দ্য ডার্ক নাইট

বর্তমান বিশ্বে সুপারহিরো ফিল্ম দর্শকদের নিকট একটি বিশেষ আকর্ষন, সিনেমা নির্মাতা ও ব্যবসায়ীদের নিকট তো বটেই। সুপারহিরো সিনেমার মূল বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে মূল চরিত্র বা নায়ক বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন হয় এবং তার প্রধান লড়াই অধিকতর ক্ষমতাসম্পন্ন ভিলেনের বিরুদ্ধে। সাধারণত মানব সমাজের প্রতি হুমকী সৃষ্টিকারী ভিলেনকে প্রতিরোধ করার মাধ্যমে নায়ক পুরো মানবজাতিকেই রক্ষা করে। অধিকাংশ সুপারহিরো সিনেমা কমিক চরিত্রের উপর নির্ভর করে নির্মিত হলেও মৌলিক চরিত্রের দেখাও পাওয়া যায়। ‘৪০ এর দশকে টিভির জন্য সুপারহিরো সিনেমা নির্মিত হয়, তবে প্রথম পূর্নদৈর্ঘ্য সুপারহিরো ফিল্ম হলো ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রিচার্ড ডোনার পরিচালিত মুভি সুপারম্যান। প্রধানত অ্যাকশন নির্ভর চলচ্চিত্র হিসেবে সুপারহিরো সিনেমা জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও শিল্পের অন্যান্য ক্ষেত্রেও তারা অবদান রাখছে। আর এ কারনেই অস্কার সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাগুলোতে অন্যান্য সিনেমার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছে সুপার হিরো ফিল্ম।

দ্য ডার্ক নাইট মূলত ব্যাটম্যান সিরিজের দ্বিতীয় সিক্যূয়েল, প্রথম পর্বের নাম ছিল ব্যাটম্যান বিগিনস। দুটো ছবিই পরিচালনা করেছেন ক্রিস্টোফার নোলান। বর্তমান সময়ে প্রভাবশালী চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে ক্রিস্টোফার নোলান অন্যতম। নোলান প্রধানত থ্রিলারধর্মী সিনেমা নির্মান করেন। দ্য ডার্ক নাইট মুভিটির প্রধান চরিত্র ব্যাটম্যান, যার পোশাকি নাম ব্রুস ওয়েন। কিছু কলাকৌশলের মাধ্যমে তিনি বিশেষ কিছু ক্ষমতা অর্জন করেন এবং অপরাধীদের পিছু তাড়া করে রেড়ান। দ্য ডার্ক নাইট মুভিতে ভিলেন চরিত্রে আবির্ভূত হয় জোকার। অন্যান্য মানুষের মতোই একজন মানুষ জোকার কিন্তু তার প্রধান লক্ষ্য হলো ব্যাটম্যানকে হত্যা করা। অন্যদিকে ব্যাটম্যানকে সহায়তা করার জন্য রয়েছে লেফট্যানেন্ট জেমস গর্ডন, ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হারভে ডেন্ট।

দ্য ডার্ক  নাইট মুভির পরিচালনায় ক্রিস্টোফার নোলান থাকলেও এর চিত্রনাট্য রচনায় তার ভাই জোনাথন নোলানও সহায়তা করেছে। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে দশটি সিনেমা পরিচালনা করেছেন নোলান, প্রায় সব কটিতেই তার ভাই সহযোগিতায় আছেন। এর আগে নোলান মেমেন্টো এবং প্রেস্টিজ নামের দুটি মুভি পরিচালনা করে দর্শকদের মনযোগ কাড়তে সক্ষম হন। আমির খান অভিনিত গজিনি মুভিটির থিম এই মেমেন্টো থেকেই নেয়া। মুভিতে জোকার চরিত্রটি ১৯৪০ সালে প্রকাশিত কমিক বই থেকে ধার করা। জোকার চরিত্রে হিথ লেজার অভিনয় করেছেন যিনি সিনেমার মুক্তির আগেই মাদক সংক্রান্ত কারণে হঠাত মারা যান। ফলে সিনেমা মুক্তি পাবার আগেই দ্য ডার্ক নাইট অনেক আলোচনার জন্ম দিতে সক্ষম হয়। অবশ্য সকল আশংকার অবসান ঘটিয়ে মুভিটি ২০০৮ এর জুলাইতে মুক্তি পায় এবং ব্যাপক সফলতা অর্জন করে।

প্রায় ১৮৫ মিলিয়ন ডলারের বাজেটে নির্মিত এই মুভিটি সারা বিশ্বে এত বিপুল পরিমান অর্থ উপার্জন করে যে বর্তমানে সবচে’ উপার্জনকারী মুভির তালিকায় এর অবস্থান পঞ্চমে। সিনেমা মুক্তির আগেই টিকিট বিক্রি করে রেকর্ড গড়তে সক্ষম হয়েছিল এই মুভিটি। অবশ্য এই উপার্জনের পেছনে যথেষ্ট কারণও রযেছে। মুভিতে ব্যাটম্যানের ব্যবহৃত গাড়িটি এবং মোটরবাইক বিশেষভাবে নির্মিত। ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন রকম স্পেশাল ইফেক্ট। অবশ্য শুধু অর্থই উপার্জন করেনি এই মুভিটি, এর পাশাপাশি জিতে নিয়েছে অস্কারের মতো পুরস্কারও। সেরা শব্দ সম্পাদনা এবং সেরা সাপোর্টিঙ অভিনেতার পুরস্কার জিতে নিয়েছে জোকার চরিত্রে হিথ লেজার। মুভিটিতে জোকার চরিত্রে হিথ লেজার ছাড়াও অভিনয় করেছে ব্যাটম্যান চরিত্রে ক্রিষ্চিয়ান বেল, হার্ভে ডেন্ট চরিত্রে আরন হেকার্ট।

About দারাশিকো

আমি নাজমুল হাসান দারাশিকো। লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি। পেশাগত এবং সাংসারিক ব্যস্ততার কারণে অবশ্য এই ভালোবাসা এখন অস্তিত্বের সংকটে, তাই এই ওয়েবসাইটকে বানিয়েছি আমার সিন্দুক। যোগাযোগ - darashiko(at)gmail.com

View all posts by দারাশিকো →

One Comment on “দ্য ডার্ক নাইট”

Leave a Reply to m.d.vikral Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *