাতত আর কিছু লেখার পাচ্ছি না 🙁 পেলে আবার আসবো…

    1. ধন্যবাদ আপু 🙂
      পশ্চিমাদের আধ্যাত্মিকতাবোধটা আমি খুব ভালো বুঝি না। ধর্মকে নিয়ে যখন তারা কিছু বলে তখনই আমার সন্দেহ হয় – সত্যিই কি পজেটিভ বলতেসে না বাশ দেয়ার চেষ্টা করতেসে 🙁
      এইটা আমারই দোষ, পশ্চিমারা ভালু 🙂

  5. ভালো লিখেছেন।
    আমি এখনও দেখতে পারলাম না। ডাউনলোড করে রেখেছি সেই কবে!!!

    1. বস, আপনার জন্য পরামর্শ হল ২০০১: আ স্পেস অডিসি দেখে তারপর সিনেমাটা দেখবেন, তাহলে রিলেট করাটা সহজ হবে।
      দেখা শেষ করে কিন্তু মনে করে জানিয়ে যাবেন 🙂
      ভালো থাকুন সবসময় …

  6. লেখাটা দিয়া আমার আফসোস বাড়াইয়া দিলেন মিয়া। পরীক্ষার কারণে মুভি দেখতে পারতেছিনা… অনেক মুভি জমে আছে দেখবো বলে… জীবন বড় নিষ্ঠুর ভাই।

    দারাশিকো ব্লগে গুরু নিকলসনের ছবি দেখে আবার ঐ মুভিটা দেখতে মনে চায়…
    ভাই “দা ওমেন ইন ব্ল্যাক” দেখছেন নাকি? কেমন? হরর না থ্রিলার টাইপ? ট্রেইলার দেইখে দেখতে ইচ্ছা হইলো কিন্তু হররে এলার্জি বলে ভবিষ্যতে দেখবো লিস্তে রাখিনাই… হেল্পান।

    1. আফসোস বাড়ানোর জন্য বস দু:খিত। কিন্তু আমি এই সিনেমাটা নিয়া ব্যাপক আলোচনার দাবী করতেসি আপনার কাছ থেকে। সময় করে দেখেন তারপর আবার মন্তব্য করবেন, দরকার হলে আমি আবার সবাইরে ডেকে আনবো আলোচনার জন্য 🙂

      দ্য ওমেন ইন ব্ল্যাক দেখি নাই – ওইটাইপ মুভিতে খুব একটা আগ্রহ পাচ্ছি না এখন। নিরেট বিনোদনের জন্য ওই টাইপ সিনেমাগুলো রাখা আছে, যখন দরকার খুজে নেয়া যাবে 🙂

      গার্মান দেশে বাংলা সিনেমা কেমন চলতেসে? 🙂

  7. দেখলাম. জ্ঞান অথবা অন্যকিছু দিতে পারবো না বস, আমি তিন ভাবে এটার মূল্যায়ন করতে পারি.

    ১. এটা পুরাই বোগাস একটা ফিল্ম, পুরা ছবি টা রে ন্যাশনাল জিওগ্রাফির একটা শো বানানোর চেষ্টা এবং কয়েকটা খটনা ঢুকিয়ে এটা কে প্রতিপাদ্য করার চেষ্টা. সাধারন একটা ব্যঅপার কে প্রচন্ড দূর্বোধ্য বানানো.

    ২. এই ব্যাখ্যা টা পেতে হলে আপনাকে দৃশ্য গুলো এবং ডায়লগ গুলো দেখতে হবে.

    একটি মেয়ে, যে কিনা প্রকৃতির কাছ থেকে শিখতে অভ্যস্ত, যে স্বপ্ন দেখে… শুরু হয় তাকে দিয়ে.

    প্রথমে ছেলের মৃত্যু সংবাদ. তারপর শোকে মূহ্যমান বাবা মা এবং প্রতিবেশীর স্বান্তনা. এখানে স্বান্তনা দিতে তারা কি বলিছিলে তা উল্লেখ যোগ্য. ” সৃষ্টিকর্তা দেন, সৃষ্টি কর্তাই নিয়ে যান. সৃষ্টিকর্তা একটি ক্ষত তে মাছি পাঠান আবার তিনিই সেটি কে সুস্থ করে তোলেন.” তারপর আছে আত্মগ্লানি… যে আমি ছেলের ওপর বেশী কঠোর ছিলাম.

    এবং সেই চিরচারিত প্রশ্ন. ” প্রভু, কেন ?”

    উল্ল্যেখ্য, ছবিটির শুরু হয়েছিল জোব এর একটি ভার্স দেখিয়ে, যার মোটামুটি অর্থ ছিল, ” যখন আমি পৃথিবীর ভিত গড়েছিলাম, কোথায় ছিলে তোমরা……”

    তবে আপাতত আমরা একটা ধারনা পেয়ে যাই, এটা সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস এবং হটাৎ শোকে/কিংবা কোন দূর্ঘটনায় তার প্রতি বিভিন্ন প্রশ্ন এবং তারপরেও তার ওপর বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে.

    একটি জোত্যি দেখানে হয় মুভি টির শুরু তে, এটা দেখার বিভিন্ন প্রক্ষাপট আছে বা ভিন্ন দৃষ্টিভঙি. আপনি এটা কে রহস্যময় আলো ভাবতে পারেন, কিন্তু আমি ভাববো এটা সৃষ্টির সাতে সম্পৃক্ত কোন আলোর ছটা. কিংবা সৃষ্টিকর্তার নূর ও বলতে পারেন.

    দেখানো হয়েছে জ্যাক, মানে বড় ভাইয়ের নিজের ভেতরে ছোটার ঘটনা টা, এটা প্রচন্ড নিখুত হয়েছে সাউন্ড এফেক্ট এর কারনে আমি বলবো. তার ভেতরে তার ভাইয়ের সৃতি এবং অস্তিত্ব তাকে তাড়া করে বেড়ায়. সে কাজে যায়, তাকিয়ে থাকে বিশাল জানালার দিকে, কিংবা সিংকের পানির ছোয়া, কিংবা ক্যাপস্যুল লিফটের ভেতরের একাকিত্ব সাথে ওটার বিপের শব্দ…. মানে জীবন ও চলছে, কিন্ত বয়ে নিয়ে যাচ্ছে তার তাড়িয়ে বেড়ানো অতীত.

    পরের মুহূর্ত ভলক্যানে, বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রানীর শট দেখানো হয়েছে. একটু লিংক আপ হয়তো করা যায়. বিশ্বব্রঙ্মান্ডের সৃষ্টি বিস্ফোরনের মাধম্যে হয়েছিল, তারপর বিভিন্ন পরিবর্তন দেখানো হয়েছে, যতদূর জানি শৈবাল জাতীয় প্রানী গুলো পৃথিবীর প্রথম প্রান আনে…. অনে শৈবাল, সামুদ্রিক লতাপাতা দেখানো হয়. এরপর যদি খেয়াল করে, আপনি রক্তকনিতার ছবিও দেখতে পাবেন, পাবে, রক্তনালীল ছবি , আরেক টা শটে আপনি দেখবেন স্পার্ম এর ছোটা ইউটেরাসের দিকে অর্থ্যাৎ জন্মের শুরু. খুব খেয়াল করে, এর আগে বা পরে আরেকটা শট নেয়া হয় সামুদ্রিক একটি প্রানী, যার গতি এবং চলনকার্য ও স্পার্মের মতই…. ব্যাপারর মিল বুঝতে হবে কিন্তু.
    পরের একটা শটে দেয়া হয়েছে হৃৎপিন্তের একেকটা বিট এর শব্দ. লিংক আপ করা খুব একটা কঠিন না.
    এরপর সৃষ্টি আদি প্রানী ডায়নোসোর এবং তাদরে ভেতর অনুভূতির স্পন্দন অনেক চরম ভাবে স্থাপন করা হল. বলা হয়, হ্যঅ, আদিম তম প্রানী তেও ছিলা সেই অনুভূতি, যা এখন তোমার ভেতর আছে.

    পৃথিবী সৃষ্টির পর এবার ভালবাসা, বিয়ে, গর্ভধারন এবং মানব জন্ম এবং তাদের লালন পালনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়. একটা শিশুর বেড়ে ওঠা, তার পাশের পরিবেশ. দেখানো হয়. দেখানো হয় একটি ছেলের মেনর অবস্থা, তার মানসিক পরিবর্তন, তার পিতার আচরন. তার মায়ের ভালবাসা, সহপাঠীর প্রতি আকর্ষন., সুইমিং পুলে মৃত্যুর সাথে প্রথম সাক্ষ্যৎ এবং মাকে বলা, তুমিও কি মারা যাবে ?

    ব্যাপার গুলো যদি আগের ব্যাপার গুলোর সাথে লিংক আপ না করি, তবে খুব সাধারন হয়ে যাবে. যে একটি পরিবারের কাহিনী.

    কিন্তু সৃষ্টি তার অনুভূতি এবং তার চাওয়া , তার নতুন কে জানা, নিষিদ্ধ কাজে হাতে দেয়া, তার রাগ, তার ভালবাসা, ভাইয়ের প্রতি মমত্ববোধ, মায়ে প্রতি মমত্ব বোধ, পুরোনো কে ভুলে নতুন কে আকড়ানো এগুলো কে দৃশ্য থেকে উঠিয়ে আনতে হবে.

    পরিবর্তনশীল জীবনের একটা ব্যাপার আছে এখানে.

    এরপর সমুদ্রসৈকতে সবার সাথে দেখা হওয়া, এটা কে আমি বলবো হয় স্বপ্ন অথবা মৃত্যু পরবর্তী জীবন অথবা এমন একটা সিচুয়েশন ডিরেক্টর তৈরী করতে চেয়েছেন যাতে বোঝানো হচ্ছে, সব সেই শূন্যতেই শেষ. সেই আলোর ছটকা দেখানো হয় আবার. শেই রহস্যময় আলো তেই শেষ

    এখন, হতে পারে ডায়লগ গুলো কি নিতান্তই অর্থহীন ? না, এগুলো আমাদের মনের ভেতর বিভিন্ন প্রশ্ন. কেন, কেন, বিভিন্ন ইচ্ছা, তার প্রতিফলন…..

    আমার মতামত কে খুব গুরূত্বপূর্ন ভাবে নেয়ার কারন নেই, আমি খুব সাধারন দর্শক. ছবি নিয়ে তেমন কিছুই বুঝি না…..

  8. টেরেন্স মালিকের আগের যে তিনটা সিনেমা দেখেছি তার তুলনায় এ’সিনেমাটা অনেক বেশি অগতানুগতিক। ক্যামেরার কাজ যথারীতি দুর্দান্ত; A master’s work indeed. তবে কিছু ব্যাপার লক্ষ্য করার মতো। বহুলাংশে সিনেমায় ক্লিসে আর সাররিয়েলিজমের সহায়তা নেয়া হয়েছে; স্বাভাবিক দৃষ্টিকোন থেকে অনেক সময়ই দর্শক পুরোপুরি নিতে পারে না; যেমন আমি নিজেই সাধারণ দর্শকদের কাতারে দাঁড়িয়ে পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারি নি; ব্যর্থতা অবশ্যই আমার; মালিকের না। সিনেমার বিশ্লেষণে যাবো না; উপরে বর্ণিত বৃত্তের বিশ্লেষণ সবিশেষ পছন্দ হয়েছে; এর চেয়ে ভাল বলা আমার পক্ষে আসলেই সম্ভবপর নয়।

    উপরের কিছু মন্তব্যের সাথে সহমত, এটা আর্ট ফিল্ম; পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক সিনেমা বললে ভুল বলা হবে। আমি বরং বলবো সময়ের চেয়ে একটু এগিয়ে থাকা কাজ এটা; যেমনটা ছিল কুবরিকের 2001: A Space Odyssey; ১৯৬৮ তে করা সিনেমা-জগতের জন্য যথেষ্ট আধুনিক।

    নিউইয়র্ক টাইমসের স্কট সাহেবের কথাগুলো বেশ মনঃপুত হয়েছেঃ

    To watch “The Tree of Life” is, in analogous fashion, to participate in its making. And any criticism will therefore have to be provisional. Mr. Malick might have been well advised to leave out the dinosaurs and the trip to the afterlife and given us a delicate chronicle of a young man’s struggle with his father and himself, set against a backdrop of rapid social change. And perhaps Melville should have suppressed his philosophizing impulses and written a lively tale of a whaling voyage.

    But the imagination lives by risk, including the risk of incomprehension. Do all the parts of “The Tree of Life” cohere? Does it all make sense? I can’t say that it does. I suspect, though, that sometime between now and Judgment Day it will.

    1. স্বাগতম স্যার। আপনার প্রো পিকটা আমাকে কাইয়ূম ভাইয়ের কথা মনে করিয়ে দিল। তিনি ইদানিং অনুপস্থিত 🙁

      এইযে আসা শুরু করলেন, তারপর কিন্তু বারে বারে আসবেন 🙂 🙂

  9. ভাই-বেরাদার জাতীয় বাংলা নিয়ে আমার মতো অভাগার কেন জানি এখনো কিছু গুছিয়ে লিখা সাহসে কুলোয়না 🙁 তাই ফেসবুকের কমেন্টখানি পুরোটাই কপি-পেস্ট মারলুম 🙂

    At first the 18 minutes of that documentary part made me think why the hell they put it in the movie___But after watching the whole movie I heartily admire Malick for keeping such resemblance of that documentary to the main motive of the story how angelicness of life transforms into the world without any innocence___The documentary starts with the heavenly posture of the primitive universe which indicates how life stands immaculate in the beginning___Soon the volcanic eruption, solar eclipse, dinosaur’s brutality, blood after sharks’ feast, ice covering the world, collision, apocalyptic stuffz–all depict the loss of innocence from the virginal planet-life___Terrence transcends time, space, life, place–everything in his string of celluloid___He is too good in making his abstract naivity abstruse for us_____

    However, the movie ends ambiguously___The ending remains open-ended___Maybe the Philosophy student of Harvard, Malick desires to experiment with our philosophy about the conclusion___Maybe he desires to make us think of options___In my notion, Penn is on a spiritual journey with others to seek the lost innocence and the closing shot of celestial light delineates the redemption of that lost purity_____:)

  10. সিনেমাটা হাতের কাছে পেয়েও নিলাম না। আবার খুজতে হবে। যাই হোক লেখা পড়ে ভাল লাগল। আপনার লেখা বরাবরই অসাধারণ। ধন্যবাদ।

    1. আমার কাছে আছে, নিয়ে যাবেন। ধন্যবাদ শোয়াইব সৈনিক। আপনার লেখালিখির কি খবর? নতুন কিছু পাচ্ছি না কেন?

  11. হুঁ, ভালোই মনে হলো, তাই ডাউনলোড দিয়ে দিলাম। দেখে নেব একবার সময় হলে। আমার মনে হয়, সিনেমাটা আপনার মধ্যে ভালোই আছে, অনেকটা আপনার ভাইয়ের মতো। যদিও আমি মনে করি না, এতগুলো আগ্রহের বিষয় নিয়ে কারো মাথা ভালো থাকতে পারে:)))

    1. দারাশিকো’র ব্লগে স্বাগতম সঞ্চয়ন চাকমা 🙂 (বানান ঠিক আছে তো?)
      খোজ নিয়ে জানা গেল আপনি মেজ ভাইয়ের বন্ধু। আমার জীবনে সব বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেয়ার পেছনে এই ভাই। বই পড়া, সিনেমা দেখা, গান শোনা, ঘোরাফেরা, লিখালিখি – আরও কতকি…

      কারও না কারও মাথা বোধহয় সত্যিই খারাপ 🙂
      ভালো থাকুন ভাইয়া, আসবেন আবারও 🙂

  12. সবার মন্তব্য আর রেটিং এর চিপায় পড়ে দোদুল্যমান (বানান ঠিক আছে কী না বুঝতাছি না) ছিলাম। রিভিউটা ভালো লাগল, ডাউনলোড করা যায় মুভিটা। একটা প্রশ্ন, ২০০১: এ স্পেস ওডিসি তে কী আর্থার সি ক্লার্কের কাহিনীর সাথে মিল রাখা হয়েছে পুরোপুরি?

    1. দারাশিকো’র ব্লগে স্বাগতম অমর আসাদ 🙂
      আর্থার সি ক্লার্কের বইটা আমার পড়া নেই, তাই সঠিক বলতে পারছি না। তবে যতটুকু বুঝি তাতে এই সিনেমাগুলেো বইকে পুরোটা অনুসরণ করে না, অনেক ক্ষেত্রে শুধু চরিত্র এবং মূল ঘটনা নেয়া হয়, কিন্তু নতুন করে লেখা হয় গল্পটা। আপনি কি কষ্ট করে উইকিপিডিয়াতে একবার চোখ বুলিয়ে নিবেন?
      ধন্যবাদ অমর আসাদ

  13. এই মুভিটার বিভিন্ন রিভিউ পড়ে দুই ধরনের দর্শক পাওয়া যায়। কেউ কেউ প্রচন্ড হতাশ কিংবা বিরক্ত, শেষ পর্‍্যন্ত দেখতে পারেননি অনেকেই। আরেকদলের কাছে এটা মাস্টারপীস, চমৎকার এক আবেশ , কিছুটা আধ্যাত্নিক কিছুটা চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় তারা শেষ করেছেন সিনেমাটা। পার্থক্যটা কেবলি অনুভবে। তাড়াহুড়ো করে অল্প সময় হাতে নিয়ে আর অন্য কোনো টেনশন মাথায় নিয়ে দেখতে বসলে মুভিটা ভালো লাগার সম্ভাবনা কম। যারা দেখেননি তাদের জন্যে বলছি, উপযুক্ত মুড ছাড়া এটা দেখা শুরু না করাই ভালো।
    যারা মুভি দেখতে ভালোবাসেন, ভালোবাসেন একটু চিন্তা করতেও তারা কোনোভাবেই মিস করবেন না। যতক্ষন না দেখবেন, অনুভব করবেন কোনোভাবেই আপনি এ অভিজ্ঞতা পাবেন না।
    দেখার পরপরই লেখার একটা ইচ্ছে হয়েছিল, কেন যেন আর হয়ে ওঠেনি। মুভিটা নিয়ে লেখার জন্যে দারাশিকো ব্লগকে ধন্যবাদ।

Leave a Reply to দারাশিকো Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *