সিনডারেলা ম্যান (Cinderella Man): দারিদ্রের বিরুদ্ধে মুষ্টিযুদ্ধ

সিনডারেলা ম্যান

সিনডারেলা ম্যান সিনেমার মূল বিষয়বস্তু কি? আপনি হয়তো বলবেন, বক্সিং। কিন্তু আমি বলবো, মহামন্দার বিরুদ্ধে মুষ্টিযু্দ্ধ।

বিশ্ব অর্থনীতির ইতিহাসে গ্রেট ডিপ্রেশন বা মহামন্দা বেশ উল্লেখযোগ্য ঘটনা। মূলত মহামন্দাই বিশ্ব অর্থনীতিকে দিক পরিবর্তন করে দেয়। মহামন্দার কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, দেশ ভেদে একেক সময় প্রভাব বিস্তার করেছে। অবশ্য বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ১৯২৯ এ শুরু হয়ে ৩০ দশকের শেষ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। স্টকের মূল্য হঠাৎই পড়ে যায় এবং সারা বিশ্বে কি ধনী কি গরীব সব দেশেই প্রভাব ফেলে। মানুষের আয়, মুনাফা কমে যায়, প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাটাই চলে বেপরোয়া গতিতে। খাদ্য সংকটা এড়াতে মানুষ তার সম্পদ বিক্রি করতে শুরু করে, দিনমজুরের সংখ্যা বেড়ে যায় – কিন্তু কাজের প্রচন্ড অভাব দারিদ্রকে আরো বিপর্যস্ত করে।


কি রকম সেই দুর্দিন? সিনডারেলা ম্যান সিনেমার একটা চিত্রে ফুটে উঠেছে জেমস কে ব্র্যাডক নামক বিখ্যাত হেভীওয়েট বক্সিং চ্যাম্পিয়নের জীবনগাথাঁয়। ভালোই খেলতো সে, কিন্তু মন্দ কপাল, হাতটা ভাঙলো সেসময়। সময়টা ভালো না, এমন সময় হাত ভেঙ্গে যা্ওয়া মানে রিং থেকে ছিটকে পড়া অথ্যাৎ উপার্জনের প্রধান রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যাওয়া। কিন্তু মিসেস ব্র্যাডক খুশি হয়েছিলেন, মানুষে মানুষে এই মারামারি তো বন্ধ হবে।

কিন্তু ধারণাটা ভুল ছিল। রিং এর ভেতরে লড়াই হয় সমানে সমানে। দুটো ঘুষি খেলে একটা তো মারা যায়, লড়াইটা হয় জেতার জন্য। কিন্তু জীবনের রিং এ প্রতিপক্ষ যখন দারিদ্র, লড়াইটা তখন অসম। এখানে শুধুই মার খেতে হয়, ঘুরে দাড়ানোর সুযোগ এখানে কম, তাই লড়াইটা হয় পরাজয় ঠেকানোর জন্য, জেতার জন্য নয়। ব্র্যাডক তাই করছিল, সাথে ধৈর্য্যশীল স্ত্রী। দুধের সাথে পানির পরিমান বাড়তে থাকে দিনকে দিন, সন্তানটা অসুস্থ্য হয়ে শুয়ে থাকে, বিদ্যুতের লাইন কাটা পড়ে। ভাঙ্গা হাত নিয়ে শ্রমিকদের লাইনে দাড়ায় ব্র্যাডক- যদি একটা কাজ পেয়ে যায় তো একটি দিন তো কেটে যাবে। খরচ কমাতে মিসেস ব্র্যাডক সন্তানকে পাঠিয়ে দেন বোনের বাড়িতে, কিন্তু ব্র্যাডক যে প্রতিজ্ঞা করেছিল তার সন্তানের কাছে – যত যাই হোক তাকে কখনো দূরে সরিয়ে দেবে না!

সময় সবসময় খারাপ যায় না। হঠাৎ পা্ওয়া সুযোগে আবার রিং এ ফিরলো জেমস জে ব্র্যাডক। জিতে গেল লড়াইয়ে। বন্ধু জো’র সহযোগিতায় রিং এ নিয়মিত হলো, জিততে থাকলো একটা একটা লড়াইয়ে। প্রতিটা জয় যেন দারিদ্রের মুখে বিশাল বিশাল ঘুষি।

পরিচালক রন হা্ওয়ার্ড, আর জেমস চরিত্রে রাসেল ক্রো। দুজনের এই জুটি আরেকটি ভালো সিনেমা উপহার দিয়েছেন – আ বিউটিফুল মাইন্ড। সিনডারেলা ম্যান – ও সেরকমই । বক্সিং যুদ্ধগুলো চমৎকার। একটি একটি লড়াই একটু একটু করে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। শত দুর্যোগেও বিশ্বাস নিয়ে সততার সাথে টিকে থাকার প্র্রেরণা জাগায় এই সিনেমা। মিসেস ব্র্যাডক সম্পর্কে শুধু এটুকুই বলতে হয়: “পুরুষের সফলতার পেছনে থাকে একজন করে নারী”।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

9 Comments on “সিনডারেলা ম্যান (Cinderella Man): দারিদ্রের বিরুদ্ধে মুষ্টিযুদ্ধ”

  1. আপনি এত সুন্দর করে কাহিনী গুলো লেখেন যে, ছবি গুলো যেন চোখে ভাসে! চমত্কার লেখা! মুভিটা নামিয়ে দেখবো ভাবছি!

  2. আমিও দেখমু।।পুশট পইরা মজা পাইসি।।

  3. আমার কাছে রাসেল ক্রু এর ভিক্ষা করার দৃশ্য টা মারাত্তক লেগেছে । রাসেল ক্রু বস ।

Leave a Reply to দারাশিকো Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *