মহামন্দায় সিনেমা, মহামন্দার সিনেমা

মহামন্দার সিনেমাঅর্থনৈতিক মহামন্দা – বিষয়টার সাথে পরিচয় হতে বেশী সময় লাগে না। বিশেষ করে গত একদশকে অন্তত: দুবার এই কথাটা শুনতে হয়েছে সবাইকে, দেশ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।  গত শতাব্দীর অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো এই অর্থনৈতিক মহামন্দা। প্রধাণত আমেরিকায় শুরু হয়ে সারা বিশ্বের প্রায় সব দেশকেই কম বেশী প্রভাবিত করেছিল। মূলত মহামন্দাই বিশ্ব অর্থনীতির দিক পরিবর্তন করে দেয়।

মহামন্দার কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, দেশ ভেদে একেক সময় প্রভাব বিস্তার করেছে। অবশ্য বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ১৯২৯ এ শুরু হয়ে ৩০ দশকের শেষ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। স্টকের মূল্য হঠাৎই পড়ে যায় এবং সারা বিশ্বে কি ধনী কি গরীব সব দেশেই প্রভাব ফেলে। মানুষের আয়, মুনাফা কমে যায়, প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাটাই চলে বেপরোয়া গতিতে। খাদ্য সংকটা এড়াতে মানুষ তার সম্পদ বিক্রি করতে শুরু করে, দিনমজুরের সংখ্যা বেড়ে যায় – কিন্তু কাজের প্রচন্ড অভাব দারিদ্রকে আরো বিপর্যস্ত করে।

মহামন্দার এই প্রভাব থেকে বাদ পড়েনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিও। দর্শকের সংখ্যা কমে গিয়েছিল, বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অনেক সিনেমা হল। দর্শক সংখ্যা প্রায় এক  তৃতীয়াংশ কমে গিয়েছিল যদিও এমন সময়্ও প্রতি হপ্তায় সিনেমাদর্শকের সংখ্যা গোটা আমেরিকা জুড়ে মোট ৬০ মিলিয়নের কম ছিল না। কিন্তু সিনেমাহলের সংখ্যা দ্বারা মহামন্দার প্রভাবটা বেশ বোঝা যায়। ১৯৩০ এ যেখানে মোট সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ২২০০০, ১৯৩৪ এ এসে তার সংখ্যা দাড়ায় ১৪০০০ এ। [সূত্র]

আশার কথা হলো, যে কটা ইন্ডাস্ট্রি দ্রুতই মহামন্দার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তাদের অন্যতম। ১৯৩৫ সাল নাগাদ এর প্রতিহপ্তায় দর্শকসংখ্যা উন্নীত হয় ৮০ মিলিয়নে, অর্থ্যাৎ মাত্র ১০ মিলিয়ন কম। এমন একটা সময় যখন দিনের উপার্জন দিয়ে দি্ন চলতে হয় এবং সিনেমার একটি টিকিটের দাম প্রায় ২৭ সেন্ট, তখন কেন মানুষ সিনেমা দেখতো তা গবেষনার বিষয়। তবে এর পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় সস্তায় দুর্বিষহ জীবনের ঘন্টা দুয়েকের বিনোদনকে। মানুষ নিষ্ঠুর বাস্তব থেকে পালাতে চাইতো, কিছুক্ষনের জন্য হলেও। (সূত্র)]

অর্থনৈতিক মহামন্দা এবং মানবিক মহাদুর্যোগের এই সময়েও অসাধারণ এবং ইতিহাস সৃষ্টিকারী সিনেমা নির্মান বন্ধ হয় নি। চার্লি চ্যাপলিনের বিখ্যাত ‘সিটি লাইটস‘ এই সময়ে (১৯৩১) নির্মিত। এছাড়া্ও আছে ফ্রিৎজ ল্যাঙ এর ‘এম‘, চ্যাপলিনের ‘মডার্ন টাইমস‘, মেরিয়ান কুপারের ‘কিংকং‘, লুইস মাইলস্টোনের ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট‘, ফ্র্যাঙ্ক কাপরার ‘ইট হ্যাপেন্ড ওয়ান নাইট‘, জ্য ভিগোর ‘লা আটলান্তা‘, হাওয়ার্ড হকস এর ‘স্কারফেস‘, জেমস হোয়েল এর ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন‘, ফ্র্যাঙ্ক কাপরার ‘মি ডিডস গোস টু দ্য টাউন‘ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।

এই সময়ে নির্মিত এবং মহামন্দাকে তুলে ধরে এমন সিনেমার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো: Our Daily Bread (1934) , Hallelujah I’m a Bum (১৯৩৩) ইত্যাদি। তবে সমসাময়িক সিনেমাগুলোতে এই অবস্থা কম বেশী উঠে এসেছে। মহামন্দার সিনেমা নির্মিত হয়েছে পরবর্তী সময়গুলোতে। এবং এদের সংখ্যা নেহায়েতই কম নয়।

It’s a Wonderful Life (1946)
বিখ্যাত পরিচালক ফ্রাঙ্ক কাপরার আপাত ‘ফ্লপ’ সিনেমা। সিনেমাটির কাহিনী শুরু মহামন্দার গোড়ায়, কিভাবে সেই সময়ে ভালো ও মন্দ মানুষেরা টিকে গিয়েছিল, তার একটা ধারনা পা্ওয়া যায় এখানে। বিস্তারিত দেখুন।

The Grapes of Wrath (1940)

Bonnie and Clyde (1967)

Annie

Paper Moon (1973)

Road to Perdition (2002)

স্যাম মেন্ডেস এর পরিচালনায় টম হ্যাঙ্কস। মাফিয়া ওয়ার্ল্ডের ক্রাইম নিয়ে থ্রিলার সিনেমা।

O Brother, Where Art Thou? (2000)

Hard Times
(1975)

Cinderella Man (2005)
মহামন্দার সময়টি বেশ ভালোভাবে ফুটে উঠেছে এই সিনেমায়। জেমস জে ব্র্যাডক নামে এক মুষ্টিযোদ্ধা অসম মুষ্টিযুদ্ধ মহামন্দার বিরুদ্ধে। রাসেল ক্রো অভিনয় করেছিল, রন হাওয়ার্ডের পরিচালনা। বিস্তারিত এখানে।

Ironweed (1987)

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

6 Comments on “মহামন্দায় সিনেমা, মহামন্দার সিনেমা”

  1. সুন্দর আলোচনা করছেন। কিন্তু মনে একটা খুঁত ছিলো, তা আবার নতুন করে জাগিয়ে দিলেন। আমাদের দেশের মহামহামন্দা কাটবে আর কোনদিন??!!

    1. বস, এত হতাশ ক্যান?
      আমি তো মোটেও হতাশ হই নাই, যদিও নিজে কোনদিন এই কাজে জড়াতে পারবো কিনা জানি না – কিন্তু মনে হচ্ছে, আর ৫টা বছর ধৈর্য্য ধরেন, গত পাচ বছরে ভালো সিনেমার একটা নতুন ধারা শুরু হচ্ছে, এইটা মাল্টিপ্লাইড হবে এখন। আমি অপেক্ষা করতেসি – সামাজিক অ্যাকশন আর জীবনমুখী আর্ট ফিল্ম ছাড়া থ্রিলার, হরর, আর এপিক সিনেমার জন্য। এইটা হবেই – যদিও ইন্ডিয়ান সিনেমা আমাদেরকে সেই সুযোগটা দেবে না, সরকার তো নয়ই, তারপরও, “বিনা যুদ্ধে নাহি দেবো সুচাগ্র মেদেনি”

  2. ভালো টপিক। কবে সিনেমাগুলো নিয়ে আরেকটু আলোচনা করলে ভালো হত। মনে হলো পোস্টটা হঠাত এসে শেষ হয়ে গেলো।
    আরেকটা মুভি আছে George Cloonডy অভিনীত Up in the air। ওইটাও অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে। মন্দার কারনে মানুষ চাকরি হারাচ্ছে এই থিমে। তবে যে সময়টার কথা বলছেন ওই সময়টা নয়। আরো পরের ঘটনা।

    1. একদমই অস্বীকার করছি না রুশো ভাই।
      পোস্টটা লেখা শুরু করেছিলাম গত এপ্রিলে, সিনড্রেলা ম্যান দেখার পর পরই। কিছুদূর লেখার পর একটা বিরতি এসে সব নষ্ট করে দিল। তাছাড়া, এত এত সিনেমা না দেখার ফলে লিখতে আগ্রহ পাইনি, মনে হচ্ছিল না দেখে লেখাটা ভন্ডামি হবে … সুতরাং এই দুরাবস্থা :
(

Leave a Reply to দারাশিকো Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *